ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) মানসিক ভাসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জালাল আহমেদকে। হত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল শুক্রবার আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছয় শিক্ষার্থী। পরে রাত ৯টার দিকে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এর মধ্যে জালালকেও কারাগারে পাঠানো হয়।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী এই শিক্ষার্থীর খরচ চলেছে অন্যের সহায়তায়। গ্রামের বাড়িতে জালালের পরিবারের নেই ঘর বা জায়গা-জমিও। সে ওই গ্রামের আলতাফ হোসেন চৌধুরীর ছোট ছেলে। কিন্তু তার এমন কর্মকাণ্ডে হতবাক স্থানীয়রা। তাই তারা জালালের শাস্তি চান। তারা চান জালাল তার অপকর্মের জন্য শাস্তি পাক।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঢাবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদের টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের সাইটশৈলা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, জালালের বাবা-মা ভাইয়ের গ্রামের বাড়িতে থাকার মতো কোনো জায়গা নেই। বড় ভাই আল-আমিন তার স্ত্রী নিয়ে অন্যজনের বাড়িতে থাকেন। তার বোনের বিয়ে হয়েছে নারান্দিয়াতে। জালালের প্রতিবন্ধী বাবা জালালের মাকে নিয়ে থাকেন ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নে একটি ভাড়া ঘরে। ওই পাথাইলকান্দি বাজারেই তার বাবা-মা চটপটি বিক্রি করে ভরণপোষণ চালান।
ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার পর জালাল এলাকায় তেমন যেত না। সরকার পতনের পর জালাল গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিল। পরে আবার ঢাকায় ফিরে আসে।
স্থানীয়রা আরও জানান, এলাকার মানুষের কাছে জালাল একজন উদাহরণ দেওয়ার মতো ছাত্র ছিল। কিন্তু একটি ঘটনায় সে ও তার পরিবারের পরিণত খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ল।
সাইটশৈলা গ্রামের কায়কোবাদ হোসেন বলেন, জালাল পড়াশোনায় খুবই মেধাবী ছিল। স্থানীয়রা টাকা-পয়সা তুলে তার পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে। গ্রামে কোনো রাজনীতি করতো না। তার বাবা বিএনপি সমর্থন করতো। তবে ছেলেটা কেন বা কীভাবে রাজনীতিতে গেল, সেটা জানি না। তারপরও কাউকে এভাবে পিটিয়ে মারবে সে, এটা কল্পনা করার যায় না। ঘটনাটি দেখে হতবাক হয়েছি।
জালালের চাচা চান মিয়া বলেন, কয়েক বছর ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। গ্রামে মাঝে মাঝে আসে কিন্তু তেমন কথা হয় না। হঠাৎ গতকাল সাইটশৈলা বাজারের টিভিতে দেখলাম সে একটা ছেলেকে মারধর করছে। সে এটা ঠিক করেনি। ঘটনার শাস্তি তো সে পাবেই। আমরাও চাই এই ন্যক্কারজনক ঘটনার শাস্তি সে পাক।
এ বিষয়ে জালালের মা কহিনুর বেগম বলেন, ছেলেকে বুঝিয়েছি অনেক, সে যেন কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে, কাউকে আঘাত না করে। ঘটনাটি দেখিনি, তবে শুনেছি আমার মেয়ের কাছে। আমার ছেলেকেও যদি এভাবে মারধর করতো, তাহলে সেই কষ্ট আমারও হতো।
জালালের বাবা আলতাফ হোসেন বলেন, সবই আমার ভাগ্য। জায়গা-জমি নেই থাকার মতো। গ্রামের বাড়ির বাজারে চা বিক্রি করেছি। চা বানানোর সময় হাতের আঙুল কেটে যায়। পরে আর চা বিক্রির কাজ করতে পারিনি। অন্যের বাড়িতে থেকেছি। পরে পাথাইলকান্দিতে চাপড়া বিক্রি করি স্ত্রীর সহযোগিতায়। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। অনেক স্বপ্ন ছিল তাকে নিয়ে সে চাকরি-বাকরি করবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
সূত্র : The Daily campus
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |