প্রচ্ছদ সারাদেশ জেলে বসে খাব, না হয় মরব, মৃত্যু আমাকে ঘেরাও করেছে

জেলে বসে খাব, না হয় মরব, মৃত্যু আমাকে ঘেরাও করেছে

দেশজুড়ে : পারুল বেগম। গত ৫ বছর আগে রাজশাহীর তানোর পোস্ট অফিসে ২ লাখ টাকা জমা রাখেন। অভাবের সংসারে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান স্বামীও। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। সেই মেয়ের জামাইকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা। এজন্য তিনি নিজের অ্যাকাউন্টে রাখা টাকা তোলার চেষ্টা করেন। এরমধ্যে তিনি তানোর পোস্টে গিয়ে জানতে পারেন তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। নিজের একমাত্র সঞ্চয়ের টাকা গায়েব জেনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এরমধ্যে কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন।

পারুল বেগম রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল গ্রামের মৃত এনামুল হাসান রনির স্ত্রী। শুধু তিনিই নন তানোর পোস্ট অফিসে আরও ৩০০ গ্রাহকের জমাকৃত টাকা গায়েব হয়ে গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুর ১২টার দিকে আবারও তানোর পোস্ট অফিসে এসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পারুল বেগম। এ সময় লোকজন তাকে থামান। এর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওতে কান্না জড়িত কণ্ঠে পারুল বেগম বলেন, ‘পাঁচ বছর সাত মাস হলো আমি ২ লাখ টাকা রেখেছি। আমার স্বামী ব্লাড ক্যান্সারে মারা গেছে। আমার এতিম বাচ্চার টাকা এগুলো। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ে ৬ মাসের গর্ভবতী। আমি নভেম্বর মাসে টাকা পাব বলে ডিসেম্বর মাসে জামাই-বেটিক (মেয়ে) এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা আছে। ৬ মাস থেকে ঘুরছি। তারা আজ আসো, কাল আসো বলে ঘুরাচ্ছে। আমি কি করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন এসে গলায় ফাঁস দিয়েছি। পুলিশ এসে বুঝিয়ে ছিল। তখন তারা (পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ) বলছে ১৫ দিন পরে টাকা দিয়ে দেবে, জবান দিয়েছিল। কতক্ষণ আমাকে আটকায়ে রাখবে। হয় জেলে বসে খাব, না হয় মরব। মৃত্যু আমাকে ঘেরাও করেছে। যে কোনো সময় মরবই।’

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও পারুল বেগম তানোর পোস্ট অফিসে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। একইভাবে আজ বৃহস্পতিবারও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় লোকজন তাকে থামিয়ে রাখেন। পরে তানোর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তানোর পোস্ট অফিসের লোকজন তাকে রাজশাহী পোস্টমাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তারপরে পোস্ট অফিসের কর্মীরা পারুল বেগমসহ আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীকে রাজশাহীতে নিয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলান।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ডাক বিভাগ রাজশাহীর তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসে ৩০০ জন গ্রাহক রয়েছেন। চলতি বছরের মার্চে তানোর পোস্ট অফিস থেকে গ্রাহকরা তাদের সঞ্চয়ের টাকা তুলতে পারছেন না। এমন খবরে গত ১৭ মার্চ রাজশাহীর ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা তদন্তে এসে টাকা গায়েবের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়। পরে তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার মকছেদ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ সময় তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় রাজশাহীর ডাক বিভাগের পরিদর্শক মজিবুর রহমান বাদী হয়ে মকছেদ আলীকে অভিযুক্ত করে তানোর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

তানোর উপজেলা পোস্ট মাস্টার আবদুল মালেক বলেন, দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এই পোস্ট অফিসের গ্রাহক ৩০০ জন। তাদের মধ্যে কত জনের টাকা আত্মসাৎ হয়েছে সেটি তদন্তের বিষয়। তবে পোস্ট অফিসে পারুল নামের এক নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাকেসহ কয়েকজন ভুক্তভোগীকে রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট অফিসে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলেছেন। তারা টাকা পাবে, তবে সময় লাগে।

তিনি আরও বলেন, টাকা পাবে তবে কমপক্ষে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। ভুক্তভোগীদের টাকার বিষয়ে তারা কাজ করছেন। বিষয়টি নিয়ে তারা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছেন। দুদক তদন্তে নামলে সব বেড়িয়ে আসবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকৃত তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিস পোস্ট মাস্টার মকছেদ আলী পলাতক রয়েছেন।

তানোর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ভুক্তভোগী পারুল তানোর পোস্ট অফিসে এসে টাকা না পেয়ে আত্মহত্যার করার কথা বলেন। তখন থানায় খবর দিলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে তাকে তানোর পোস্ট অফিসের কর্মীরা রাজশাহী ডাক বিভাগ অফিসে যেতে বলেন। এই ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।

এ বিষয়ে রাজশাহী ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্টমাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, পোস্ট অফিসে এক ভুক্তভোগী নারী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এমন কথা তিনি শুনেছেন। তবে বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত হবে, মামলা হবে। তবে যে ভুক্তভোগীরা আসছেন তাদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি; যে আপনারা টাকা ফেরত পাবেন। তবে সময় লাগবে।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।