প্রচ্ছদ জাতীয় জুলাই অভ্যুত্থানে নিষ্ক্রিয় ছিলেন রিট করা সেই ফাহমিদা

জুলাই অভ্যুত্থানে নিষ্ক্রিয় ছিলেন রিট করা সেই ফাহমিদা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ঠিক এক সপ্তাহ আগে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা নিয়ে হাইকোর্টে রিট দাখিল করেছেন বামপন্থি তিন সংগঠন সমর্থিত ‘অপরাজেয় ৭১–অদম্য ২৪’ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বিএম ফাহমিদা আলম।

এই রিটকে ঘিরেই আবারও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন ফাহমিদা। তবে তার রাজনৈতিক অবস্থানের বদলে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে জুলাই অভ্যুত্থানকালে তার নীরবতা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্মকাণ্ড।

২০২৪ সালের রক্তাক্ত জুলাই অভ্যুত্থানে যখন শত শত ছাত্র-জনতা নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়েছিলেন, সরকারের ঘোষিত “রাষ্ট্রীয় শোক” দিনকে প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী ছাত্রসমাজ যখন মুখ-চোখে লাল কাপড় বেঁধে বিপ্লবী প্রতীকী কর্মসূচি পালন করছিলেন, কোটি মানুষ যখন ফেসবুক প্রোফাইল লাল রঙে সাজিয়েছিল- সেই সময় আন্দোলনের কোনো পোস্ট বা সরাসরি অবস্থান দেখা যায়নি আলোচিত ফাহমিদাকে।

শুধু ৩০ জুলাই তিনি ভাঙা কাঁচের একটি ছবি শেয়ার করেছিলেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ তোলেন, ছবিটি মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনের ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ছবি। সমালোচকদের বক্তব্য- ফাহমিদা যেন তখন রক্তাক্ত ছাত্র-জনতার পরিবর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত মেট্রোরেলকে কেন্দ্র করে ‘মায়াকান্না’ করেছিলেন।

সমালোচনার মুখে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ফাহমিদা এর ব্যাখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, তার শেয়ার করা ছবিটি মেট্রোরেলের নয়; বরং ২০২৪ সালের মে মাসে চারুকলায় তোলা একটি শিল্প-ফটোগ্রাফ। তার ভাষায়, “ভাঙা কাঁচ দিয়ে আমি হৃদয়ভাঙা ও মৃত্যুর প্রতিবাদ বুঝাতে চেয়েছি। প্রোফাইল লাল না করা মানেই বিরোধিতা করা, এটা সোশ্যাল ফ্যাসিবাদ।”

ফাহমিদার সঙ্গে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন—তিনি জুলাই আন্দোলনের সময় মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। শুধু তাই নয়, আন্দোলন নিয়ে কোনো সরাসরি বক্তব্যও দেননি। এমনকি ডাকসু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হওয়ার দিনে যখন চারুকলায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ব্যানার ভাঙচুর ও নারী প্রার্থীদের ছবি বিকৃত করা হয়, তখনও তিনি নীরব ছিলেন। বরং ফেসবুকে পোস্ট দেন—“চারুকলায় হবেনা মৌলবাদের ঠিকানা” এবং “চারুকলা সেরা।” এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তিনি বরং উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন।

এদিকে ফাহমিদার এসব অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। আহনাফ তাহমীদ নামে একজন লিখেছেন, “গতবছর জুলাইয়ে আমরা যখন রাস্তায় মরছিলাম, তখন উনি ভাঙা কাঁচের ছবি পোস্ট করেছিলেন। এখন তিনি মুক্তিযুদ্ধের নামে লড়ছেন।”

অন্যদিকে মুনতাসির তামিম নামের একজন মন্তব্য করেছেন, “এই মেয়েটাই আজকে ফরহাদের বিরুদ্ধে রিট করছে। নিজে কট্টর লীগার কিন্তু ফরহাদ ভাইকে ট্যাগ দিচ্ছে।”

অন্যদিকে ফাহমিদা তার রিটের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলেন, এস এম ফরহাদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন না, তবে তিনি ছাত্রলীগ। তিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদে ছিলেন, কিন্তু তার পদত্যাগের কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং তিনি এখনো সেই সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ফাহমিদা।

তিনি বলেন, “আমার সামনে যে তথ্য এসেছে সেটি নিয়েই আমি রিট করেছি। পুরো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রিট করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।”