প্রচ্ছদ ধর্ম ও জীবন জুমার দিনে যে কাজ বেশি বেশি করার কথা এসেছে হাদিসে

জুমার দিনে যে কাজ বেশি বেশি করার কথা এসেছে হাদিসে

ধর্ম ও জীবন: সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমাবার। পবিত্র কুরআনে জুমা নামে একটি সুরাও রয়েছে। যেখানে মহান এই দিনের তাৎপর্য বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচাকেনা বর্জন করো। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে’ (সুরা জুমা, আয়াত: ৯)।
অন্যদিকে, হাদিসে এসেছে- আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- সূর্য উদয়ের দিবসগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমাবার। সে দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়। তাকে ওইদিন জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়। তাকে তা থেকে ওইদিন বের করা হয়। আর কেয়ামতও হবে জুমার দিবসেই। (সহিহ মুসলিম, ১৮৫০)

আবার বিনা কারণে জুমার নামাজ ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারেও কঠোর নিষেধ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর ও আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে মিম্বরের সিঁড়িতে বলতে শুনেছেন, যারা জুমা পরিত্যাগ করে, তাদের এ কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। নতুবা মহান আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। অতঃপর তারা অবশ্যই গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮৭৫)। অপর বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি অবহেলা করে তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় মোহরাঙ্কিত করে দেন (তিরমিজি, হাদিস: ৫০০) এ ক্ষেত্রে জুমার দিনে উত্তমরূপে গোসল করে মিসওয়াক, সুগন্ধি ব্যবহারসহ উত্তম কাপড় পরিধান করে মসজিদে যাওয়ার কথাও অনেক হাদিসে এসেছে। সালমান ফারসী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, এরপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত (নামাজ) আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুতবার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৬৪)

অন্যদিকে, আগেভাগে জুমার নামাজে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ সওয়াব রয়েছে। আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন জুমার দিন হয় তখন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতা এসে দাঁড়িয়ে যায় এবং যে ব্যক্তি প্রথম মসজিদে এসে প্রবেশ করে, তার নাম লিখে নেয়। তারপর পরবর্তীদের পর্যায়ক্রমে নাম লেখা হয়। ইমাম যখন (মিম্বারে) বসে পড়েন তখন তারা এসব লিখিত পুস্তিকা বন্ধ করে দেন এবং তারা মসজিদে এসে জিকর (খুতবা) শুনতে থাকেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২৯৮৪) অপর হাদিসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি জুমার দিন জানাবাতের (ফরজ) গোসল করে মসজিদে রওয়ানা হয়ে যায়, তবে সে যেন একটি উট কুরবানি করলো। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় মুহূর্তে গেল, সে যেন একটি গাভী কুরবানি করলো। যে ব্যক্তি তৃতীয় মুহূর্তে গেল, সে যেন শিংওয়ালা একটি মেষ কুরবানি করলো। যে ব্যক্তি চতুর্থ মুহূর্তে গেল, সে যেন একটি মুরগি কুরবানি (সদকা) করলো। যে ব্যক্তি পঞ্চম মুহূর্তে গেল, সে যেন একটি ডিম কুরবানি (সদকা) করলো। পরে ইমাম যখন (সালাতের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে পড়েন (মিম্বাসে বসে পড়েন), তখন ফেরেশতারা সালাতে উপস্থিত হয়ে খুতবা শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। (তিরমিজি, হাদিস: ৪৯৯; ইবনু মাজাহ, হাদিস: ১০৯২)

তবে জুমার দিনের সালাতের বাইরেও নবীজির ওপর বেশি বেশি দূরুদ পড়ার কথা এসেছে হাদিসে। আওস ইবনু আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমাদের সকল দিনের মধ্যে পরমোৎকৃষ্ট দিন হলো জুমার দিন, সেদিন আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেদিনই তার ওফাত হয়, সেদিনই দ্বিতীয়বার শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে এবং সেদিনই কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। অতএব, তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কেননা, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়। সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! (সা.) কীভাবে আমাদের দরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে। যেহেতু আপনি (একসময়) ওফাত পেয়ে যাবেন অর্থাৎ সাহবীরা বললেন, আপনার দেহ মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা জমিনের জন্য নবীগণের দেহ গ্রাস করা হারাম করে দিয়েছেন। (মেশকাত, হাদিস: ১৩৬১; সুনান-আন-নাসায়ী, হাদিস: ১৩৭৭)