প্রচ্ছদ হেড লাইন জিম্মি নাবিক তারেকুলের বাড়িতে নেই ঈদের আমেজ, প্রতিক্ষায় বৃদ্ধ মা-বাবা

জিম্মি নাবিক তারেকুলের বাড়িতে নেই ঈদের আমেজ, প্রতিক্ষায় বৃদ্ধ মা-বাবা

জাতীয়: সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক ফরিদপুরের তারেকুলের বাড়িতে নেই ঈদের আমেজ। ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির সুসংবাদ আর প্রতিক্ষায় সময় পার করছেন তারেকুলের বৃদ্ধ মা-বাবা। কখনও বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে আবার কখনও জাহাজে ঈদ পালন করতেন নাবিক তারেকুল। কিন্তু এ বছর তাঁদের জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর তাঁদের ভাগ্যে কি ঘটেছে– সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই তারেকুলের স্বজনদের।

এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের ২৩ জন নাবিকসহ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। এদের মধ্যে বন্দি ফরিদপুরের রায়পুর ইউনিয়নের ছকড়িকান্দি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ছেলে তারেকুল ইসলাম। জাহাজটি অপহরণের পর থেকে বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা যেন ছেলের জন্য দরজা খুলে পথের দিকে চেয়ে আছেন। ঈদের আগেই সরকার বা জাহাজ মালিকদের পক্ষ থেকে সু-সংবাদের অপেক্ষায় বন্দী নাবিকের বাবা-মা।

প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানান, ছুটি শেষে গত ডিসেম্বরে বাড়ি থেকে চাকরিতে যান তারেকুল। গত ৪ মার্চ ডুবাই থেকে কয়লা নিয়ে বাংলাদেশে আসার পথে অপহরণের স্বীকার হন। অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী মো. দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে একমেয়ের মধ্যে সবার ছোট মো. তারেকুল ইসলাম। স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল থেকে পাস করে চলে যান ঢাকায়। সেখানে মিরপুরের ড. মো. শহীদুল্লাহ্ কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। ২০১২ সালে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। ২০১৪ সালে নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরিতে যোগ দেন। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে নতুন করে যোগ দিয়েছিলেন ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়া গোল্ডেন হক নামে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর থার্ড অফিসার হিসেবে।

তারেকুলের মা–বাবা জানান, প্রতিবছর ছেলেরাই ঈদের কেনাকাটা করলেও এবার কিছুই হয়নি তাঁদের। ছেলের সুস্থতা আর নিরাপদের ফিরে আসার অপেক্ষা করছে তারা বাবা। দস্যুরা কথায় কথায় মাথায় বন্দুক ধরে, জাহাজে খাবার সংকট, পানি সংকট এমন নানা দুশ্চিন্তায় আরও ভেঙ্গে পড়েছেন তাঁরা। প্রশাসনসহ অনেকেই তাঁদের খোঁজখবর নিতে আসে। শুধু স্বন্তনা দিয়েই যায়। সন্তানের ভালো সংবাদের অপেক্ষা আর শেষ হয় না তাদের।

তারিকুলের মা হাসিনা বেগম জানান, সাত বছর বয়স থেকে কখনও নামাজ-রোজা কামাই করেননি তারেক। গতবার ঈদের নামাজ জাহাজে পড়ে ছবি তুলে পাঠিয়েছেন। ঈদের দিন ফোনে সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। বাড়িতে ঈদ করতে না পারলে ভিডিও কলের মাধ্যমে জাহাজে ঈদের নামাজের গল্প শোনাতো তাঁকে। সরকারে কাছে তাঁর (মা) আবেদন ঈদের যেন তাঁর ছেলেসহ সবাইকে ছাড়িয়ে আনে।

তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যখন তারা দস্যুদের কবলে আটক হয় তখন বলেছিল ২০-২৫ দিনের খাবার আছে, আর ২০০ মেট্রিক টন পানি আছে। এতো দিন কি খাবার আছে?’ এ সময় তিনি ছেলেকে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনার দাবি করেন।

ফরিদপুরের মধুখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, সোমালিয়া জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকেই আমিসহ জেলা প্রশাসক তাদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছি। অপহৃত নাবিকদের উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও জাহাজ মালিক পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা চলছে। একটা পরিবারে ছেলে নিখোঁজ থাকলে তাদের তো আসলে ঈদ বলতে কিছু থাকে না। তারপরও আমরা তাদের পাশে আছি, স্থানীয়ভাবে সব ধরনের সহযোগিতা জন্য আমার প্রস্তুত আছি।’

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, ‘সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মিদের মধ্যে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রাযপুর এলাকার এক যুবক আছে। বিষয়টা আমরা জানার পরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি। এছাড়া অপহৃত সকল ব্যক্তিকে মুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রানলয় তৎপর রয়েছে।