
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের (২০২৪) ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। পট পরিবর্তনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের (২০২৬) ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে দেশে এখন নির্বাচনি হাওয়া বইছে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের মাঠে লড়াইয়ে নিজেরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এই নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পিআর, বিচার, সংস্কার, ইসলামি রাজনীতি, এক বাক্সে ইসলামপন্থিদের ভোট, জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে কথা বলেছে যুগান্তর। তার সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন তোফায়েল গাজালি।
সাক্ষাতকারে নির্বাচনি জোটে জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে নয়, তাদের নিয়েই ইসলামি দলগুলোর মধ্যে একটা বৃহত্তর জোট হতে পারে- এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন চরমোনাই পীর।
চরমোনাই পীরের কাছে প্রশ্ন ছিল- ইসলামি দলগুলোর আলোচিত একটি জোট নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। তা আলোর মুখ দেখবে তো? জবাবে মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ ইসলামি দলগুলোর এক বাক্স নীতি আলোর মুখ দেখবে।’
জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের জোটে অধিকাংশ ইসলামি দলের অমত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি সত্য নয়। অধিকাংশ ইসলামি দলই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই বৃহত্তর নির্বাচনি সমঝোতায় একমত। সেভাবে বৈঠক ও আলোচনা চলছে। আর আমাদের দল ছাড়া অন্য অনেক ইসলামি দল আগে দীর্ঘদিন জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটবদ্ধ রাজনীতি করেছে।’
চরমোনাই পীরের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, জামায়াতকে বাদ দিয়ে অন্য সব ইসলামি দল মিলে আপনার নেতৃত্বে অন্য একটি জোটের আলোচনা শোনা যাচ্ছে। আপনারা বেশ কিছু বৈঠকও করেছেন। আসলে বিষয়টি কী? জবাবে তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে বাদ দিয়ে নয়। এক বাক্সে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনায় কয়েকটি ইসলামি দল মিলে একটি সমন্বয় কমিটি করা হয়েছিল। যেটি বৃহত্তর নির্বাচনি সমঝোতার একটা অংশ।’
এ পর্যায়ে চরমোনাই পীরের কাছে আরও জানতে চাওয়া হয় যে, জামায়াতের সঙ্গে জোটের আলোচনা এলেই আপনারা বিশ্বাস ও আদর্শের জায়গা সামনে নিয়ে আসেন। শোনা যাচ্ছে, এই একটি কারণেই অতীতে সম্ভাবনাময় বহু জোট অঙ্কুরে বিনাশ হয়েছে। এ কথার সত্যতা কতটুকু? জবাবে মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা আধ্যাত্মিকতা ও রাজনীতিকে একত্রে নিয়ে মুজাদ্দিদিপন্থায় সমাজ ও শাসনতন্ত্র পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করি। জামায়াতে ইসলামীর পথ চিন্তাগতভাবে ভিন্ন রকম। জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কৌশলের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। এ ভিন্নতা নিয়েও অতীতে রাজনৈতিক ইতিহাসে বহু ঐক্য ও সমঝোতা হয়েছে। জোট বিনাশ হয়েছে বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, তা ভুল।’
আপনারা তো ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির সঙ্গে ‘ইসলামী জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট’ নামের একটি জোটে ছিলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে কি আপনাদের আদর্শের মিল রয়েছে?- এমন প্রশ্নের উত্তরে চরমোনাই পীর বলেন, ‘সে জোট ছিল স্পষ্টভাবে ঘোষিত একটি নির্বাচনি জোট। এর সঙ্গে আদর্শের কোনো সম্পর্ক নেই। আদর্শিক জোট ও নির্বাচনি জোট বা সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে।’