একযোগে পদত্যাগ করেছেন জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের ৬ শতাধিক নেতাকর্মী। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগরের উত্তরের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু নেতাকর্মীদের পদত্যাগের এ ঘোষণা দেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভরাডুবি’, নেতৃত্বে অনাস্থা, দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম ও ঢাকা উত্তরের কমিটি বিলুপ্তির পর পদত্যাগের এমন হিড়িক সামনে এলো।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য, দলের নেতৃত্বে অনাস্থা জানিয়ে তারা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ করেন। যার ফলশ্রুতিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ ছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়সহ কয়েকজনকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। সেই সঙ্গে ঢাকা মহানগরের উত্তরের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। এ কারণে তারা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
যদিও পদত্যাগের এমন হিড়িক আমলে নিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের ভাষ্য, যাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তারা পদত্যাগ করছেন। তাদের স্বাধীনতা রয়েছে, চাইলে অন্য দল করতে পারেন।
এদিকে, বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সময় সংবাদ সম্মেলনে নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান নেতৃত্ব জাতীয় পার্টিকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। তারা দলটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়েছেন। একই সময় জাতীয় পার্টিতে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রওশন এরশাদের নেতৃত্বে কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এরশাদের মৃত্যুর পর জাপা চেয়ারম্যানের পদ ঘিরে প্রকাশ্যে আসে দেবর জি এম কাদের ও ভাবি রওশন এরশাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যার ফলশ্রুতিতে ’৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ২৫১টি আসন পাওয়া দলটির নেতাকর্মীরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এরপর কয়েক দফায় দেবর ভাবির মধ্যকার বিরোধ তীব্র হতে দেখা যায়। মাঝে রওশনের ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতাকে জি এম কাদের কর্তৃক দল থেকে বহিষ্কার, কাউন্সিল আহ্বান কিংবা রওশন এরশাদকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়ও প্রকাশ্যে আসে।
সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটিতে তৃতীয়বারের মতো ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি হয়। নির্বাচনে ব্যাপক ‘ভরাডুবির’ পর থেকেই দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা যায়। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৬৫ আসনে প্রার্থী দিলেও প্রায় ২৩০ জন দলীয় প্রার্থীই নির্বাচনী প্রচারণায় খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না।
এর আগে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন ধরেছে দুবার। এরমধ্যে ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জাতীয় পার্টি ভেঙে বেরিয়ে যান এরশাদের একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাজিউর রহমান মঞ্জুর। পরে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নামের দল গঠন করেন। এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদের হাতে গড়া দলটি থেকে বেরিয়ে যান কাজী জাফর।
তৃতীয় দফায় ভাঙনের মুখে থাকা দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মহানগর উত্তরের ২৫টি থানার মধ্যে আটটি থানার সাড়ে ছয়শোর বেশি নেতাকর্মী পদত্যাগ করেছে। তারা চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছে।’
বিক্ষোভের পর নেতাকর্মীদের অব্যাহতির প্রতিবাদে তারা পদত্যাগ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর পরে সারাদেশের বিভিন্ন কমিটি থেকেও পদত্যাগ করার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পার্টি থেকে পদত্যাগ নয়, বরং জিএম কাদেরের কমিটি থেকে গণ পদত্যাগের কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টি থেকে যাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তারাই পদত্যাগ করছেন জানিয়ে, জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমাদের দলের নেতাকর্মী বেশি, তাদের স্বাধীনতা আছে। তারা পদত্যাগ করছে এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নাই, কোনো পদক্ষেপ নাই। আমরা যাদেরকে অব্যাহতি দিছি, তারা পদত্যাগ করতেছে। এটা আমাদের কাছে ম্যাটার করে না, আমাদের সঙ্গে কথা বলার আর কোনো সুযোগ নাই।’
পদত্যাগ করা নেতাকর্মীরা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নতুন করে দল গোছানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যার খুশি যে পার্টি করতে পারে। একটা কেন ৪০টা করতে পারে এটা তাদের স্বাধীনতা আছে। এটা আমাদের কোনো বিষয় না।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |