প্রচ্ছদ জাতীয় আওয়ামী লীগের ভয়াবহ নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস, মারা যেতে পারে অনেক মানুষ

আওয়ামী লীগের ভয়াবহ নাশকতার পরিকল্পনা ফাঁস, মারা যেতে পারে অনেক মানুষ

বিকল্প শক্তির উত্থানের জন্য বিশৃঙ্খলার ভয়াবহ ছক কষছে আওয়ামী লীগ। জানুয়ারির শেষের দিকে প্রাথমিকভাবে স্বল্পপরিসরে দেশের অভ্যন্তরে থাকা নেতাকর্মীদের রাজপথে নামানোর চিন্তা রয়েছে দলটির।

ধাপে ধাপে গিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে চূড়ান্তভাবে সংগঠিত হয়ে রাজপথে নামার পরিকল্পনা রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের। ওই দিন রাজপথে তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের মতো এমন একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যাতে অন্য কেউ ক্ষমতা নিতে অনেকটা বাধ্য হয়।

ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বাড়ানোর জন্য এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায় এবং মধ্যম সারির একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে এ তথ্য জানা গেছে।

ঢাকার তৃণমূল পর্যায়ের এক নেতা আলাপকালে বলেন, আওয়ামী লীগ সরাসরি ক্ষমতায় আসবে এমন ভাবনা দলের শীর্ষ পর্যায়ের কারোর মধ্যে এখন আর নেই। তবে ছাত্ররাও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না সেই পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য কাজ চলছে। জানুয়ারির শেষের দিকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যাতে এরা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। তখন দেখতে পাবেন, অন্য কেউ ক্ষমতা দখল করে আছে। এরপরই যে নির্বাচন হবে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতা ফিরে পাবে- এমন আশা দৃঢ়ভাবে তৈরি করা হচ্ছে।

যুবলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত, হিন্দুদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও বাড়িঘর ভাঙচুর, আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও ভাঙচুরসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঠে নামার জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিটকে কার্যকর, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আত্মগোপনে থেকে কাজ করছেন। যুবলীগের ওই নেতা আরো বলেন, জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি টার্গেট।

এর মধ্যে আশুলিয়া ও গাজীপুরের শিল্পকারখানায় আরো ভয়াবহ অস্থিরতা তৈরি হবে। নতুন বছরে বেতনভাতা বৃদ্ধিসহ নানা ইস্যুতে শ্রমিকরা মাঠে নামবে। এ সময়ের মধ্যে অন্তত আরো দেড় শ’ থেকে দুই শ’ কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ড. ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি করার জন্য এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হবে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে যাতে রাস্তায় নেমে আসে।

নতুন নতুন ইস্যুর মাধ্যমে একপ্রকার গৃহযুদ্ধও শুরু হয়ে যেতে পারে। গত ৫ আগস্টের পর জুডিশিয়াল ক্যুর মাধ্যমে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল আওয়ামী লীগ। ব্যর্থ হওয়ার পর গ্রাম পুলিশের আন্দোলন, আনসারদের আন্দোলন, পোশাক শ্রমিকদের অসন্তোষ, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের আন্দোলনের ওপর ভর করে দলটি। দেশের পাড়া মহল্লায় অনবরত সঙ্ঘাত সংঘর্ষ সংঘটিত হওয়ার পেছনে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কলকাঠি নাড়েন বলে রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়াও ‘মব জাস্টিসের’ নামে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এর পেছনে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের নির্দেশনায় দেশের অভ্যন্তরে থাকা ছাত্রলীগের কট্টরপন্থী গ্রুপটি কাজ করে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। ওই সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে আবারো আওয়ামী লীগ ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় মনে করছে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য বিএনপির ভারতপন্থী অংশটি গোপনে কাজ করলেও বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট হওয়ায় ওই অংশ অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীও তাদের পুনর্বাসনের জন্য সঙ্গী হচ্ছে না।

এজন্য তৃণমূলের ওপর ভর করে তারা নতুন বছরে নতুন পরিকল্পনা সাজিয়েছে। দলটির মধ্যম সারি ও তৃণমূল নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে। এক সময় কূটনৈতিক বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যদি শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসেন তাহলে দলের কিছুই করার থাকবে না। শেখ হাসিনাকে গণহত্যার দায়ে সর্বোচ্চ বিচারের মুখোমুখি হতে হবে- যা দলের জন্য আরেকটি মহাবিপর্যয়।

ফলে এর আগেভাগেই ভারতের সহযোগিতায় যদি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন ঘোলাটে করা যাতে অন্তর্বর্তী সরকার বাধ্য হয় তৃতীয় শক্তির হাতে ক্ষমতা দিতে। ওই শক্তিই এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আওয়ামী লীগ এখন আহত বাঘের মতো সর্বশক্তি দিয়ে ক্ষমতা ফিরে পেতে চায়। ৫ আগস্টের আগে যে আওয়ামী লীগ ছিল এখন তার চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী তারা। আওয়ামী লীগকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারা চায়- এতদিন যে বিত্তবৈভব অর্জন করেছে তার সব ব্যয় করে হলেও রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে হবে, ক্ষমতায় যেতে হবে। এজন্য তারা অর্থও ব্যয় করছে।

কিন্তু সময় তাদের পক্ষে নেই। কারণ ৫ আগস্টের ঘটনায় যে ক্ষত তৈরি হয়েছে সেটা এখনো শুকায়নি। তিনি আরো বলেন, বিএনপি বা জামায়াত কেউ যদি তাদের শেল্টার দেয় তাহলে তারা রাজনীতিতে পুনর্বাসন হতে পারে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু এটার জন্য দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে হবে। দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে আওয়ামী লীগই সুবিধা পাবে। তবে ক্ষমতায় যেতে হলে আওয়ামী লীগকে অন্তত আরো ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এটা এখনকার বাস্তবতা। বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর তারা ক্ষমতা ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এজন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ভারতে পালিয়ে গিয়ে তাদের সহায়তায় আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র থেমে নেই।

তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যে লুটপাট, দুর্নীতি, চুরিচামারি করেছে তাদের সহযোগীরা এখনো মনে করে আওয়ামী লীগ সবকিছু পারে। আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে। ওই মানুষগুলো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার পতনের পর তাদের নেত্রী তাদের ছেড়ে যে পালিয়ে গেছে তারপরও তাদের বোধোদয় হয় না। এদেশে আওয়ামী লীগ আর কখনো ফিরে আসবে না, তাদের ফিরে আসতে দেয়া হবে না। ড. মাসুম বলেন, আওয়ামী লীগ তাদের ছলচাতুরীর মাধ্যমে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাস্তায় নামাতে পারে। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এখনই সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ছাত্র-জনতাকেও আগাম সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে হবে।

সূত্র : দৈনিক নয়া দিগন্ত

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।