
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও সংকট কাটেনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, চীন ও দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড তার চিকিৎসায় নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দলমত নির্বিশেষে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাঁর সুস্থতা কামনায় মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে দোয়া করছে। মসজিদ, মাদরাসা, ওয়াজ-মাহফিলে দেশের পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামারা সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দোয় করছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর সুস্থতা কামনায় মানুষের আন্তরিক আঁকুতির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকের একটাই দোয়া, ‘মহান আল্লাহ দেশনেত্রীকে সুস্থ্য করে দিন।’ জীবিত অবস্থায় দেশের কোনো নেতার জন্য জনগণের এমন আন্তরিক দোয়া ও ভালবাসার নজির আর কখনো দেখা যায়নি। বেগম খালেদা জিয়াই একমাত্র নেত্রী, যাঁর জীবনসংকটে সুস্থতার জন্য মানুষের মন ঢুকরে কেঁদে উঠছে। মানুষের এই মায়া-মমতা এবং দরদ শুধু ব্যক্তি খালেদা জিয়ার জন্য নয়, দেশের জন্য। দেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়াকে অভিভাবক মনে করছে। তারা অভিভাবকহারা হতে চায় না। তারা মনে করছে, দেশের ক্রান্তিকালে তাঁর বেঁচে থাকা খুবই প্রয়োজন। তিনি যত বেশি সময় বেঁচে থাকবেন, দেশ পথ হারাবে না। তিনি দেশকে সঠিক পথে তুলে দিতে পারবেন।
বেগম খালেদা জিয়া এমনই এক নেত্রী যিনি কখনোই নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবেননি। দেশের মানুষই তাঁকে নিরাপত্তা দিয়ে আগলে রেখেছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলেও তাঁর কোনো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে হাসিনার পতনের পরও তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। সরকারও তাঁর বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি। তবে তিনি সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রায় দশদিন পর সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে তাঁর নিরাপত্তায় স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। গতকাল দুপুর থেকে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে এসএসএফ ও পিজিআর। যদিও সরকারের উচিৎ ছিল, আরও আগেই দেশের অভিভাবকে পরিণত হওয়া বেগম খালেদা জিয়ার এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেয়া। বিলম্ব হলেও এই নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে আমরা বলতে চাই, দেশের জন্য এই মুহূর্তে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্যও বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে এলে তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার পতক্ষেপ নিতে হবে। এটি কোনো ব্যক্তি তারেক রহমানের নিরাপত্তার বিষয় নয়। কোনো দলের নেতা হিসেবেও নয়, জাতীর অপরিহার্য নেতা হিসেবে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। এ মুহূর্তে দেশে নেতৃত্বশূন্যতা বিরাজ করছে। নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতার অভাব রয়েছে। একমাত্র তারেক রহমানই নেতৃত্বশূন্য দেশের নেতৃত্ব দেয়ার উপযুক্ত। তার বিকল্প নেই। ফলে দেশের প্রয়োজনে এবং স্বার্থে সরকারের উচিৎ হবে, জাতীয় নেতা হিসেবে তারেক রহমানের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা। অন্যদিকে, গত শনিবার দেশে ফেরা নিয়ে তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয় বলে যে পোস্ট দিয়েছেন, তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া গেছে। ওই দিনই বিকেলে ফেসবুকের এক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধিনিষেধ অথবা কোনো ধরনের আপত্তি নেই। গত রোববার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও বলেছেন, তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে কোনো বিধিনিষেধ নেই। সরকার একদিনেই তার ট্রাভেল পাস দিয়ে দেবে। গত সোমবার আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসার ব্যাপারে কোনো ধরনের আইনগত বাধা আছে বলে আমার জানা নেই। সরকারের তরফ থেকে কোনো বিধিনিষেধ অথবা কোনো ধরনের আপত্তি নেই। যদি কোনো বাধা থেকেও থাকে, অবশ্যই সার্বোচ্চ সহযোগিতা করব। তার নিরাপত্তার ব্যাপারেও আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। তিনি উপযুক্ত সময়ে দেশে আসবেন বলেও বিশ্বাস করি। এ সময় নির্ধারণের ক্ষমতা তারেক রহমানের রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে যে, কোনো বাধা নেই, তা পরিস্কার করা হয়েছে। তবে সরকারের তরফ থেকে তারেক রহমানের দেশ ফেরার ক্ষেত্রে বাধা না থাকলেও দেশের ফেরার পর তার নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কিছু বলা হয়নি। সরকারের উচিৎ, দেশের নেতৃত্ব সংকটকালে অপরিহার্য নেতা হিসেবে তারেক রহমানের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা। তাকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তার নিরাপত্তার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া।
দেশের মানুষ এ মুহূর্তে পরিপূর্ণ সুস্থতা নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার ফেরার অপেক্ষায় যেমন রয়েছে, তেমনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের এই ফেরার উপর দেশের সংকট নিরসন ও ভবিষ্যত নির্ভর করছে। তারেক রহমানের উচিৎ, যত বাধা থাকুক দেশের স্বার্থে, জনগণের প্রয়োজনে দেশে ফেরা। নিরাপত্তা দেয়ার মালিক মহান আল্লাহ। জীবনমৃত্যুর নির্ধারক তিনি। পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরানের ২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘তিনিই জীবিতকে মৃতের ভেতর থেকে বের করে আনেন, মৃতকে জীবিতের ভেতর থেকে বের করে আনেন।’ সূরা জুমা’র ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘যে মৃত্যু থেকে তোমরা পলায়ন করছ, সে অবশ্যই তোমাদের সাথে নির্ধারিত সময়ে সাক্ষাৎ করবে।’ অর্থাৎ জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। জীবনের গ্যারান্টি নেই, মৃত্যুর গ্যারান্টি রয়েছে। কাজেই, দেশ ও জাতির প্রয়োজনে দেশনেতাকে সকল বাধাবিপত্তি এমনকি মৃত্যুকে তুচ্ছ করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হয়। তারেক রহমানের উচিৎ, দেশ ও জনগণের ক্রান্তিকালে দ্রুত দেশে আসা। তার মা বেগম খালেদা জিয়া দেশের চরম দুঃসময়ে তাঁর রাজনীতির সূচনালগ্ন থেকেই মৃত্যুকে উপেক্ষা করে দেশ ও জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশ ও জনগণের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেও আপোস করেননি। দেশ ও জনগণের কথা ভেবে জীবনের মায়া করেননি। এখন তিনি জীবন-মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে। দেশের মানুষ তাঁর জন্য কাঁদে। যে তিনি বলেছিলেন, আমি যেখানেই থাকি, যেমনই থাকি, আপনাদের ছেড়ে যাব না। আপনারা ছেড়ে গেলেও আমি আপনাদের ছেড়ে যাব না। দেশ ছাড়া আমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। এখন জনগণ সেই নেত্রীর জন্য কাঁদে। তাদের ছেড়ে না যেতে আঁকুতি জানাচ্ছে, তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করছে। সেই মায়ের সন্তান তারেক রহমানের কি অনতিবিলম্বে দেশে আসা উচিৎ নয়? অবশ্যই উচিৎ। তার নিরাপত্তা দেবেন আল্লাহ। তার নিরাপত্তার দেয়াল হয়ে থাকবে জনগণ।












































