প্রচ্ছদ জাতীয় জবি ছাত্রদল নেতা খু’ন মামলার ঘুরে দাঁড়াল নতুন মোড়

জবি ছাত্রদল নেতা খু’ন মামলার ঘুরে দাঁড়াল নতুন মোড়

পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও বর্ষার হাউজ টিউটর জোবায়েদ হোসাইনের খুনের ঘটনায় বর্ষার ও মাহির নিয়ে পুলিশের বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করেছেন বর্ষার বাবা গিয়াসউদ্দিন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় একটি সংবাদমাধ্যমকে এসব দাবি করেন তিনি। এ সময় বর্ষার মা তারা মেয়েকে নির্দোষ দাবি করেন।

এর আগে, জোবায়েদ হোসাইনের খুনের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন করে সম্মেলন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এতে পুলিশ বর্ষাকে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করে। একইসাথে পুলিশ বলে বর্ষার ও মাহির পরিকল্পিতভাবে জোবায়েদকে খুন করে এবং খুনের পিছনে ত্রিভুজ প্রেম দায়ী ছিল।

বর্ষার বাবা গিয়াসউদ্দিন বলেন, পুলিশ বলেছে বর্ষা পরিকল্পনা করে স্যারকে খুন করেছে। কিন্তু আমি বলছি বলছি পুলিশের এই বক্তব্য মিথ্যা। এটা পুরোপুরি মিথ্যা। এটা কোন ভাবেই হতে পারে না। পুলিশ সত্যটা বলেনি। মাহিরই খুন করেছে। বর্ষা এই হত্যা সম্পর্কে কিছুই জানতো না।

পুলিশের আরও বেশ কয়েকটি বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, পুলিশের বলা বক্তব্যে বলা হয়- খুনের সময় বর্ষা তৃতীয় তলায় দাঁড়িয়ে ছিল। এবং খুনের আগে বর্ষার নিকট জোবায়েদ বাচার আকুতি জানিয়েছিলো পুলিশের এই সকল বক্তব্য মিথ্যা। এগুলি সব মিথ্যা। এগুলো সব ভুল।

সেদিনের বর্ণনা দিয়ে গিয়াসউদ্দিন বলেন, ওর (বর্ষার) স্যার (জোবায়েদ হোসাইন) যখন খুন হয় সেদিন বর্ষার আম্মু বর্ষাকে ভাত খাওয়াচ্ছিল। বর্ষা ঘরের মধ্যে ছিল। খুনের ঘটনা জানার পর বর্ষা ৫ তলার বাসা থেকে তৃতীয় তলায় আসে ওর আম্মুর সাথে। খুনের সময় বর্ষা উপস্থিত ছিল না। এর আগে সারাদিন বর্ষা বাসা থেকে নামেনি।

বর্ষার সাথে মাহিরের প্রেমের সম্পর্কের বিষয় সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে জানতাম না। জানছি দুই বছর পর। যখন জানতে পারি তখন ওদের ভাড়া বাসা থেকে বের করে দিই। তিন চার বছর আগেই ওরা এখান থেকে চলে যায়।

আদালতে বর্ষার স্বীকারোক্তির বিষয়টি পুরোপুরি মিথ্যা কথা বলে দাবি করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, বর্ষা স্বীকারক্তি দিয়েছে এটা পুরো মিথ্যা কথা। পুলিশ তাকে মারধর করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে।

এ সময় পুলিশের আরো একটি বক্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করে বর্ষার বাবা বলেন, পুলিশ জানিয়েছে স্যারের (জোবায়েদ) ও বর্ষার তিন মাসের সম্পর্ক ছিল। বাস্তবে স্যার (জোবায়েদ) অনেক ভালো ছিলেন। আমরা কখনও তার মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনি৷ তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। আমি শুক্র-শনিবার বাসায় থাকতাম। কখনও খারাপ কিছু পায়নি স্যারের মধ্যে। ওর মায়ের মুখেই কখনও শুনিনি। বরং এই স্যারের অনেক সুনাম ছিল। অনেক ভালো ছিলেন তিনি।

বর্ষা ও মাহিরের প্রেমের সম্পর্কে বাবা গিয়াসউদ্দিন বলেন, বর্ষা মাহিরের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনি। সে দূরে দূরে থাকতো মাহিরের থেকে। এ জন্য বর্ষাকে অনেক হুমকিও দিতো মাহির। মাহির বর্ষাকে এসিড মারার হুমকিও দিয়েছিল। এগুলো বর্ষা ওর মাকে জানিয়েছিল আগেই।

মাহিরের বিষয়ে বর্ষার বাবা বলেন, মাহির ভালো ছিলো না। নেশাগ্রস্ত ছিল। মহল্লার মধ্যেই নেশা করতো। আমরাও চাইতাম না তার সাথে কথা বলুক বর্ষা। ছেলের মাও চাইতো না। ছেলের মা নিজেই বর্ষাকে বলতো মাহির ভালো না। ওর সাথে কথা না বলতে নিষেধ করেছি।

পুলিশের বলা বক্তব্যে, বর্ষা বাড়ি থেকে গহনা বিক্রি করে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে মাহিরকে বাইক কিনে দিয়েছে। এই বক্তব্যকে মিথ্যা দাবি করে গিয়াসউদ্দিন বলেন, এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এইটা মিথ্যা কথা। কোন গহনা হারায়নি বাসা থেকে। ওই (বর্ষা) গয়না পাবে কোথায়? ওতো টাকা পাবে কোথায় ওই? এসব সব মিথ্যা কথা পুলিশের।

জোবায়েদ খুনের কারণ উল্লেখ করে বর্ষার মা বলেন, স্যার (জোবায়েদ) যে বর্ষাকে পড়াতো এটা কোন ভাবেই পছন্দ করতো না মাহির। এটা বর্ষা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আমাদের জানায়। এ ছাড়া, বর্ষা মাহিরকে বিভিন্নরকম হমকি দিতো।

কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি চাই স্যারের (জোবায়েদের) হত্যার বিচার হোক। সে ভালো ছেলে ছিল। আমি কখনো খারাপ কিছু পাইনি। কিন্তু আমার মেয়ে নির্দোষ। ও (বর্ষা) কিছু জানতো না।

এ সময় তাকে বর্ষা ও জোবায়েদের মধ্যে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা জানতে চাইলে বলেন, এমন কিছু ছিলো না। আমি কখনো দেখিনি। আমার চোখে পড়েনি।

এদিকে, বর্ষার বাবা মায়ের এসকল অভিযোগের বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও পাওয়া যায়নি।

তবে জোবায়েদ খুন ও এই মামলার ঘটনা পানির মতো পরিষ্কার দাবি করে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিদর্শক আশরাফ হোসেন বলেন, বর্ষার বাবা-মা তো চাইবেই বর্ষাকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য। কোন অপরাধীই অপরাধ করে স্বীকার করে না। আর তাকে সেভ করার জন্য তার বাব-মা আত্নীয় স্বজন সবাই বলে যে সে ভালো। বর্ষার বাবা মাও সেই ভূমিকা পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা তো আসামিদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছি। আসামীরা যে বক্তব্য দিয়েছে পুলিশের নিকট, কোর্টের নিকট তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই বলা হয়েছে। তারা কি পরিকল্পনা করেছিল এটা ওরাই বলেছে পুলিশের কাছে। আর মাহির যে অপরাধী এটা বর্ষার মা কিভাবে জানে? মুলত বর্ষাকে সেভ করার জন্যই তার মা এসব বলছে।

সূত্র : আরটিভি