প্রচ্ছদ সারাদেশ ছেলের লিভারে বাঁচল বাবার জীবন

ছেলের লিভারে বাঁচল বাবার জীবন

দেশজুড়ে: বাবা মানে বটবৃক্ষ, তিনি একাই একটি প্রতিষ্ঠান। বাবা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি যে কোনো পরিস্থিতিতে আগলে রাখেন, ছায়ার মতো পাশে থাকেন, নির্ভরতা দেন। সাধারণত সন্তানের প্রতি বাবার অকৃত্তিম ভালোবাসার হাজারও উদাহরণ থাকলেও এবার এক সন্তান নিজের লিভার দিয়ে বাবার জীবন বাঁচানোয় বড় অবদান রাখলেন।

জানা গেছে, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের চরপিপলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বেলাল হোসেন (৫৩)। দীর্ঘ দুই বছর ধরে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত ছিলেন। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছিলেন লিভার প্রতিস্থাপন না করলে তাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। কিন্তু চিকিৎসকদের এই সোজাসাপটা উত্তর মেনে নিতে পারেননি ছেলে মো. জাকির হাসান জীবন (৩২)। যে করেই হোক বাবাকে বাঁচানোর প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। চলতি মাসের (৪ মার্চ) বাবাকে লিভার দান করার পূর্ব সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাবার সঙ্গে ছেলের লিভার ম্যাচও করে যায়। সেই দিনই ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের পর নিজের ৩৭% লিভার দান করে বাবাকে বাঁচিয়ে তোলেন ছেলে। বর্তমানে দুজনেই সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।

খুবজীপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন আমার মামা ও জাকির হাসান জীবন আমার মামাতো ভাই। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি আমার মামা একজন সাদামাটা মানুষ। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ তাকে বেলাল মাস্টার নামেই চেনেন। মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের। মামার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। জাকির হাসান জীবন রুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পাস করেছেন। সে বর্তমানে ওয়ালটন গ্রুপে প্রকৌশলী হিসাবে কর্মরত। মেয়েকেও মামা উচ্চশিক্ষিত করে বিয়ে দিয়েছেন এক লেখকের সঙ্গে। তাদের বাড়ি ঢাকায়।’

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২ বছর লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে আর্থিকভাবে সমস্যা দেখা দেয় মামার পরিবারে। তবে মামাতো বোনের জামাই চিকিৎসা বাবদ খরচ সম্পূর্ণ বহন করেছে। কিন্তু ডাক্তাররা যখন মামার লিভার প্রতিস্থানের কথা বলেন, তখন সেটি দান করার মতো তেমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে মামাতো ভাই জীবন নিজে থেকেই লিভার দান করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে। নিজের লিভার দান করে বাবাকে বাঁচিয়ে আত্মীয় স্বজন ও গ্রামের মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে জীবন।’

শ্রীপুর গ্রামের সমাজ সেবক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘শৈশব থেকেই জাকির হাসান জীবন অনেক ভদ্র ও মেধাবী ছেলে ছিল। বাবার প্রতি এমন ভালবাসায় সমাজের প্রতিটি মানুষের চোখে হিরো হয়ে উঠেছে সে। সেই এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এরকম ছেলে প্রতিটি ঘরে ঘরে জন্মগ্রহণ করুক।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় খুবজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দোলন বলেন, জাকির হাসান জীবন প্রমাণ করলেন সদিচ্ছা ও ভালোবাসা থাকলে জন্মদাতা পিতার জন্য ছেলেরা অনেক কিছু করতে পারে। সমাজে পিতার জন্য জাকির হাসানের এই অবদান সত্যিই বিরল।

এদিকে জাকির হাসান জীবন ভারত থেকে তার ফুফাত ভাই শফিকুল ইসলামের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, ‘বাবারা সবসময় আমাদের কাছে সুপার হিরো। বাবার জন্য এতটুকু করতে পেরে আমার কাছে ভাল লাগছে। যতদিন বেঁচে থাকব বাবাকে এভাবেই ভালবেসে যাব।’

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।