প্রচ্ছদ সারাদেশ ছিলেন শরীরচর্চার শিক্ষক, শতকোটির মালিক এখন

ছিলেন শরীরচর্চার শিক্ষক, শতকোটির মালিক এখন

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেরদহ গ্রামের রইচ উদ্দিন সংসার চালাতেন কবিরাজি করে। তার ছয় ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে ওবায়দুর রহমান বেলাল সবার ছোট। দশ ভাইবোনের মধ্যে বেলালই একমাত্র শিক্ষিত। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় শরীরচর্চার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় গ্রামের বাড়ি থেকে বালিজুরি শহরে নিজ কর্মস্থলে আসতেন একটি ভাঙা বাইসাইকেলে চড়ে। তার বাড়িতে ছিল দোচালা একটি টিনের ঘর। এখন সেখানে আলিশান বাড়ি। শুধু এই বাড়ি-ই নয়, ওবায়দুর রহমান বেলালের নামে রয়েছে শতকোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ। বিদেশেও তার সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে।

ওবায়দুর রহমান বেলাল কোনো গুপ্ত ধন পাননি। ব্যবসা-বাণিজ্য করে ছোট থেকে বড় হয়েছেন, এমনও না। তার এমন ধনী হয়ে ওঠার পেছনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ১৯৯৭ সালে মাদারগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। তখন থেকেই তার ভাগ্য খুলতে থাকে। পরের ১৯৯৮ সালে মাদারগঞ্জের বালিজুরি এসএম ফাজিল মাদ্রাসার শরীরচর্চার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০২ সালে সাত বছর পর তিনি শিক্ষক হিসেবে বেতনভুক্ত হন।

কিন্তু রাজনীতিই ছিল তার আয়ের প্রধান পথ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। সে বছরই দলীয় মনোনয়নে প্রথমবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। টানা তিন মেয়াদে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান। এর মধ্যে একবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অন্য দুটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে জোরজবরদস্তি করে হারিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন ওবায়দুর রহমান বেলাল। বিদেশেও তার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য থেকে বেলালের অঢেল সম্পদের এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে বালিজুরিতে ৫ শতাংশ জমির ওপর পাঁচতলা ভবন, উপজেলা পরিষদের সামনে তিন কোটি টাকা মূল্যের জমি, মাদারগঞ্জের ফুলজোড় এলাকায় ৩০ বিঘা জমি, উপজেলার তেঘরিয়া গ্রামে সবজি বাগানসহ খামার, জামালপুর শহরের শেখের ভিটা এলাকায় ছয়তলা ভবন, পাশে নয়াপাড়া মোড়ে আধাপাকা বাড়িসহ ৮ শতাংশ জমি। এ ছাড়া জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের কাছে বেলাল ও তার স্ত্রীর নামে এক একরের বেশি জমি রয়েছে।

ঢাকার ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বনশ্রীতেও একটা ফ্ল্যাট থাকার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। বেলালের শ্বশুরবাড়ি জামালপুরের ইসলামপুর পৌর শহরে বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে বলে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে। এর বাইরে ময়মনসিংহ শহরে জমি,

ঢাকা-মাওয়া রোডে পুষ্পধারা প্রপারটিজ লিমিটেডের প্রকল্প পদ্মা ভ্যালি ও পদ্মা ইকোসিটিতে ফ্ল্যাট রয়েছে তার।

বেলাল ও তার স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রচুর টাকা ও আনুমানিক ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে। বড় ছেলে আবির মাহমুদ লন্ডনের নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যারিস্টারি পড়ছেন। আবির মাহমুদ স্ত্রীসহ লন্ডনে বসবাস করায় সেখানে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া নিজ ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ রয়েছে।

বেলালের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন স্থানীয় আব্দুল জব্বার উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক পদে নিয়োগ পেয়েও বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকতেন। বেলাল-মাহমুদা দম্পতির ছোট ছেলে ঢাকার আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন।

এলাকাবাসীসহ আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন, এমন অনেকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ওবায়দুর রহমান বেলাল মাদারগঞ্জ উপজেলার অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন। এলাকার কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না তিনি। তার কথাই ছিল আইন। মির্জা আজম এবং জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরীর সহযোগিতায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে বেলালের বিরুদ্ধে।

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ওবায়দুর রহমান বেলাল কালবেলাকে বলেন, ‘জামালপুর শহরে বাড়ি, মাদারগঞ্জের বালিজুরির ভবন, নয়াপাড়ার জমি এবং নিজের পৈতৃক বাড়ির তথ্য সঠিক। তবে ঢাকায় আমার কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাট নেই। কোনো ব্যাংক ব্যালেন্সও নেই। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সব মিথ্যা।’ উপজেলার ফুলজোরে একটুও জমি নেই দাবি করলেও পরে সেখানে এক বিঘা জমি থাকার কথা জানান তিনি।

ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘অবৈধভাবে কোনো সম্পদ অর্জন করিনি। ১৫ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কোনো অন্যায়-অনিয়মকে প্রশ্রয় দিইনি।’ ভালোভাবে যাচাই করে সঠিক সংবাদ প্রকাশেরও আহ্বান জানান তিনি।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।