জাতীয়: ছাত্র আন্দোলন সামলানোর ক্ষেত্রে কিছু ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা এবং কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত ছিল।
বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেছেন জয়।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সরকারের কোটার বিরুদ্ধে কথা বলা এবং বিষয়টি আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে শুরুতেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল… কোটা কমানোর বিষয়ে আমাদের সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছিল। আমি সুপারিশ করেছিলাম- আদালত ভুল করেছে এবং আমরা কোটা চাই না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করতে, কিন্তু আমাদের সরকার তা শোনেনি এবং বিচার ব্যবস্থাই বিষয়টি সামলাবে বলে প্রত্যাশা করেছিল।’
বিক্ষোভ মোকাবিলায় সরকারের ভুল স্বীকার করলেও জয়ের দাবি, তিনি বিশ্বাস করেন বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠার পেছনে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা জড়িত ছিল।
তিনি বলেন ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা এর পেছনে জড়িত ছিল। কারণ ১৫ জুলাই থেকে অনেক আন্দোলনকারী আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত ছিল। গত ১৫ বছরে আমাদের জঙ্গিবাদের সফল নিয়ন্ত্রণের কারণে বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া খুবই কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষেই দেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার ও বিক্ষোভকারীদের সরবরাহ করা সম্ভব।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের আগের ২৪ ঘণ্টার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জয় বলেন, পরিস্থিতি এত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তা একদিন আগেও তিনি বা তার মা কেউই ভাবেননি।
তিনি বলেন, ‘তার (শেখ হাসিনা) দেশ ছাড়ার কোনও ইচ্ছা ছিল না। তিনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছিলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন এবং জনগণের উদ্দেশ্যে দেওয়া বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেবেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি বিবৃতিটির খসড়া তৈরি করছিলেন এবং সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সবকিছু পরিকল্পিত ছিল। এমনকি তিনি রেকর্ডিং শুরু করতে যাচ্ছিলেন, এ সময় বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেন, ‘‘ম্যাম, সময় নেই। আমাদের এখনই যেতে হবে।’’
শেখ হাসিনা দেশ না ছাড়ার বিষয়ে অনড় ছিলেন। কিন্তু তিনি তাকে রাজি করাতে সক্ষম হয়েছেন জানিয়ে জয় বলেন, ‘বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী তাকে সামরিক বিমানঘাঁটির একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে যায়। তারা সেখানে একটি হেলিকপ্টার প্রস্তুত করে রেখেছিল। কিন্তু তিনি যেতে চাননি… সেই সময় আমার খালা (শেখ রেহানা) আমাকে টেলিফোন করেন। আমি মাকে বোঝালাম যে, না, আপনার নিরাপত্তার জন্যই আপনাকে চলে যেতে হবে। যদি এই জনতা আপনাকে খুঁজে পায়, কোথাও আপনাকে ধরে ফেলে এবং সেখানে গুলি চলে, তাহলে অনেক মানুষ মারা যাবে। হয় তোমাকে এই হত্যার জন্য দায় দেবে কিংবা যদি তোমাকে ধরে ফেলে তাহলে মেরে ফেলবে। তাই তোমার সবচেয়ে ভালো হবে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া। আমিই একজন যে তাকে দেশ ছাড়তে রাজি করিয়েছি।’
বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতে রয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘‘তিনি বাংলাদেশে কী ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। আপাতত তিনি ভারতে থাকবেন।’’
শেখ হাসিনার অন্য কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘তাকে হেলিকপ্টারে করে দেশ থেকে চলে যেতে হয়েছে। তাই তার একমাত্র গন্তব্য ছিল ভারত। কিন্তু তার পরে, আপনি জানেন, প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র) মোদির সরকারকে ধন্যবাদ, তারা দ্রুত সাড়া দিয়েছে… তার জীবন বাঁচানোয় এবং তাকে অত্যন্ত সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তাই তিনি নিরাপদ আছেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন দেশে তার আশ্রয়ের আবেদন করার বিষয়ে যেসব প্রশ্ন উঠেছে তার সবগুলোই গুজব। এসব একেবারে মিথ্যা। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেননি।’
ভারতের প্রতি তার বার্তা কী হবে, জানতে চাইলে জয় নয়াদিল্লিকে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের দোরগোড়ায় অবস্থিত…আমি আশা করব, ভারত নেতৃত্ব দিয়ে নিশ্চিত করবে যে, ৯০ দিনের সাংবিধানিক সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অরাজকতা বন্ধ হবে এবং আওয়ামী লীগকে প্রচারণা ও পুনর্গঠনের অনুমতি দেওয়া হবে। যদি সেটা নিশ্চিত করা হয়, আমি এখনও নিশ্চিত যে আমরা নির্বাচনে জয়ী হব। আমরা এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।’
মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ভারত ভ্রমণ করবেন কি না, জানতে চাইলে জয় বলেন, তিনি ভারতে যেতে চান। তবে কখন তিনি ভারত সফর করবেন তা নিশ্চিত করে জানাননি।
সূত্র : ঢাকাটাইমস
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |