প্রচ্ছদ ধর্ম ছাগল-ভেড়া প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

ছাগল-ভেড়া প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) যা বলেছেন

ছাগল একটি গৃহপালিত প্রাণী। নম্র ও ভদ্র স্বভাবের হওয়ায় মানুষের কাছে খুবই প্রিয় এ প্রাণী। ছাগল সাধারণত কারো কোনো ক্ষতি করে না। তবে ছাগলের পাল চড়ানো খুবই কষ্টাসাধ্য।

প্রাকৃতিকভাবে বেশিরভাগ ছাগলের দুটি শিং থাকে। আর এর প্রজাতির ওপর নির্ভর করে শিংয়ের আকার নানা রকম হয়ে থাকে।
মুসা (আ.)-এর আলাপে ছাগল প্রসঙ্গ

পবিত্র কোরআনে একাধিক বার ছাগলের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত আল্লাহর সঙ্গে মুসা (আ.)-এর আলাপকালে ছাগল প্রসঙ্গও ছিল।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুসা, তোমার ডান হাতে ওটা কি? মুসা (আ.) বলেন, ‘তা আমার লাঠি; আমি এর ওপর ভর করে চলি, তা দিয়ে আমি ছাগলপালের জন্য গাছের পাতা পাড়ি। এ ছাড়াও তা আমার অনেক কাজে লাগে।’ (সুরা তোহা, আয়াত : ১৭-১৮)
নবীরা ছাগল চড়িয়েছেন

হাদিসের ভাষ্য অনুসারে, নবী-রাসুলরা জীবনের একটি নির্দিষ্ট সময় ছাগল চরিয়েছেন। কারণ এর মাধ্যমে নিজের মধ্যে ধৈর্যশীলতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মনোভাব গড়ে ওঠে।

তাই প্রিয় নবী (সা.)-ও এক সময় ছাগল চরিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা এমন কোনো নবী পাঠাননি যিনি ছাগল চরাননি।’ সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করেন, আপনিও কি ছাগল চরিয়েছেন? রাসুল (সা.) বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিও কয়েক কিরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাবাসীর ছাগল চরিয়েছি।’ (বুখারি, হাদিস: ২২৬২)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসরা লিখেছেন, ছাগল বা এ ধরনের প্রাণী চরানোর মাধ্যমে পরিচালনার দক্ষতা গড়ে ওঠে। তা ছাড়া মানুষের মধ্যে তৈরি হয় প্রবল ধৈর্যশক্তি, সাহসিকতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের দক্ষতা।

কারণ রাখাল বা ছাগলের দায়িত্বশীল একসময় ছাগল নিয়ে মাঠে যান এবং তাদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে যত্নবান থাকেন। তেমনিভাবে নবী-রাসুলরা মানুষের কল্যাণের বিষয়ে খুবই মনোযোগী থাকনে এবং সব পরিস্থিতিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।
ইবনে হাজর আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, কারণ তাঁরা ছাগল-ভেড়া চরানোর সময় খুবই ধৈর্য ধারণ করতেন। চারণভূমিতে ছাগল এদিক-সেদিক ছড়িয়ে পড়লে তাঁদের তা নিয়ন্ত্রণ করতে হতো। আর বিশাল ছাগলের পাল নিরাপদে চারণভূমিতে নিয়ে যাওয়া ও নিয়ে আসার মধ্যে বিশাল ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হতো। এরমাধ্যমে উম্মতের ব্যাপারেও তাঁদের মধ্যে ধৈর্যের মনোভাব গড়ে ওঠে।

মহানবী (সা.) ছাগল-ভেড়া চরাতে উৎসাহ দিয়েছেন। কারণ ছাগল লালন-পালনে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত রয়েছে। উম্মে হানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তাঁকে বলেন, ‘তুমি ছাগল-ভেড়া লালন-পালন কোরো। কারণ তাতে বরকত রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৩০৪)

মহানবী (সা.) উটকে মানুষের জন্য সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তা ছাড়া ছাগল-ভেড়াকে বরকতময় এবং ঘোড়াকের কল্যাণ বাহক হিসেবে বলেছেন। উরওয়া আল-বারিকি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘উট মালিকের জন্য সম্মানজনক। ছাগল-ভেড়া বরকতময় প্রাণী। কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ যুক্ত থাকবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২৩০৫)

নবী-রাসুলরা নিজস্ব পেশার মাধ্যমে উপার্জন করতেন। এরমধ্যে অন্যতম ছিল ছাগল-ভেড়া লালন-পালন করা। কারণ তাঁরা অন্যের ওপর নির্ভর করতেন না। এই কারণে নিজ হাতের উপার্জনকে সর্বোত্তম উপার্জন বলা হয়েছে। মিকদাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিজ হাতের উপার্জন থেকে আহার করার চেয়ে উত্তম কোনো আহার নেই। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে আহার করতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০৭২)