প্রচ্ছদ হেড লাইন ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল মতিউর সোনালী ব্যাংকেরও পরিচালক

ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল মতিউর সোনালী ব্যাংকেরও পরিচালক

হেড লাইন: ঈদুল আজহার আগে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান (ইফাত) নামের এক তরুণ। ভাইরাল হওয়া এই তরুণের বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমান। লাখ টাকা বেতনে চাকরি করে ৩৭ লাখ টাকার গরু ও ১৫ লাখে ছাগল কেনা নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

আলোচনার নতুন মোড় নেয় যখন মতিউর রহমান নিজের ছেলেকে অস্বীকার করে বলেন, ইফাত তার ছেলে নয়, ইফাত নামে কাউকে তিনি চেনেন না। তবে তার একাধিক নিকটাত্মীয় ও জনপ্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন, ইফাত মতিউর রহমানেরই ছেলে ও তার দ্বিতীয় সংসারের প্রথম সন্তান।

এ বিষয়ে পরিবারটির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে মতিউর রহমান ছেলেকে অস্বীকার করছেন। কারণ, ১৫ লাখের ছাগলকে কেন্দ্র করে ভাইরাল হওয়ার পর ইফাতের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপনের নানা বিবরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। সরকারি চাকরিজীবী বাবার বেতনের টাকা দিয়ে ছেলে কীভাবে এমন ব্যয়বহুল জীবনযাপন করতে পারে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ছেলের পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

এদিকে ফেসবুকে সমালোচনার জন্ম দেওয়া ১৫ লাখের ওই ছাগল ইফাত এক লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েও আর বাসায় নেননি দাবি করেছে ছাগলটির মালিক সাদিক অ্যাগ্রো কর্তৃপক্ষ। তবে ইফাত আরও বেশি দামে একাধিক গরু কিনেছেন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য ও ভিডিও প্রকাশ পায়।

এদিকে ছেলের ছাগলকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু আলোচনা এখন মতিউর রহমানের সম্পদের দিকে গড়িয়েছে। তার কত সম্পদ রয়েছে, সেটি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। একাধিক বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের তথ্য বেরিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নরসিংদী ও ময়মনসিংহে রয়েছে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিংস্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পত্তি।

ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ শেয়ারবাজারে রয়েছে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি শেয়ারবাজারে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বড় ব্যবসায়ী। ইতোমধ্যে তিনি নিজেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিতে (১৯ জুন প্রচারিত) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ওই কোম্পানির মালিকদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পরে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে বড় অঙ্কের মুনাফা করেছেন।

এনবিআর সদস্য ড. মতিউর রহমান বর্তমানে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন এখন। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদেও রয়েছেন। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিন বছরের জন্য তাকে নিয়োগ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুবাদে শেয়ারবাজারসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সুযোগ সুবিধা নিয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদের পাড়ার।

এদিকে মতিউর রহমান ইফাতকে ছেলে হিসেবে অস্বীকার করলেও বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাতের মা শাম্মী আখতার শিভলী ওরফে শিবু মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী। শাম্মী আখতারের বাবার বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামে। শাম্মী আখতার ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (ফেনী-২) নিজাম উদ্দিন হাজারীর আত্মীয়।

বাবার অঢেল সম্পদে বিলাসী জীবনযাপন করেন ১৯ বছরের ইফাত। তার ব্যবহার করা মোবাইল ফোনে যে সিমকার্ড ব্যবহার করছেন, সেটি তার বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে তোলা। ইফাতের স্বজনও বলছেন, মতিউর রহমান তার বাবা। মতিউর রহমান সম্পর্কে ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর মামাতো বোন জামাই।

নিজাম উদ্দিন হাজারী বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে জানান, ইফাত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে, এটাই সত্য। কেন নিজের সন্তানকে অস্বীকার করছেন, সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। আমার মামাতো বোন শাম্মী আখতার শিবলীর সঙ্গে মতিউরের বৈবাহিক বিচ্ছেদও হয়নি।

মতিউর রহমান ১১তম বিসিএসে বাণিজ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পরে এই ক্যাডারের সাত কর্মকর্তাকে কাস্টমস ক্যাডারে একীভূত করা হয়। মতিউর রহমান তাদের মধ্যে একজন। মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মুলাদি উপজেলায়। তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ আগে সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। পরে চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথম সংসারে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদেরও বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।