আপনার চেহারা মনোযোগ দিয়ে আয়নায় শেষ কবে দেখেছেন। আমাদের চেহারা কিন্তু অনেকগুলো রোগের কথা আগাম জানিয়ে দেয়। যদি আমরা খেয়াল করে তাকাই তখনি সেটা বুঝতে পারবো।
ফ্যাকাসে চোখ,লাল চোখ,মেয়েদের মুখের আশেপাশে লোম গজানো,ঠোঁটের কোণায় ঘা মুখে তিল বা আঁচিল এমন আরও কতগুলো বিষয় মনোযোগ দিয়ে দেখে নিলে জটিল কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে হয়তো আপনি ধরে ফেলতে পারবেন।ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট কিনুন
চোখ ফ্যাকাশে হওয়া
এটা অপুষ্টি বা রক্তশূন্যতার কারণে হতে পারে কী করে বুঝবেন আপনার চোখ ফ্যাকাশে কি না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার চোখের নীচের পাতা আঙুল দিয়ে টেনে ধরবেন। টেনে ধরার পর আপনার চোখের নিচের পাতায় বাইরের দিকে উজ্জ্বল লাল রং আর ভেতরের দিকে হালকা গোলাপি আভা তাহলে সেটা স্বাভাবিক। আর যদি দুই টার বদলে শুধুমাত্র দেখেন বাইরে সেই উজ্জ্বল লাল রঙ না থাকে পুরোটা জুড়েই হালকা হালকা গোলাপি আভা তাহলে সেটা রক্তশূন্যতার লক্ষণ। এমন হলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন। তিনি খুব সহজ কিছু রক্তপরীক্ষা করে দেখতে পারবেন আপনি রক্তশূণ্যতায় ভুগছেন কি না এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।
তিল বা আঁচিল
আপনার যদি তিল বা আঁচিল থাকে তাহলে খুব ভাল করে খেয়াল রাখবেন সেটা দেখতে কেমন পারলে ফোনে ছবি তুলে রাখবেন। কারণ সেই তিলে যদি কোনও পরিবর্তন আসে যেমন সেটা যদি রং পাল্টায় সেটা বড় হয়, উঁচু হয়ে যায় কিংবা আকার আকৃতিতে পরিবর্তন আসে সেটা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। তখন দ্রুত একজন বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু এই পরিবর্তনটা যদি আপনি বুঝতে চান তাহলে আগে থেকে আপনার জানা থাকা লাগবে। এটা দেখতে কেমন ছিল। সে জন্য এই বিষয়টা খেয়াল রাখবেন।
জিভ খাঁজ মুছে যাওয়া
আয়নায় আপনার জীবটা দেখেন সাধারনত খাওয়া ছাড়া জীবদের দিকে তেমন মনোযোগ কেউ দেয় না। কিন্তু আমরা ডাক্তাররা জিম্বা দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারি আয়নায় ভালো করে তাকালে আপনি দেখবেন আপনার জীবনের ছোট ছোট অনেকগুলো ভাঁজ বা খাঁজ আছে কিন্তু এই ভাঁজগুলো মুছে গিয়ে জীব বা যদি মসৃণ হয়ে যায়।ডাক্তারি ভাষায় আমরা যেটাকে বলি এক ট্রাফিক লাইট এস ভিটামিন বি ওয়ান বি থ্রি বি সিক্স, আইরন ইত্যাদি অনেকগুলো ভিটামিন মিনারেলের অভাবে এমন হতে পারে। সাথে সাধারণত ঠোঁটের দুই কোণাতেও লাল হয়ে যায় বা ঘা হয় এমন হলে বেশি বেশি শাক সবজি ফলমূল খাওয়ার চেষ্টা করবেন। খাদ্য তালিকায় ডিম দুধ, মুরগির মাংস রাখবেন। অপুষ্টি ছাড়াও আরও অন্যান্য কারণে এমন হতে পারে তাই একজন ডাক্তার দেখাবেন যাতে সঠিক চিকিৎসা শুরু করা যায়।
ঠোঁটের কোণায় ঘা বা ফুসকুড়ি
আপনার ঠোঁটের দুইপাশে কোণায় খেয়াল করেন। সেখানে যদি লাল হয়ে থাকে বা একটু ফুলে থাকে ঘা কিংবা ফুসকুড়ির মতো হয়ে থাকে সেটাকে আমরা ডাক্তারি ভাষায় বলি অ্যাঞ্জলসে ওয়াইটস আর জিঙ্ক কিছু বি ভিটামিনের অভাবে এমন হতে পারে। তাই পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার দিকে মনোযোগ দেবেন। আবার ব্যাকটিরিয়া কিংবা ফাঙ্গাস ইনফেকশনের কারণেও এমন হতে পারে। তাই একজন চিকিৎসক দেখিয়ে নিলে তিনি কারণ অনুযায়ী আপনাকে চিকিৎসা দিতে পারবেন।
মুখ একপাশে বেঁকে যাওয়া
এটা ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণ স্ট্রোক করলে ব্রেনের এক অংশে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা শুরু করতে যত দেরি হয় ততই ব্রেনের কোষগুলি মারা যেতে থাকে। আর রোগীর প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা মৃত্যু বরণ করার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে থাকে৷ অর্থাৎ সময়ে এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটা মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। তাই এমন হলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের এমারজেন্সি বিভাগে নিয়ে যাবেন যে হাসপাতালে স্ট্রোকের জরুরি চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতাল হলে ভালো। চেহারা আরও কিছু লক্ষণ দেখে আপনি স্ট্রোক সন্দেহ করতে পারেন।যেমন চোখের পাতা ঝুলে পড়া চেহারা একপাশ অবশ হয়ে যাওয়া কথা জড়িয়ে আসা। তার পর যদি হাত বা পা একদিকে অবশ হয়ে আসে, স্ট্রোক ছাড়াও অন্যান্য কারণে এমন হতে পারে। তবে যেহেতু স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাই দেরি না করে হাসপাতালের এমার্জেন্সি বিভাগে চলে যাবেন।
চোখ লাল হওয়া
চোখ লাল হলে আমরা তেমন পাত্তা দেই না। রাগ হলে চোখ লাল হয় ঘুম কম হলে চোখ লাল হয়। অ্যালার্জির কারণে চোখ লাল হয়ে চুলকাতে পারে। চোখ উঠলে চোখ লাল থাকে। এগুলো নিয়ে সাধারণত খুব দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই, কিন্তু কখনও কখনও চোখ লাল হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।না হলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেগুলো এখন বলে দিচ্ছি, প্রয়োজনে। চোখ লাল হওয়ার সাথে যদি চোখে ব্যথা হয় আলোতে তাকালে চোখে ব্যথা হয়। চোখ অনেক গাঢ় লাল হয়ে যায় চোখের মণি থেকে আরেকটা বেশী বড় মনে হয় তীব্র মাথাব্যথা হয় বমিভাব হয় দৃষ্টিশক্তিতে কোনও পরিবর্তন আসে যেমন দেখতে কষ্ট হওয়া ঝাপসা ঘোলা দেখা আঁকাবাঁকা লাইন বা আলোর ঝলকানি দেখা। আর যদি মনে হয় যে চোখে কিছু আটকে আছে যেমন বালু বা কাচের মতো চোখের পাতায় ছোট দানা বা গোটা অনেকে এটাকে অঞ্জলি বা অঞ্জলি নামে চেনেন।ডাক্তারি ভাষায় নাম হল স্টাই ,যেখান থেকে চোখের পাপড়ি গজায় সেখানে ছোট লালচে দানার মতো ওঠে অনেক ব্যথা করে। ব্যথা কমানোর জন্য দিনে তিন থেকে হালকাগরম সেক দিতে পারেন। প্রতিবার ৫-১০ মিনিটকরে সেঁক দেবেন। তাহলে অঞ্জলি থেকে পুঁজ বের হতে পারে। আর তাড়াতাড়ি সেরে উঠতে পারে। নিজে নিজে ভুলেও এটা ফোটাতে যাবেন না। আমি অনেককেই এটা করতে দেখি কিন্তু এটা করা উচিত না। কারণ ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়তে পারে। আর এই অঞ্জলি একা একাই সেরে যায় কিন্তু যদি অনেক ব্যথা হয়।অনেক ভুলে যায় চোখে দেখতে সমস্যা হয় অথবা কয়েক সপ্তাহেও না সারে। তাহলে ডাক্তারের কাছে যাবেন।
চোখের আশেপাশে হলুদ গোটার মতো হওয়া
আপনার চোখের আশেপাশে খেয়াল করেন সেখানে হলুদ গোটার মতো কিছু থাকলে সেটা হার্টের রোগ হয়।আগাম লক্ষণ হতে পারে চামড়ার নীচে চর্বি জমে এমন হল৷ গোটা হয় এটা স্বাভাবিক হতে পারে। বংশগত কারণে হতে পারে আবার রক্তে চর্বির পরিমান খুব বেশি থাকলে এমন হতে পারে। তাই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে রক্তের চর্বি মাপের পরীক্ষা করিয়ে নেবেন।বাটার ফ্লাই অ্যাশ মুখে তো অনেক রকমের দাগ হয়। সেগুলো নিয়ে আমরা তেমন দুশ্চিন্তা করি না। কিন্তু এক ধরনের দাগ দেখা দিলে অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডাক্তারি ভাষায় আমরা যেটাকে বলি বাটারফ্লাই রাশ অর্থাৎ দুই গালে আর নাকে প্রজাপতির পাখার মতো রাস বা দাগ। এটার বিশেষত্ব হল এই রাস নাক ঠোঁটের পাশে দুই ভাগে আসে না। এর থেকেই মতো জটিল রোগের লক্ষণ হতে পারে।এমন হলে অবশ্যই একজন ডাক্তার দেখাবেন। তিনি আপনার মুখের দাগ দেখে এবং আপনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারবেন এই গ্যাস৷ কোন জটিল রোগের লক্ষণ কি না?
ঠোঁট ফাটা
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকলে ঠোঁট ফাটতে পারে। ঠোঁট ফাটলে জিম্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। তাহলে থুতু শুকিয়ে যাওয়ার পর ঠোঁট আরও শুকিয়ে যায়। রাতে ঘুমানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে ঘুমাবেন। দিনেও কয়েকবার লাগাতে পারেন৷ আর ফাটা ঠোঁট দাঁত দিয়ে বা আঙুল দিয়ে খোলাবেন না। তাহলে ঠোঁট সেরে উঠতে দেরী হতে পারে। কিছু ভিটামিনের অভাবেও ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাবার খাচ্ছেন কি না সেটাও খেয়াল করবেন
চোখ হলুদ হওয়া
অনেকেই জানেননাম জন্ডিস প্রথমে সাধারণত চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে আসে। তারপর চেহারা এবং আস্তে আস্তে পুরো শরীর হলুদ হয়ে যায়। অনেকগুলো জটিল রোগের কারণে এমন হতে পারে। লিভারের রোগ পিত্তথলির রোগ, প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের রোগ, রক্তের রোগ। তাই এমন হলে দেরি না করে একজন ডাক্তার দেখাবেন।
মেয়েদের মুখের আশেপাশে লোম গজানো
মেয়েদের চেহারায় গলায় ঘাড়ে যদি লোম গজায় এটা আমাদের হাতে পায়ে পাতলা লোম থাকে সেরকম না ঘন কালো চুলের মতো কিছুটা ছেলেদের মত তাহলে সেটা পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বা পিসিওএস রোগের লক্ষণ হতে পারে।এই রোগটা এখন অনেকেই চেনেন। কারও কারও বাচ্চা নিতে সমস্যা হয়। এই রোগ হলে তার পর পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হাই ব্লাডপ্রেশার রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। তাই এই লক্ষণটা দেখা দিলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।আর এই লক্ষণ দেখা দিলেই ঘাবড়ে যাবেন না। কোন রোগ ছাড়াও এটা হতে পারে বংশগত কারণে হতে পারে৷ তাই দুশ্চিন্তা না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
জ্বর ঠোসা
অনেকেই চেনেন ফুসকুড়ির মতো। সাধারণত ঠোঁটের আশেপাশে হয়। আপনার এই সমস্যা হলে বুঝে নিবেন রাতের বেলা আপনার জ্বর উঠে । সেজন্য আপনাকে ডাক্তারে পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: জনকণ্ঠ
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |