প্রচ্ছদ হেড লাইন চাঞ্চল্যকর শিশু মাইশা হত্যার রহস্য উন্মোচন, ঘাতক মায়ের স্বীকারোক্তি

চাঞ্চল্যকর শিশু মাইশা হত্যার রহস্য উন্মোচন, ঘাতক মায়ের স্বীকারোক্তি

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। সকাল আনুমানিক ৯টা। আট বছর বয়সের মাইশা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভোগাইল বগাদি গ্রামে নানা বাড়িতে মোবাইল চার্জারের তার গলায় জড়িয়ে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়েছে- এমন ইতিহাস নিয়ে তার স্বজনরা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে মৃত্যু হয় শিশুটির। নিহত মাইশা কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের সাইফুল ইসলামের কন্যা।

এরপর নিহত মাইশা’র মা পপি খাতুন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে এমন তথ্য দিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করলে ওইদিন রাতে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান তদন্তকালে শিশুটি মৃত্যুর বিষয়ে ঘটনাস্থল থেকে নানা ধরণের নেতিবাচক তথ্য পাওয়ায় শিশুটির দুর্ঘটনামূলক স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

প্রসঙ্গত, শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও শেষ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপারের মৌখিক নির্দেশে শিশুটির মৃত্যু হত্যা জনিত না দুর্ঘটনামূলক তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতসহ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট মতামত গ্রহণের জন্য ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেন।

এদিকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে মর্মে সুনির্দিষ্ট মতামত প্রদান করেন। অতঃপর শিশুটির নানা মো. শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ৩০২/৩৪ পেনাল কোড অনুযায়ী একটি হত্যা মামলা রুজু হয়।

এরপর ৫ এপ্রিল পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. আনিসুজ্জামানসহ মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে শিশু মাইশা’র মা পপি খাতুনের কথা-বার্তায় সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসেন।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে শিশুটির মা পপি খাতুন এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। কেন এ হত্যাকান্ড ঘটানো হলো? তার কোন সহযোগী ছিল কি না? এসব প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান, তিনি একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

পুলিশ সুপার আরও জানান, তদন্তে নিহত মাইশার মা পপি খাতুন এর পূর্বাপর পারিবারিক ও ব্যক্তি জীবন, বৈবাহিক জীবন অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ এবং বিবাহ বিচ্ছেদ পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যা এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অনুঘটক হিসাবে কাজ করেছে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে। এই মামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তারকৃত আসামী পপি খাতুন আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, যেহেতু এটি একটি স্পর্শকাতর খুনের ঘটনা সেহেতু চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। তদন্তকালে প্রাপ্ত সকল তথ্যাদি যাচাই-বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনায় জড়িত আসামিকে বিচারের মুখোমুখি করবার লক্ষ্যে বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

সোমবার (৬ এপ্রিল) সকাল চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস বিফ্রিংয়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তুলে ধরেন পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক্রাইম এ্যান্ড অপস নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্তরত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আনিসুজ্জামান, ডিআইও-১ আবু জিহাদ খান, আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) আবু সাঈদসহ প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক মিডিয়ার সংবাদ কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।