প্রচ্ছদ জাতীয় ঘেরাও করো, এক জনও যেন দরবার থেকে বের হতে না পারে

ঘেরাও করো, এক জনও যেন দরবার থেকে বের হতে না পারে

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তত্কালীন বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছিল ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে। সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতে জবানবন্দি দেন লে. কর্নেল মো. আবু তাসনিম।

সেদিনকার বিডিআর জওয়ানদের নৃশংসতার চিত্র উঠে এসেছে তার জবানবন্দিতে। জবানবন্দিতে তাসনিম বলেছেন, ঘটনার দিন সকাল ৯টায় দরবার শুরুর আধা ঘণ্টা পর একজন সিপাহী রান্না ঘরের দরজা দিয়ে প্রবেশ করে স্টেজে এসে ডিজিকে (মেজর জেনারেল শাকিল আহম্মেদ) লক্ষ্য করে অস্ত্র তাক করে।

স্টেজে থাকা সেনা কর্মকর্তারা ঐ সিপাহিকে ধরে ফেলে। তখন হইচই শুরু হয়। বিডিআর সদস্যরা দরবার হল থেকে বেরিয়ে যায়। তখন তাদের ফেরত আসার জন্য বলা হয়। পরে দেখতে পাই তিন-চার জন সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে অস্ত্র নিয়ে। তারা বলছে, তাড়াতাড়ি ঘেরাও কর, একজনও যেন বের হতে না পারে।

তিনি বলেন, তখন একটি পিকআপকে দরবার হলের দিকে আসতে দেখি। ঐ সময় মেজর মকবুল ও গাজ্জালী ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি দরবার হলে দ্রুত প্রবেশ করি। ঐ সময় দরবার হলে প্রচুর হইচই হচ্ছিল। আমি ডিজিকে বলি ‘আমরা বৃত্তবন্দি হয়ে পড়েছি।’ ডিজি নির্দেশ দেন, ‘তোমরা তোমাদের সৈনিকদের নিয়ন্ত্রণ কর’। আমি নির্দেশ পেয়ে দরবার হল থেকে বের হয়ে সিগন্যাল সেক্টরের দিকে রওনা দিই।

যাওয়ার সময় সুইমিং পুলের কাছে মেজর মকবুল ও গাজ্জালীর সঙ্গে দেখা হয়। তারা আমাকে বলে, ‘স্যার র্যাংক ব্যাজ খুলে ফেলুন’। আমি খুলিনি। কিছুক্ষণ পরে দেখি মেজর গাজ্জালীকে ছয়-সাত জন সৈনিক পেটাচ্ছে। এটা দেখে দালানের পাশে লুকাই। আমি চিৎকার শুনি ও গুলির শব্দ পাই। কিছুক্ষণ পর দেখি গাজ্জালীর মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে কয়েক জন সৈনিক। তিনি বলেন, দুজন জেসিও আমাকে তাদের মেসে নিয়ে যায়। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করি। সৈনিকরা মেসে এসে বলে আরেকটাকে পেয়েছি। কে কোথায় আসিছ আয়। সাত-আট জন সৈনিক আমাকে ঘেরাও করে পেটানো শুরু করে। পরে তিন-চার জন সৈনিক এসে আমাকে সেখান থেকে লাইনে নিয়ে যায়। পরদিন উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম।

তাসনিম বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার করে আমাকে মিরপুর সেনানিবাসে নেওয়া হয়। সেখান থেকে বাসায় যাই। আমার স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং জানতে পারি বিদ্রোহীরা কোয়ার্টার গার্ডে তাদের বন্দি করে রেখেছিল। পরবর্তীকালে অন্য অফিসারদের মাধ্যমে জানতে পারি ডিএডি তৌহিদ, নাসির, হাবিব, রহিম, হাবিলদার রফিক, সৈনিক মনিরুজ্জামান, সেলিম রেজা ও মনির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের কথা সেখানে প্রকাশ করেননি।

সুূত্রঃ ইত্তেফাক