
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুর কবলে পড়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ এখন সোমালিয়ার উপকূলে অবস্থান করছে। সেখানে পৌঁছানোর পর জাহাজের ব্রিজ থেকে নাবিকদের কেবিনে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা। এছাড়া জাহাজটিতে থাকা জিম্মি নাবিকরা সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন জাহাজটির একজন নাবিক। ভাইয়ের কাছে পাঠানো এক ভয়েস মেসেজে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন। খবর ডয়চে ভেলে।
বহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে নাবিকের ছোট ভাই এই ভয়েস মেসেজ পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই নাবিকের নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ভয়েস মেসেজে নাবিক বলেন, ‘গতকাল একটি নেভি জাহাজ এসেছিল। আজকেও একটি নেভি জাহাজ এসেছিল। মোট দুইটি সুসজ্জিত জাহাজ আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল।’ তবে তা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা (জলদস্যুরা) আমাদের জিম্মি করে রাখে, আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে রাখে। নেভির বড় বড় ফ্রিগেট দেখেই ওরা আমাদের জিম্মি করে। এসব বড় জাহাজ দেখেও ওরা ভয় পায় না।’
এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কাউকে আঘাত করেনি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে, আমি যেখানে ঘুমাই সেখানে পাশ ফিরলেই দেখতে পাই যে আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে। এই অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। তারপরও মানসিকভাবে চাপে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি।’ জাহাজে থাকা খাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাবার আছে। কিন্তু যেহেতু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে, আমাদের খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না। আর হয়তো ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এরপর খাবার শেষ হয়ে গেলে আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব। পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাব।’
ভয়েস মেসেজে তিনি আরও জানান, সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষ তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং গণমাধ্যম নিয়মিত তাদের খবর প্রকাশ করছে বলে খানিকটা আশ্বস্ত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি শিগগির পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব। ঈদের আগে যেন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি, সেটাই আমরা চাই।’এদিকে নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে তৎপর বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মারিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, তাদেরসহ জাহাজ ফেরত আনাই আমাদের প্রথম লক্ষ্য।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে সেটি সোমালিয়া উপকুলে নিয়ে যাওয়া হয়। মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেডের।