অপরাধ: বিয়ের আগে একবার ও বিয়ের পর দুবার জোরপূর্বক গর্ভপাত ও স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম রাহিমের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত রাহিম রমনা থানার ১৯নং ওয়ার্ডের সভাপতি।
তার স্ত্রী মেহেরুন্নেসা কালবেলাকে বলেন, ‘২০২২ সালের ২৮ মার্চ গর্ভাবস্থায় ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করার শর্তে কোর্টে বিয়ে হয় আমাদের। তবে বিয়ে হলেও আমাকে ঘরে তোলেননি তিনি। মগবাজারের একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে একাই ভাড়া থাকতাম। আমার ভরণপোষণের জন্য এ পর্যন্ত এক টাকাও খরচ করেনি তিনি। তার মুড থাকলে বাসায় আসত, সকালে আবার চলে যেত।’
তাদের বিয়ের খবর দুই পরিবার জানলেও ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় বিয়ে এবং বউ দুটোই গোপন রাখেন রাহিম। এর আগে প্রথমবার অন্তঃসত্ত্বা হলে প্রেমিকাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন রাহিম। একসময় তাকে বিয়ের কথা বলতে বাসায় গেলে রাহিমের মায়ের সামনেই মেহেরুন্নেসাকে মারধর করেন।
মেহেরুন্নেসা বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কের কথা রাহিমের বাবা-মা জানতেন। এমনকি আমি প্রথমবার যেদিন তার বাড়িতে ছিলাম । সেদিন তার মাও বাসায় ছিলেন। তিনি সব কিছুর সাক্ষী। কিন্তু আমি যখন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তার মায়ের কাছে গেলাম, তিনি আমাকে একদমই অস্বীকার করলেন।’
রাহিমের বাবার সঙ্গে বিষয়টি সমাধানে একাধিক কথা বলার চেষ্টা করেন মেহেরুন্নেসার বাবা মোহাম্মদ মনির মিয়া। তবে ছেলের দায় নিতে রাজি ছিলেন না বাবা, দিয়েছেন হুমকি-ধমকিও।
তার অভিভাবকের কাছে নানাভাবে অনুরোধ ও আকুতি মিনতি করেও কোনো লাভ না হলে ছাত্রলীগের এক নেত্রীর দ্বারস্ত হন মেহেরুন্নেসা। তিনি রাহিমকে বোঝালে বিয়ে করতে রাজি হয়। তবে শর্তজুড়ে দেয় বাচ্চা নষ্ট করার।
মেহেরুন্নেসা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে সে বাচ্চা নষ্ট করার শর্ত দেয়। আমি না চাইলেও শুধু তাকে পাওয়ার আশায় আমার গর্ভের ৬ মাসের বাচ্চাকে নষ্ট করে ফেলি। সে আমার প্রতি এতটাই কেয়ালেস ছিল, এবোরশনের টাকা তো দূরে থাক, হাসপাতালেও আমার সঙ্গে ছিল না। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করেছি, কিন্তু তাকে পাশে পাইনি। এমন ঘটনার কারণে আমার বাবা-মাও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করি, কিন্তু তাতেও মন গলেনি রাহিমের।’
প্রথম গর্ভপাতের পর আরও দুবার অন্তঃসত্ত্বা হন মেহেরুন্নেসা। তবে কোনোবারই সন্তান দুনিয়ায় আনার ইচ্ছা ছিল না রাহিমের। এক এক সময় এক এক আশা দেখিয়ে গর্ভপাত করানো হয়।
কিন্তু স্ত্রীকে দেওয়া আশ্বাস অস্বীকার করেন ছাত্রলীগের এ নেতা। তবে এতকিছুর পরেও রাহিমের সঙ্গে সংসার করতে চান মেহেরুন্নেসা। এসব অভিযোগের বিষয়ে, রাহিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ও (মেহেরুন্নেসা) অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল বলেই তো বিয়ে করেছিলাম। কিন্তু বিয়ের পাঁচ দিন পর আমাকে কিছু না জানিয়ে তার বাবার সঙ্গে গিয়ে সে বাচ্চা নষ্ট করে আসে। এর কারণ জানতে চাইলে সে আমাকে কোনো উত্তর দেয়নি। দ্বিতীয়বার গর্ভপাতের বিষয়েও আমি কিছু জানতাম না।
আর তৃতীয়বার তার স্ত্রীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়া সম্পর্কেও তিনি জানতেন আমি জানতাম না। রাহিম বলেন, ‘তার (মেহেরুন্নেসা) সঙ্গে আমার ২০২৩ সালের রোজার ঈদ থেকে এ বছরের রোজার ঈদ পর্যন্ত দেখাই হয়নি। ও অন্তঃসত্ত্বা হলোই কখন বা এবোরশনই করল কখন?
তিনি কালবেলার কাছে ছাত্রলীগের রাজনীতির কারণে সংসার গোপন রাখার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তাদের বিয়ের ব্যাপারে তার বাবা- মা জানত না বলে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত থাকতেন না।
তিনি বলেন, আমার বয়স কম আর আয়ের উৎস ছিল না বলে ভরণপোষণ দিতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, সে খুব উগ্র, রাতে ছেলেদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়, মুখের ভাষাও খুব খারাপ। আমার পক্ষে তার সঙ্গে থাকা সম্ভব না। তার বাড়ি চাঁদপুর, থাকেন বাবা জাহাঙ্গির ইসলাম ও মা তাসলিমা বেগমের সঙ্গে কামরাঙ্গির চরের ঝাওলাহাদি চৌরাস্তায়। এ বিষয়ে তার বাবার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |