প্রচ্ছদ জাতীয় ‘গ্রাহকের কোটি টাকা’ মেরে স্ত্রী-সন্তানসহ কানাডায় পাড়ি ব্যাংক কর্মকর্তার!

‘গ্রাহকের কোটি টাকা’ মেরে স্ত্রী-সন্তানসহ কানাডায় পাড়ি ব্যাংক কর্মকর্তার!

ব্যাংকের ৫ লাখ ও গ্রাহকদের কোটি টাকা নিয়ে কানাডা চলে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ফয়েজ আহাম্মদ নামে এক ব্যাংক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

ফয়েজ আহাম্মদ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে জনতা ব্যাংক শাখার কর্মকর্তা। তিনি উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দেবিপুর গ্রামে মৃত জয়নাল জমাদারের একমাত্র ছেলে।

একইসঙ্গে তিনি ৫ দিনের ছুটি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ কানাডা চলে গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় তোলপাড় চলছে। তবে গ্রাহকরা এখন পর্যন্ত লিখিত কোনো অভিযোগ না দিলেও প্রতিদিনই ব্যাংক ম্যানেজার ও ফয়েজের বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন।

এদিকে, ৫ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ না করা ও পাঁচদিনের ছুটি শেষ হওয়ার পরও ব্যাংকে উপস্থিত না হওয়ায় ফয়েজের মালিকানাধীন বাড়ির সামনে মার্কেটে নোটিশ সাঁটিয়ে দিয়েছেন ব্যাংক ম্যানেজার। তবে দুই মাসেও তাকে বরখাস্ত করেননি তারা।

ভুক্তভোগী কয়েকজন গ্রাহক জানান, ফয়েজ আহাম্মদ গত ৬ বছর ধরে জনতা ব্যাংক রায়পুর শাখার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে কর্মরত।

ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের লোন দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় ফয়েজকে (৬০টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)। গ্রাহকদের অগোচরে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে ২ থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ করে ব্যাংকের সিল-স্বাক্ষর মেরে গ্রাহকদের চেক বই দিতেন। এছাড়াও একইভাবে নিজ এলাকার মানুষ, আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী ও প্রবাসীর লাখ লাখ টাকা ব্যাংকে তাদের অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন।

ভুক্তভোগী রায়পুর ইউপির দেবিপুর গ্রামের সায়েস্তানগর দাখিল মাদরাসা শিক্ষক রেজোয়ান বলেন, ব্যাংক থেকে একজন অফিসার ফোন দিয়ে বলেন ১০ লাখ টাকার কিস্তি পরিশোধ করছেন না কেন? এতে আমি হতভাগ হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি কীসের ১০ লাখ টাকা, কীসের কিস্তি? তখন অফিসার ফোন কেটে দেন। তখনই বুঝলাম আমার অ্যাকাউন্ট দিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করেছেন ফয়েজ।

শুধু রেজোয়ানই নন, শায়েস্তানগর গ্রামের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন, মো. নাসির, ব্যবসায়ী ইব্রাহিম, আলাউদ্দিনসহ শতাধিক গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কানাডা পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।

অনেকে বলছেন, ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়েজ সব সময় অনলাইনে জমজমাট ডলার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

পলাতক ব্যাংক কর্মকর্তা ফয়েজের নানা নজরুল জমাদার বলেন, ফয়েজের স্ত্রী অন্তু ও এক শিশু ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গেছেন। পরে ভারত না কানাডা গেছেন তা আমি জানি না। আমাদের কাছেও বলে যাননি। ঈদের আগে কথা হয়, আর যোগাযোগ নাই।

তিনি আরো বলেন, এলাকার ১৫-২০ জনসহ অনেক মানুষ আমার কাছে এসে অভিযোগ করেছেন। তবে ফয়েজ ব্যাংক থেকে ৮০ লাখ টাকা লোন নিয়ে বাড়ির সামনে মার্কেট করেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাংক থেকে লোক এসে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে।

জনতা ব্যাংক রায়পুর শাখার ব্যবস্থাপক তারেক মোহাম্মদ মুছা জানান, লোন অফিসার ফয়েজ আহাম্মদ তার স্ত্রীকে ভারতে চিকিৎসা করাবেন বলে গত (২৬ মে) ৫ দিনের ছুটি নেন। গত এক মাস তিনি ব্যাংকে আসছেন না। তার কাছে ব্যক্তিগত ৫ লাখ টাকা লোন পাবে ব্যাংক। এ জন্য তাকে নোটিশ পাঠানো হয় এবং তার বাড়ির সামনে মালিকানাধীন পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেটের সামনে নোটিশবোর্ড সাঁটানো হয়েছে। ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা শারমিন ভাটের সময়ে এ কাজ করেন ফয়েজ। আমি দুই মাস হলো যোগদান করেছি।

তবে ব্যাংকের গ্রাহকদের কোনো টাকা নেননি বলে দাবি করেন তিনি। এছাড়াও ফয়েজ ব্যাংকের কোনো গ্রাহকের টাকা নেননি বলে দাবি করেছেন ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার শারমিন ভাট।

রায়পুর থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, জনতা ব্যাংকে লোন অফিসার ফয়েজ আহাম্মদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।