প্রচ্ছদ জাতীয় গোপন করতে চেয়েছিল ভারত, বৈঠকের বিষয় প্রকাশ করে দিলেন জামায়াত আমির!

গোপন করতে চেয়েছিল ভারত, বৈঠকের বিষয় প্রকাশ করে দিলেন জামায়াত আমির!

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ভারতের একজন কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। সেই বৈঠকটি গোপন করতে বলেছিল ভারতীয় কূটনীতিক। বুধবার নিজের বাসভবনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামায়াত আমির ওই বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রয়টার্সেকে।

জামায়াতের আমির রয়টার্সকে বলেছেন, অন্যান্য দেশের কূটনীতিকেরা যেমন প্রকাশ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, ভারতীয় কূটনীতিক তেমনটি করেননি। ভারতীয় ওই কর্মকর্তা বৈঠকটি গোপন রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু জামায়াত আমির বলেছেন, আমাদের সবার কাছে এবং একে অপরের কাছে উন্মুক্ত হতে হবে। আমাদের সম্পর্কোন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।

জামায়াত আমিরের এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সাড়া পায়নি রয়টার্স। তবে ভারতের সরকারের একটি সূত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

শফিকুর রহমানের কাছে পাকিস্তানের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জানতে চেয়েছিল রয়টার্স। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ উপায়ে সম্পর্ক বজায় রাখি। আমরা কখনো কোনো একটি দেশের দিকে ঝুঁকে পড়ার বিষয়ে আগ্রহী নই।’

জামায়াতের আমির রয়টার্সকে আরও বলেছেন, ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার ভারতে ধারাবাহিক অবস্থান একটি উদ্বেগের বিষয়, যেখানে তাঁর পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

ঐক্যের সরকার
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসময় নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে নিজেদের সবচেয়ে বেশি শক্তিমত্তা দেখাতে যাচ্ছে। দলটি একটি ঐক্যের সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে উন্মুক্ত রয়েছে এবং এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলেছে বলে দলটির প্রধান জানিয়েছেন।

জনমত জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ১৭ বছর পর এই নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চলা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে। সেখানে ব্যবধান থাকবে কম। জামায়াত সর্বশেষ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল মেয়াদে বিএনপির জোটসঙ্গী হিসেবে ক্ষমতার অংশীদার ছিল।

জেন-জিদের দলের (এনসিপি) সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার কয়েক দিন পর দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে ঐক্যের সরকার বিষয় জামায়াত আমির রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা অন্তত পাঁচ বছর দেশকে স্থিতিশীল দেখতে চাই। দলগুলো যদি এক জায়গায় আসে, তাহলে আমরা একসঙ্গে সরকার পরিচালনা করব।’

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেছেন, কোনো ঐক্যের সরকারের জন্য দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান অবশ্যই একটি অভিন্ন অ্যাজেন্ডা হবে। তিনি আরও বলেন, যে দল সবচেয়ে বেশি আসন পাবে, সেই দল থেকে প্রধানমন্ত্রী হবেন। যদি জামায়াত সবচেয়ে বেশি আসন পায়, তাহলে তিনি প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবে দল।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর এই উত্থান হয়েছে গত বছর আগস্টে তরুণদের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মুখে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর। হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। হাসিনা জামায়াতে ইসলামীর কঠোর সমালোচক ছিলেন এবং তার আমলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতার মৃত্যুদণ্ড হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল জামায়াত।

আদালতের এক রায়ের পর ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলটির নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকার ২০২৪ সালের আগস্টে দলটির ওপর থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়।

সাক্ষাৎকারে জামায়াতের আমির বলেছেন, জামায়াতকে নিয়ে কোনো সরকার গঠিত হলে সেই সরকার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে ‘স্বস্তি বোধ’ করবে না। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থনে কোনো বিরোধিতা ছাড়াই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। চলতি মাসের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন নিজে রয়টার্সকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর মেয়াদের মধ্যভাগেই তিনি পদত্যাগ করতে চান।

অবশ্য আজ রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে জামায়াতের আমিরের অবস্থানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বলেছেন, তিনি ‘এ বিষয়টিকে আর জটিল’ করতে চান না।