গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি শিশুর ভেতর জন্ম নেয়া আরেকটি শিশুকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করেছে একদল চিকিৎসক।
শনিবার সকালে ঐ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শংকর চন্দ্র দাসের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক বিরল এবং জটিল এ অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন করেন। সার্জারির পর ঐ শিশুটি সুস্থ অবস্থায় রয়েছে।
জানা গেছে, ৮ মাস বয়সী শিশুটির নাম আব্দুল্লাহ। শিশুটির বাবা এমরান হোসেন একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার বাড়ি গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের বিকেবাড়ি এলাকায়। এটি তার প্রথম সন্তান।
ডা. শংকর চন্দ্র দাস বলেন, ফিটাস ইন ফিটু একটি জন্মগত সমস্যা, যা সচরাচর ঘটে না। প্রতি পাঁচ লাখ শিশুর জন্মে একটি পাওয়া যেতে পারে। বাস্তবে এটি হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে একটি শিশুর ভেতর আরেকটি শিশু। দেশে এ জাতীয় রোগীর অপারেশন হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি। আর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ জাতীয় অস্ত্রোপচার এটিই প্রথম।
তিনি বলেন, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা আসে, অর্থাৎ অতি শুরুতে ডিম্ব নিষিক্ত হওয়ার পর কোষ বিভাজন হতে হতে সাধারণভাবে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। কিন্তু কোনো এক পর্যায়ে যদি কোষগুলো সমান দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দুটি জমজ বাচ্চার জন্ম হতে পারে। কিন্তু কোষগুলো অসমান দুই ভাগে ভাগ হলে বেশি কোষযুক্ত ভাগ থেকে সাধারণত একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হয় এবং কম কোষযুক্ত ভাগ থেকে অপর একটি বাচ্চা বড় হতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে এ বাচ্চাটির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। এ বাচ্চাটি পরবর্তী সময়ে সুস্থ বাচ্চাটির শরীরের ভেতর ঢুকে যায়। সে বেঁচে থাকার জন্য সুস্থ বাচ্চাটির দেহ থেকে রক্তনালির মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করে। এমন দ্বিতীয় বাচ্চাটিকেই বলা হয় ফিটাস ইন ফিটু।
এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির সাধারণত ব্রেইন তৈরি হয় না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের হাড় তৈরি হয়। ক্ষুদ্র আকারে হাত-পা তৈরি হয়। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে তৈরি হয় না। শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ফিটাস ইন ফিটু শিশুটির অবস্থান হয় সুস্থ শিশুটির পেটের ভেতর। বাকি ২০ ভাগ ক্ষেত্রে শিশুটির অবস্থান হতে পারে বুকের ভেতর, তলপেটে মাথার ভেতর, মুখের ভেতর, অণ্ডকোষের ঝুলির ভেতর অথবা পায়ুপথের পেছনে। এ শিশুটির ফিটাস ইন ফিটু সেক্রোকক্সিসিজায়ায় রিজিওন এরিয়ায় এটি তার পায়ু পথের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
শিশুটির বাবা এমরান হোসেন বলেন, শিশুটি গর্ভে আসার পর প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে তার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। সেখানে শিশুটির এমন অবস্থা নির্ণয় করা যায়নি। পরে ওই হাসপাতালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলে শিশুটির পায়ু পথ সংলগ্ন একটি মাংসপিণ্ডের মতো দেখা যায়। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক শংকর চন্দ্র দাস শিশুটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন।
তিনি জানান, ঐ হাসপাতালেই শনিবার শিশুটির অস্ত্রোপচার করা হয়। দুই ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের সময় সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাবিব সেলিম খাজা, সার্জারি বিভিাগের সহকারী অধ্যাপক সামসুল হুদা, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মনিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক মইনুল হোসেন চৌধুরীসহ সার্জারি, এনেস্থেসিয়া, আইসিইউ বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |