
সিলেট মহানগর বিএনপিতে সভাপতি নাসিম হোসাইন ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর মধ্যে চলমান ক্ষমতা কেন্দ্রিক বিরোধ এবার প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দুজনের টানাপোড়েন গিয়ে পৌঁছেছে একটি এতিমখানার অনুষ্ঠানে, যেখানে ব্যানার খুলে নেওয়া ও সিনিয়র এক নেতাকে অপমান করার অভিযোগে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ২৬ নভেম্বর রাতে রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়- আগে মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের পদ স্থগিত ছিল এবং আবেদনের প্রেক্ষিতে তার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু পরদিন আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওই তথ্য ‘ভুলবশত’ দেওয়া হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে নাসিম হোসাইনের কোনো পদই স্থগিত ছিল না। বিজ্ঞপ্তির এই বিভ্রান্তিই দুপক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করে।
এ অবস্থায় নাসিম হোসাইন নিজেকে বৈধ সভাপতি দাবি করেন।
অন্যদিকে কেন্দ্রঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া রেজাউল হাসান কয়েস লোদীও পদ ছাড়তে অনাগ্রহী।
নেতৃত্ব প্রশ্নে সৃষ্ট এই টানাপোড়েনের ফলেই সোমবার নগরীর কাজিটুলার একটি মক্তব ও এতিমখানায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় আয়োজিত দোয়া ও খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিলেন নাসিম হোসাইন।
সভাপতির ব্যানর খুলে নিচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পক্ষের নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ রয়েছে- অনুষ্ঠানে কয়েস লোদীর অনুসারীরা ব্যানার খুলে নেন এবং এক সিনিয়র নেতাকে তাড়িয়ে দেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নাসিম হোসাইন বলেন, ‘তিনি আগে যেমন সভাপতি ছিলেন, এখনো তেমনই আছেন, কারণ তার স্থানে কাউকে বসানো হয়নি।’
তিনি জানান, দেশনেত্রীর সুস্থতার জন্য আয়োজন করা দোয়া ও খাবার বিতরণে যার কোনো রাজনীতি থাকার কথা নয়, সেখানে কয়েস লোদী এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তবে তারা সংঘাতে না জড়িয়ে শিরনি বিতরণ শেষে অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে আসেন।
অন্যদিকে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না, শুধু শেষ মুহূর্তে শিরনি বিতরণে অংশ নিতে যান। ব্যানার খুলে নেওয়ার মতো ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। নেতৃত্ব সংক্রান্ত প্রশ্নে তিনি জানান, দল তাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তিনি সেটিই পালন করছেন এবং দল থেকে নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী কাজ করবেন।
২০২৩ সালের ১০ মার্চ কাউন্সিলরদের ভোটে নাসিম হোসাইন সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তিনি বিদেশে গেলে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে ৪ নভেম্বর মিফতাহের পরিবর্তে নগর বিএনপির ১৭০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সঙ্গে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন থেকেই তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
নাসিম হোসাইন দেশে ফিরে দায়িত্ব পুনরায় দাবি করায় দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করেছে। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞপ্তির দু’ধরনের ব্যাখ্যা বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে।
এতিমখানার ঘটনাটি সেই উত্তেজনাকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে, যা নিয়ে নগর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।













































