
অর্থনীতি: শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি বাণিজ্যিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে চতুর্থ প্রজন্মের পদ্মা ব্যাংক। এর মধ্য দিয়ে সবল ও দুর্বল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ভালো ব্যাংকের পরিচালক-কর্মকর্তারা। তারা আশঙ্কা করছেন, ভালো ব্যাংকগুলোর ওপর খারাপ ব্যাংক চাপিয়ে দেয়া হতে পারে। কারণ, এক্সিম ও পদ্মা একীভূত করার প্রক্রিয়ায় তা দেখা যাচ্ছে। এখানে এক্সিম ব্যাংককে সবল এবং পদ্মাকে দুর্বল হিসেবে দেখানো হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের ৭ থেকে ১০টি দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে সমান সংখ্যক ভালো ব্যাংক চাপে পড়েছে। সেগুলো হলো ব্র্যাক, ইস্টার্ণ, দি সিটি, প্রাইম, ডাচ্–বাংলা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, যমুনা, পূবালী, ঢাকাসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক। বিশেষভাবে সংকটে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়ে আতঙ্কে আছেন সেসব ব্যাংকের শীর্ষ কর্তারা। কারণ, ব্যাংকটির নথিপত্রেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। বিতরণ করা মোট ঋণের যা ২৯ শতাংশ। তবে প্রকৃত ঋণ দ্বিগুণ হবে।
অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একীভূত করে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ভালো। তবে ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে। সবল ব্যাংকের ওপর চাপ প্রয়োগ না করে স্বেচ্ছায় মার্জার হওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করে পেশাদারিত্বের সঙ্গে অধিগ্রহণ কার্যক্রম চালাতে হবে। অন্যথায় উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সেগুলোর ব্যাপারে আগামী মার্চ থেকে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, একটা ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ করতে দু-তিন বছর লাগে। এখানে অভিজ্ঞ জনবল দরকার হয়। এটা অনেক কঠিন কাজ। সব ব্যাংকের একীভূত করার সক্ষমতাও নেই। কয়েকজন ব্যাংক পরিচালক বলেছেন, প্রভাবশালী এক্সিম ব্যাংককে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব মেনে নিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে অন্য ব্যাংকগুলোর পক্ষে তা এড়ানো কঠিন। এই বিষয় মূলত আতঙ্ক তৈরি করছে।
প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কাছে বারবার একীভূত হওয়া নিয়ে জানতে চাচ্ছে। আমরা তাদের বলছি, এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না, যাতে প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে পড়ে। আমানতকারীদের টাকায় ব্যাংক চলে। তাই ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি দুর্বল করার সুযোগ নেই। এজন্য নানা নীতি ছাড় দিতে হবে। যাতে কারও ক্ষতি না হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগে দুর্বল ব্যাংকের তালিকা করে খারাপ সম্পদ পৃথক করতে হবে। এরপর ব্যাংকগুলোকে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আহ্বান জানাতে হবে। চাপ দিয়ে সবল ব্যাংকের সঙ্গে খারাপ ব্যাংক একীভূত করলে ফলাফল ভালো নাও হতে পারে।