
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। ৯০ দশকের ঢাকার ত্রাস সুব্রত বাইন গ্রেফতারের খবরের পর চারিদিকে প্রশ্ন উঠেছে ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কে এই সুব্রত বাইন?
মূলত ৯০ দশকে ঢাকার অপরাধ জগতে এক ত্রাসের নাম ছিল সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী। কথিত ‘সেভেন স্টার’ বাহিনীর প্রধান ছিলেন তিনি। যদিও পুলিশের খাতায় তাঁর পুরো নাম ত্রিমাতি সুব্রত বাইন। ঢাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসীর আদি নিবাস বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার জোবারপাড় গ্রামে। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ১৯৬৭ সালে জন্ম সুব্রত বাইনের। তার বাবা বিপুল বাইন একটি এনজিওর গাড়ি চালাতেন। মায়ের নাম কুমুলিনি বাইন। তিন বোন আর এক ভায়ের মধ্যে সুব্রত সবার বড়। মা কুমুলিনি আর তিন বোন মেরি, চেরি ও পরীকে নিয়ে ঢাকার মগবাজারের ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
বহুদিন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপিয়ে ভারতের কারাগারে কিছু দিন বন্দী ছিলেন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। সুব্রত বাইনের অপরাধ জগতে প্রবেশ মূলত নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। ঢাকায় দরপত্র নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে তার উত্থান ঘটে। সেই সময় অসংখ্য খুন ও জখমের ঘটনায় তার নাম নিয়মিত আসত। একাধিকবার কারাগারে গেলেও জামিনে মুক্ত হয়ে অপরাধে ফিরে আসেন বারবার।
সুব্রত বাইন বরিশালে অক্সফোর্ড মিশন স্কুল নামে খ্রিষ্টান মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে হোস্টেলে থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করলেও খুব বেশি ভালো ছিলেন না ছাত্র হিসেবে। এরপর ঢাকায় শেরেবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হলে সেখান থেকেই এসএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। তার পড়ালেখার গল্পটা এতটুকুই। এরপর সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে সেখানকার এক নেতার সঙ্গে পরিচয় হয়। এরপর কলেজে আর ভর্তি হওয়া হয়নি তার। এখান থেকেই শুরু শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন গড়ে ওঠার গল্প।
কিশোর বয়সে খুব অল্প দিনেই রাজধানীর মগবাজার এলাকায় একটি সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলেন সুব্রত। ১৯৯৩ সালের দিকে মধুবাজারে এক সবজিবিক্রেতা খুনের ঘটনায় পুলিশের তালিকায় তার নাম ওঠে আসে। এর কিছুদিন পর মগবাজারের বিশাল সেন্টার নির্মাণের সময় চাঁদাবাজি নিয়ে গোলাগুলি হয়। সেই থেকে সুব্রত বাইনের নাম গণমাধ্যমে আসতে থাকে। সুব্রত বাইন পরে বিশাল সেন্টারের দোকান মালিক সমিতির নেতাও বনে যান। রমনা, মধুবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার—এসব এলাকাকে পরিণত করেন নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায়।
১৯৯১ সালে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদ হত্যার ঘটনায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়। এ সময় রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন তিনি। বিএনপির হয়ে কাজ করে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন এবং তার জন্মদিনে দলটির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি সুব্রতকে ‘তারকা সন্ত্রাসী’তে পরিণত করে। পরবর্তীতে যুবলীগের লিয়াকতের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান নিয়ন্ত্রণ বিস্তার নিয়ে।
১৯৯৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ট্রিপল মার্ডার, মগবাজারের রফিক, সিদ্ধেশ্বরীর খোকনসহ বেশ কয়েকজনের খুনের ঘটনায় নাম আসে সুব্রতর। ওই সময় রমনা, মগবাজার, কারওয়ান বাজার ও মধুবাগ এলাকায় প্রায়ই গোলাগুলির ঘটনা ঘটত। তার বিরুদ্ধে সে সময় কমপক্ষে ৩০টি মামলা ছিল।
১৯৯৭ সালে নয়াপল্টন এলাকার একটি হাসপাতাল থেকে গোয়েন্দা পুলিশের এসি আকরাম হোসেন সুব্রত বাইনকে গ্রেফতার করেন। দেড় বছরের মতো জেলে থাকার পর তিনি জামিনে বের হন এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। সুব্রত জেলে থাকার সময় তার স্ত্রী লুসি গ্রুপেরই এক সদস্যের প্রেমে পড়েন। জেল থেকে বেরিয়ে ঘটনা জানার পর সুব্রত নিজেই লুসিকে সেই যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেন। লুসির ঘরে সুব্রতর দুই সন্তান ছিল। পরে ১৯৯৯ সালে কুমিল্লায় বিউটি নামের এক নারীকে বিয়ে করেন সুব্রত কিন্তু কয়েক বছরের মাথায় বিউটিকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।
জানা যায়, ২৭ মে মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করা এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা সড়কের একটি ছাত্রাবাস থেকে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। যে বিষয়টি এখন টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।