প্রচ্ছদ সারাদেশ কী পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত দিতে হয়?

কী পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত দিতে হয়?

সারাদেশ: ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে জাকাত অন্যতম। শব্দটির অর্থ পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি। পবিত্র কুরআনে নামাজের পাশাপাশি জাকাতের কথা অসংখ্যবার এসেছে। কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর জাকাত আদায় করা ফরজ। হাদিসেও এ বিষয়ে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মু’আয (রা.)-কে (শাসকরূপে) ইয়ামান অভিমুখে প্রেরণকালে বলেন, সেখানের অধিবাসীদেরকে আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং আমি (মুহাম্মদ সা.) আল্লাহর রাসুল- এ কথার সাক্ষ্যদানের দাওয়াত দেবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের ওপর প্রতি দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) ফরজ করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদের জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের সম্পদের ওপর সা’দকা (জাকাত) ফরজ করেছেন। তাদের মধ্যকার (নিসাব পরিমাণ) সম্পদশালীদের নিকট থেকে (জাকাত) উসূল করে তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ১৩১৩) তবে জাকাত কীভাবে ও কতটুকু দিতে হবে সে বিষয়ে অনেকের মাঝেই নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। যদিও পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে সব নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। তবে কুরআনে বর্ণিত নির্দেশনার সঠিক ব্যাখ্যার জন্য আলেমদের শরণাপন্ন হতে হয়। মূলত কিছু বিষয় খেয়াল করলেই কারও ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে কিনা তা জানা যায়। এক বছরের বেশি সময় ধরে সঞ্চিত স্বর্ণালংকার ছাড়াও নগদ অর্থ, বিভিন্ন দলিল, শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবন্ড ও অন্যান্য কাগজপত্র যার আর্থিক মূল্য আছে ইত্যাদির দাম যদি নিসাব পরিমাণ, অর্থাৎ যাকাত প্রদানের উপযুক্ত হয় এবং পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হয় তবে এর জন্য জাকাত দেয়া বাধ্যতামূলক। এ ক্ষেত্রে শর্ত হলো- সম্পদের ওপর পূর্ণাঙ্গ মালিকানা থাকতে হবে।

তবে এরপরও অনেক সময় কোন ক্ষেত্রে জাকাত দিতে হবে আর কোন ক্ষেত্রে দিতে হবে না এ নিয়ে নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। যেমন: ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের জাকাত দিতে হবে কিনা, প্রকৃতপক্ষে কোন কোন সম্পদের ওপর জাকাত দিতে হয়, দাতব্য সংস্থায় জাকাত দিলে আদায় হবে কিনা ইত্যাদি। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন ইসলামি ফাউন্ডেশনের মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, যদি কেউ ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত কাজে ঋণ নেয়, সেটি যদি আগামী এক বছরের কিস্তি হয়ে থাকে তবে এই সময়ের কিস্তি বাদ দিয়ে বাকি টাকার ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে। কারণ, টাকা-পয়সা ব্যবসায় না খাটিয়ে এমনি রেখে দিলেও তার ওপর জাকাত ফরজ হয়। তবে কারও যদি ঋণ এমন হয় যে, যা বাদ দিলে তার কাছে নিসাব পরিমাণ যাকাতযোগ্য সম্পদ থাকবে না, তবে সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির ওপর জাকাত ফরজ হবে না। বর্তমান সময়ে অনেকেই প্লট, বাড়ি বা জমি কিনে রাখেন, এ ক্ষেত্রে জাকাতের বিধান কেন হবে তা নিয়েও কথা বলেছেন মুফতি আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাখা প্লট, ফ্ল্যাট বা জমির জাকাত দিতে হবে। তবে নিজের বাড়ি করার জন্য আগে থেকে কিনে রাখা প্লট কিংবা জমির ক্ষেত্রে জাকাত দিতে হবে না। আবার কেউ যদি সন্তানের জন্য বা এ ধরনের ব্যবহারের জন্য ফ্লাট রাখেন- এমন ক্ষেত্রেও জাকাত প্রযোজ্য হবে না। তবে যদি কারও দোকান থাকে, তবে দোকানে থাকা পণ্যের ওপর জাকাত দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দোকান ভবন ও জমির ওপর জাকাত প্রযোজ্য হবে না।

আবার অনেকে মনে করেন, এক বছর ধরে নিজের বা পরিবারের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার, দামি রত্ন’র ওপরেই শুধু জাকাত দিতে হয়। তবে এমন ধারণা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ। তিনি জানান, নিসাব পরিমাণ থাকা সম্পদের সবকিছুর ওপরই জাকাত ফরজ। তাই গচ্ছিত নগদ অর্থ ছাড়াও শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবণ্ড ও সার্টিফিকেটসমূহ, স্বর্ণ-রৌপ্য, মূল্যবান ধাতু ও স্বর্ণ বা রুপার অলংকার, বাণিজ্যিক সম্পদ ও শিল্পজাত ব্যবসায় প্রতিশ্রুত লভ্যাংশ, উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল, পশু সম্পদ- ৪০টির ওপরে ছাগল বা ভেড়া, এবং ৩০টির ওপরে গরু-মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশু, খনিজ দ্রব্য, প্রভিডেন্ট ফান্ড সবকিছুর ওপরই জাকাত দিতে হবে। আবার দাতব্য সংস্থায় জাকাত দিলে সঠিকভাবে জাকাত আদায় হবে কিনা তা নিয়েও অনেক প্রশ্ন ওঠে। মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, জাকাত আদায় শুদ্ধ হওয়ার জন্য অবশ্যই যাকে জাকাত দেয়া হচ্ছে তাকে সেই সম্পদের মালিক করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে দাতব্য সংস্থায় জাকাত দিলে সেটির ব্যয়ের অধিকার সুনির্দিষ্ট কোনো গরিব বা মিসকিনের থাকে না। এ জন্য জাকাত হিসেবে নগদ টাকা দেয়াই উত্তম। অন্যদিকে, স্বর্ণালংকারের ক্ষেত্রে স্ত্রী নাকি স্বামী জাকাত আদায় করবেন অনেক সময় তা নিয়েও প্রশ্ন দেখায় দেয়। এ বিষয়ে মুফতি আব্দুল্লাহ বলেন, স্বর্ণালংকারের জাকাতের দায় স্ত্রী ও মেয়ের উপরই বর্তায়। স্ত্রী যদি দশ ভরি স্বর্ণের মালিক হন কিন্তু নগদ টাকা নেই, সেক্ষেত্রে স্বর্ণ বা কিছু অংশ স্বর্ণ বিক্রি করেও তিনি জাকাত আদায় করতে পারেন। তবে চাইলে স্বামীও এটি পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ঋণ নেয়া যাবে না। কেউ কেউ কাপড় দিয়েও জাকাত আদায় করেন। মুফতি আব্দুল্লাহর মতে এটি ঠিক হলেও উত্তম নয়। কারণ, যার যেটা উপকারে লাগবে, সেটা দিয়েই তাকে জাকাত দেয়া উত্তম। অন্যদিকে, জাকাত কাদের দেয়া যায়, এ নিয়েও অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা যায়। মুফতি আব্দুল্লাহর মতে, মুসলিম গরিব মিসকিন, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, জিহাদকারী ও মুসাফির, দ্বীনদার দরিদ্র, নওমুসলিম, এমনকি গরিব-অসহায় আত্মীয়-স্বজনদেরও জাকাত দেয়া যাবে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।