
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলার আড়াই মাস পর তিনজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ড শুনানি শেষে আসামিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, ‘আমরা নির্দোষ। আমরা ফুল বিক্রি করি। ফুটপাতে চা বিক্রি করি। আসল দোষীদের না ধরে আমাদের ধরা হয়েছে। কারেন্ট শক দিয়ে ও মারধর করে দোষ স্বীকার করতে বলেছে।’
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আসামি মেহেদী হাসান ও মো. হৃদয় ইসলামের ২ দিনের ও আসামি মো. রিপনের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. আখতার মোরশেদ তাদের ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী শামসুদ্দোহা সুমন ও কাইয়ুম হোসেন নয়ন রিমান্ডের জোর দাবি জানান। অন্যদিকে আসামিপক্ষ আইনজীবী আমিনুল করিম লিটন রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানি শেষে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় আসামি হৃদয় ইসলাম কান্না করে বলেন, ‘আমরা অপরাধী নই। আমাদের সন্দেহভাজন হিসেবে ধরে। এরপর খরচাপাতি চায়; কিন্তু আমরা গরিব ঘরের সন্তান। টাকা দিতে পারিনি বলে মামলায় ঢুকিয়ে দিয়েছে। অনেকেরে ধরছিল। যাদের থেকে টাকা পেয়েছে, তাদের ছেড়ে দিয়েছে।’
এ আসামি আরও বলেন, ‘যারা দোষী যারা ঘটনাস্থলে ছিল, তাদের না ধরে আমাদের ধরেছে। আমি ফুটপাতে চা বিক্রি করি। আমি ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে সাক্ষী হতে বলছিল, কিন্তু আমি বলছি, আমি তো ঘটনার কিছুই জানি না। আমাদের কারেন্টের শক দিয়ে মারধর করে দোষ স্বীকার করতে বলছে। এখন আবার রিমান্ডে নিচ্ছে। আমার সন্তানটা এতিম হয়ে যাবে।’ এ সময় কাঁদতে থাকেন আসামি হৃদয়।
একই সময় বাকি দুই আসামিকেও কাঁদতে দেখা যায়। তাদের অমানবিকভাবে মারধর করা হয়েছে বলে শরীরের বিভিন্ন কাটা চিহ্ন দেখাতে থাকেন। সেখানে উপস্থিত অভিযুক্তদের স্বজনরা বলেন, দোষীদের না ধরে তাদের ধরা হয়েছে। জোর করে দোষ স্বীকার করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় তারা ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল করিম লিটন বলেন, ‘আসামিদের রিমান্ডের সময় মারধর করা হয়েছে। তারা নির্দোষ। আমরা ন্যায়বিচার চাই।’ তবে এ আইনজীবী বিএনপিপন্থি হওয়ার পরও ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা মামলায় আসামিপক্ষে দাঁড়ানো নিয়ে বেশ সমালোচনাও হতে দেখা গেছে।
এদিকে মামলা সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় গত ১৩ মে রাত ১১টায় ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।