সারাদেশ: কথা ছিল অটোরিকশা চালিয়ে যে টাকা পাবেন তা দিয়ে বাজার করে ঘরে ফিরবেন স্বামী। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে রাত হলেও আর ঘরে ফিরেন না হাসেম মিয়া। পরদিন সকালে খোঁজ মেলে, ময়মনসিংহ নগরীর ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে স্বামীর নিথর দেহ। নিহত অটোচালক হাসেমের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া কলাপাড়া এলাকায়। স্ত্রী-দুই সন্তানের ভরণ-পোষণ চলতো তার আয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অথৈ সাগরে হাসেম মিয়ার পরিবার।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে যাত্রী বেশে নগরীর ব্রিজমোড় থেকে হাসেম মিয়ার অটোরিকশা ভাড়া করে ঘাতকেরা। পরে নদীর পাড়ে নিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায় অটোরিকশা নিয়ে। ঘটনার পাঁচ দিন পর হত্যায় সরাসরি জড়িত ৪ জনসহ মোট সাতজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। ১৩ ফেব্রুয়ারির ওই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পুলিশ সুপার মাসুম আহমদ ভুঁইয়া। তিনি বলেন, আমরা চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। তারমধ্যে একজন আছে যে ১৯ মাস জেলে ছিল। দুই মাস আগে সে জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে পুলিশ সুপার জানান, গত ৮ তারিখ দিবাগত রাত ১২টায় আসামিরা শম্ভুগঞ্জ সংলগ্ন মাঠে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা শম্ভুগঞ্জ থেকে হাসেম মিয়ার অটোরিকশা ভাড়া করে। পরে দুজন করে চারজন সেই অটোরিকশা নিয়ে স্থানীয় জয়নাল আবেদীন পার্কে চলে আসে। বাকি তিনজন অপর একটি অটোতে করে তারা ফলো করতে থাকে।
আরোও পড়ুন: সনাতন ধর্মের বাল্যবিবাহ দিতে গিয়ে দণ্ড পেলেন মুসলিম কাজী
পরবর্তীতে পার্কের ভেতরে যাওয়ার পর রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে আসামিরা হাসেম মিয়াকে হাত-পা বেঁধে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এরপর অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যারা ছিনতাই করা অটোরিকশা বা চোরাই মালামাল গ্রহণ করে- এমন তিনজনকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। সর্বমোট এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা সাতজনকে গ্রেপ্তার করি। যারমধ্যে চারজন সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অপর তিনজন চোরাই মালামাল কেনার সঙ্গে জড়িত।
এদিকে, একমাত্র উপার্জনের মানুষ হারিয়ে পাগলপ্রায় হাসেম মিয়ার স্ত্রী। কান্নায় ভেঙে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে প্রলাপ করছেন। বিলাপ করতে করতে হাসেমের স্ত্রী শুধু বলছেন, ‘ট্যাহা না থাকলে (টাকা না থাকায়) সকালে বাইরায়া গাড়ি চালায়া বাড়ি আইয়া বাজারের ট্যাকা দিয়া থুইয়া গেছে। কইছে যেটি মাইরা আনছি এটি নেও (অটো চালিয়ে আয়)। এটি দিয়া চলো, আমি আবার যাইতাছি গা।’ অন্যদিকে, নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে নিহতের শাশুড়ি বলেন, ‘তারে (মেয়ের জামাই) এরকম কইরা নিয়া হাতও ভাঙছে, পা-ও ভাঙছে, মুখও ভাঙছে। বাইন্ধা তারা আমার মেয়ের জামাইরে পারাইয়া মারছে।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |