প্রচ্ছদ জাতীয় এস আলমসহ চার গ্রুপের ৬৪৯৭ কোটি টাকা সুদ মওকুফ

এস আলমসহ চার গ্রুপের ৬৪৯৭ কোটি টাকা সুদ মওকুফ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে দেশের ৪ ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম, নাসা, বিসমিল্লাহ ও এনানটেক্সকে বড় অংকের সুদ মওকুফের সুবিধা দিয়েছে দুটি ব্যাংক। এসব গ্রুপের ১৪ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে মওকুফ করা হয়েছে ৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংক নাসা, বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপকে ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করে। আর বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের ৩ হাজার ৬১৮ কোটি স্থিতির বিপরীতে ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা মওকুফ করা হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদীভাঙন, দুর্দশাজনিত কারণ বা বন্ধ প্রকল্পে আংশিক বা সম্পূর্ণ সুদ মওকুফ করা যাবে। আয় খাত বিকলন ও নিয়মিত ঋণে সুদ মওকুফ করার নিয়ম নেই।

তবে এস আলম ও নাসা গ্রুপের এ ধরনের ঘটনা না ঘটলেও তাদের সুদ মওকুফ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নিয়ে এ সুবিধা দেওয়া হয়।

জনতা ব্যাংক থেকে বিসমিল্লাহ, এননটেক্স ও নাসা গ্রুপের ৪ হাজার ২২৪ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা দেওয়ার সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আব্দুছ ছালাম আজাদ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গত ২৩ জুন তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ঋণ আদায়ের জন্য সুদ মওকুফ সুবিধা দেওয়া হয়। সুবিধা নিয়ে নাসা গ্রুপ ঋণ পরিশোধ করেছিল। এননটেক্স গ্রুপ থেকে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। আর বিসমিল্লাহ গ্রুপও কিছু টাকা দিয়েছিল। বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পরে বিসমিল্লাহ ও এননটেক্স গ্রুপের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে।

এদিকে জনতা ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার বলেন, এসব সুদ মওকুফ সুবিধা দেওয়া হয় তিনি এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি এননটেক্সের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। আর নাসা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান সুদ মওকুফ-পরবর্তী সমুদয় পাওনা শোধ করে এই ব্যাংক থেকে চলে গেছে।

জানা গেছে, ন্যাশনাল ব্যাংকের দুটি শাখায় এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ১৩টি ঋণ হিসাব ছিল। এর মধ্যে গুলশান শাখায় এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের ৭১৫ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখার গ্রাহক এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির ৪৫৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের ৩২২ কোটি ৭৭ লাখ, এনএএফ ট্রেডিংয়ের ২৪৯ কোটি ৯৬ লাখ, আদিল করপোরেশনের ১৮৫ কোটি ২৩ লাখ, পুষ্টি ভেজিটেবল ঘির ১৫৮ কোটি ৬ লাখ, ফেয়ারি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ১২২ কোটি ৮৭ লাখ এবং এস আলম ব্রাদার্সের ৭৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা মওকুফ করা হয়।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তৌহিদুল আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, সে সময়ে তিনি এ ব্যাংকে ছিলেন না। ফলে এ বিষয় তার জানা নেই।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা ৭টি চিঠি দিয়ে সুদ মওকুফের অনাপত্তি দিয়েছে। প্রতিটি চিঠিতে বলা হয়, কোনো অবস্থায় বিদ্যমান ঋণের আসল স্থিতি মওকুফ করা যাবে না। সুদ মওকুফের পর অবশিষ্ট বকেয়া স্থিতি ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। যে বছর সুদ মওকুফ কার্যকর হবে সেই বছর ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করতে হবে। অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আলোচ্য ঋণ অধিগ্রহণ করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে সব মিলিয়ে ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে মওকুফ হয় ১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে সুদ মওকুফ হয়েছিল ৫ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে মওকুফ হয় ১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। তবে এননটেক্স গ্রুপের ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা এবং বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৬০৪ কোটি টাকা সুদ মওকুফ কার্যকর না হওয়ায় সে তথ্য এখানে নেই।