আন্তর্জাতিক : মুক্তিপণ দিয়ে সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে এক মাস পর মুক্ত হলেন কেএসআরএম গ্রুপের এসআর শিপিং কোম্পানির জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিক। তাঁরা এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পথে। সবাই অক্ষত আছে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ।
তবে মুক্তিপণের টাকার অঙ্ক নিয়ে মুখ খুলছে না জাহাজের মালিকপক্ষ। কেউ বলছে ৫০ লাখ ডলারে জিম্মিদের ছেড়ে দিয়েছে দস্যুরা। কেউ বলছে, টাকার অঙ্ক আরও কম হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও মুক্তিপণের বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকার কথা জানিয়েছেন খোদ নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ।
সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পান্টল্যান্ড মিররের প্রতিবেদনে মুক্তিপণের পরিমাণ ৫০ লাখ ডলার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫৫ কোটি টাকা। এ সংবাদটিকে তারা ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করেছে। মালিকপক্ষের আরেকটি সূত্র মুক্তিপণ বাবদ দেওয়া টাকার অঙ্ক আরও কম বলে উল্লেখ করেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সংশ্লিষ্ট দুজন জলদস্যুর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দিয়ে এমভি আবদুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে মুক্ত করা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে আব্দিরশিদ ইউসুফ নামে এক দস্যুর বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘দুই রাত আগে আমাদের কাছে টাকা পৌঁছানো হয়। আমরা টাকাগুলো জাল কি না তা যাচাই করেছি। এরপর সরকারি বাহিনীর নজর এড়িয়ে আমাদের গ্রুপগুলোর মধ্যে টাকা বণ্টন করা হয়েছে।’
৫৫ কোটি টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়ে সোমালি সংবাদমাধ্যমের তথ্য উদ্ধৃত করে প্রশ্ন রাখলে জাহাজ মালিকপক্ষের মিডিয়া উপদেষ্টা মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিপণের বিষয়ে কোনো কিছু বলার নেই। মুক্তিপণের বিষয়টি কৌশলগত কারণে আমরা বলতে পারব না। আমাদের নাবিকেরা মুক্ত হয়েছেন—এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’
তবে তুলনামূলক কম সময়ে জিম্মি জাহাজ ও নাবিক উদ্ধারের বিষয়টিকে বড় অর্জন হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ, সাধারণ বড় জাহাজ ও বড় ধরনের মুক্তিপণের বিষয়ে লম্বা সময় দেনদরবার করতে হয়। এতে চার মাস আবার বা ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত সময় লাগে। দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়ে অনেক সময় জাহাজ পরিত্যক্ত হয়। এমভি আবদুল্লাহর ক্ষেত্রে মাত্র ৩৩ দিনে মুক্তি মিলেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একই কোম্পানির আরেক জাহাজ জাহান মণি ও এর ২৬ নাবিককে সোমালি জলদস্যুদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৪ বছর আগের সেই অভিজ্ঞতা এবং এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সর্বোচ্চ আন্তরিকতার কারণেই এত তাড়াতাড়ি জিম্মি সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে।
একই কথা বলেছেন জাহাজ মালিকপক্ষের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলামও। তাঁর মতে, জাহাজ ও ২৩ নাবিক জিম্মি হওয়ার শুরু থেকেই আমরা জিম্মিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছি। পাশাপাশি সরকারি তরফেও দুহাতে সহযোগিতা পেয়েছে কেএসআরএম গ্রুপ। তা ছাড়া ১৪ বছর আগে সোমালি দস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহান মণি জাহাজ উদ্ধারের অভিজ্ঞতা এ ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে। এ কারণে জাহান মণি ১০০ দিনে উদ্ধার হলেও এমভি আবদুল্লাহর ক্ষেত্রে লেগেছে ৩৩ দিন।’
গতকাল শনিবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যার আগে ছোট আকারের উড়োজাহাজ থেকে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর পাশে ডলারভর্তি তিনটি ব্যাগ ফেলা হয়। এর প্রায় ৮ ঘণ্টা পর মুক্ত করা হয় জাহাজটিকে। মুক্তিপণের অঙ্ক সম্পর্কে সোমালিয়ার দস্যু, মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপ এবং লন্ডনভিত্তিক জাহাজের বিমা কোম্পানি ছাড়া আর কেউ জানবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে মালিকপক্ষ এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি।
তবে সোমালিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পান্টল্যান্ড মিররের এক্স হ্যান্ডলে বলা হয়েছে, ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ নেওয়ার পর জলদস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে। আরেক সংবাদমাধ্যম ডেইলি সোমালিয়া অনলাইনের টুইটেও একই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জিম্মি করার ৯ দিন পর তারা যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করে। ১৪ বছর আগে একই মালিকের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণিকেও একইভাবে মুক্ত করে কেএসআরএম গ্রুপ। জিম্মি সমস্যার সমাধানের পর আজ রোববার ঢাকাস্থ নিজের সরকারি বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ বলেন, ‘এত অল্প সময়ের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ফয়সালা করা নজিরবিহীন। নববর্ষের প্রথম দিনে আমরা আনন্দিত। শুধু তাদের আত্মীয়স্বজনই নয়, পুরো দেশবাসী খুবই আনন্দিত, আমরা আমাদের নাবিকদের মুক্ত করতে পেরেছি।’
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |