প্রচ্ছদ জাতীয় এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল তিনজন, জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

এমপি আনারের সঙ্গে ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল তিনজন, জানা গেল চাঞ্চল্যকর তথ্য

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়ে নিখোঁজের ৮ দিন পর কলকাতার একটি এলাকা থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মকর্তারা কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্লাট থেকে বুধবার (২২ মে) সকালে তার মরদেহের খণ্ডিত কয়েকটি অংশ উদ্ধার করেছে।

পরে দুপুরে ধানমণ্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনজনকে বাংলাদেশ পুলিশ আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে’।

তিনি বলেন, ‘তদন্ত চলছে, যারা যারা এ খুনের সাথে জড়িত সবার বিষয়ে জানতে পারবো। ভারতের পুলিশও সহযোগিতা করছে। আমাদের পুলিশ অত্যন্ত দক্ষ। তদন্ত শেষ হলে এ খুনের মোটিভ কী, সবকিছু বিস্তারিত দিতে পারবো আমরা।’

এর আগে কলকাতা বিধান নগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মানব শ্রিংলা বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাবচালক জানিয়েছে ১৩ই মে যে ব্যক্তিকে সে গাড়িতে তুলেছিল তাকে এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে নামিয়ে দেয়।’

এমপি আজীম নিখোঁজের ঘটনায় কলকাতা সংলগ্ন সিঁথি পুলিশ স্টেশনে একটি জিডি করা হয়। সেখানকার এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন, সঞ্জিভা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটের ভেতরেই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তিনি জানিয়েছেন, সেখানে রক্তের দাগ ও অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে। ১৩ই মে ওই এমপির সাথে তিনজন সেখানে ঢুকেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তারা একেকজন পৃথক পৃথকভাবে ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছে। ১৫ই মে একজন, ১৬ই মে আরেকজন এবং ১৭ই মে আরেকজন বের হয়েছেন সেখান থেকে। তিনজনের মধ্যে একজন মহিলাও ছিলেন।

বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। এটা মার্ডার, খুন হয়েছে। এর নেপথ্যের বিষয় আপনাদের জানাবো।’

‘যাদের আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের নেপথ্য কারণ জানা যাবে। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই জানাচ্ছি না। সব উদ্ধার করবো আমরা’ বলেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট ইউনিটের কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ‘তদন্তে নেমে তারা প্রথমে এমপি আনোয়ারুল আজীমকে বহনকারী ক্যাবচালককে আটক করেন। সেই ক্যাবচালক তাদের জানিয়েছেন, আজীমকে তার গাড়িতে তোলার পর আরও তিনজন গাড়িতে ওঠেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী। পরে এই চারজন কলকাতা নিউটাউনের ওই বাড়িতে যান।

এটিএফ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে পুরুষ দুইজন বাংলাদেশে ফিরে যান। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হলে তারা দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের দেয়া তথ্য কলকাতার পুলিশকে জানানো হয়। এরপরেই এমপি আনোয়ারুল আজীমের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ।’

এর আগে ২০শে মে আনোয়ারুল আজীমের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করেছিল। তারা জানতে পেরেছে কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউমার্কেট এলাকায়। এরপর ১৭ই মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারের কোনও জায়গায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই তথ্য পেয়েছে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ, এমনটাই জানিয়েছিলেন উপ-দূতাবাসের এক কর্মকর্তা, যিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।

কলকাতার উত্তর শহরতলি বরাহনগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম, সেই গোপাল বিশ্বাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে, ১৩ই মে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেছিলেন আনোয়ারুল আজীম, সেটির চালকের সন্ধান পেয়েছে বলেই স্থানীয় পুলিশের তরফে তাকে জানানো হয়েছে।

‘পুলিশের কাছে আমি নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলাম। তারা ওই গাড়িটিকে খুঁজে বার করেছে আর চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ওই চালক নাকি পুলিশকে জানিয়েছেন যে সংসদ সদস্যের সঙ্গে একজন বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন। এদের দুজনকে তিনি কলকাতা সংলগ্ন নিউ টাউন এলাকায় ছেড়ে দেন ১৩ই মে’।

এর বাইরে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ সংসদ সদস্যের ব্যাপারে আর কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।