প্রচ্ছদ সারাদেশ এখনো রহস্যের জট খোলেনি মালা খানের অফিসের সেই গোপন কক্ষের

এখনো রহস্যের জট খোলেনি মালা খানের অফিসের সেই গোপন কক্ষের

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস্ (বিআরআইসিএম) এর বিদায়ী মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের অফিসের গোপন কক্ষের সন্ধান মিলে। তখন এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হয়, গণমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

তখন বাংলাদেশি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর সাইন্সল্যাবে অবস্থিত বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টের ভবনের চতুর্থ তলায় অফিস ছিল মালা খানের। তার সেই অফিস কক্ষের সাথেই একটি গোপন কক্ষের সন্ধান পাওয়া যায়। কক্ষটি এমনভাবে তৈরি করা হয়; যেখানে একই কক্ষের দুইটি দরজা। দুইদিক থেকেই প্রবেশ করা যায় সেখানে। শুধু তাই নয়; সেখানে পাওয়া যায় বিছানা, খাট, দুটি বালিশ, ফ্যাগনেন্সি টেস্টকিড এবং শারীরিক সম্পর্কজনিত বিভিন্ন দ্রব্যাদি এবং অনৈতিক কাজের নানা উপকরণ। সরকারি অফিসে এমন গোপন কক্ষ কাণ্ডে হতবাক হন নেটিজেনরা। ফলে তার বিরুদ্ধে সরকারি অফিস কক্ষে অনৈতিক কর্মকাণ্ডেরও অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে বিক্ষোভও করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পিয়ন থেকে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরে মহাপরিচালক। অফিসের কর্মকর্তারা সবকিছুই আঁচ করতে পারলেও এতোদিন কেউ মুখ খুলেননি।

প্রতিবেদনের ভিডিওতে অফিসে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মালা খানের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, মালা খানকে মাঝে মাঝে সেই গোপন কক্ষে যেতে দেখা যেত, অথবা হঠাৎ করে তার কক্ষে গেলে তাকে পাওয়া যেত না।

অফিসের সবাই এ বিষয়ে জানলেও এতদিন তারা মুখ বন্ধ রেখেছিলেন। মূলত মালা খানের অফিসের পাশে যে গোপন কক্ষটি ছিল, সেটিতে বিআরআইএমসি-এর তৎকালীন উপদেষ্টা রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরীও প্রবেশ করতেন।

শিরিন আক্তার নামে এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা সবকিছুই স্বামী-স্ত্রীর মতো দেখতাম; রবীন্দ্রনাথ রায় স্যারকে অনেক সময় খালি গায়ে দেখেছি। কিন্তু আমরা কোনো কিছু বলতে পারতাম না।

অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও বলেন, মাঝে মাঝে তারা উপদেষ্টা রবীন্দ্রনাথ রায়-এর কক্ষে গেলে তাকে বিব্রতকর পোশাকে দেখতে পেতেন। উক্ত গোপন কক্ষটি রবীন্দ্রনাথ রায় এবং মালা খানের দুই কক্ষের মাঝখানে অবস্থিত ছিল এবং দুই কক্ষ থেকেই সেখানে প্রবেশ করা যেত। তবে কক্ষটির প্রবেশপথ এমনভাবে দরজা দুটি সুসজ্জিত ছিল যে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় ছিল না যে সেখানে একটি দরজা রয়েছে। দরজা দুটি পারিবারিক ছবি দ্বারা সাজানো ছিল।

এছাড়াও, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ছাড়াও অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মালা খানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মালা খান অত্যন্ত ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত হন।

মালা খানের এমন গোপন কক্ষ কাণ্ডে বিস্মিত হয়ে ওই প্রতিবেদনের নিচে আফরান উদ্দিন চৌধুরী নামের একজন কমেন্ট করেন, ‘একজন বিজ্ঞানী মহিলা হয়ে কিভাবে এতো ছোট আবাসিক হোটেলের কামরা বানাতে পারে?’ আসাদ সুলভ নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘শালারা সরকারি প্রতিষ্ঠানে ও বেশ্যালয় বানাইয়া লইছে।’

রুবেল আজাদ নামে একজন লিখেন, ‘সব মন্ত্রী, সচিব, পুলিশ কমিশনার এর অফিস তল্লাশি করা হোক,এরকম আরো অনেক রুম বের হবে।’

ওইসময় ফেসবুকে মিঠু বিশ্বাস নামে একজন লিখেছেন, অন্য দেশের বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্র অথবা মহাকাশ গবেষণা- কত হাজার প্রকার গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থেকে আবিষ্কার করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে। আর আমাদের বিজ্ঞানীরা অদৃশ্য রোমান্স ঘর আবিষ্কার করেছে এরাও নোবেল পাওয়ার যোগ্য। এদেরকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হোক।

নিজ অফিসের ভিতরে গোপন কক্ষের বিষয়ে বক্তব্য নিতে একাধিকবার চেষ্টা করেও গণমাধ্যমের পক্ষে মালা খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলে কেটে দেওয়া হয়। পরে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে বিসিএসআইআরের মহাপরিচালক অনুপম বড়ুয়া রোববার দেশের প্রথম সারির একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণিত হওয়ায় পরিচালনা বোর্ড প্রাথমিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে রিট করে কর্তৃপক্ষের আদেশ স্থগিত করে স্বপদে এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তিনি। আগামী ২৮ অক্টোবর রিটটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে।’

সূত্র: জনকণ্ঠ