প্রচ্ছদ রাজনীতি একই সময় দুই শহরে গুলিবিদ্ধ! মামলা দুইটি, ভাষ্য ভিন্ন

একই সময় দুই শহরে গুলিবিদ্ধ! মামলা দুইটি, ভাষ্য ভিন্ন

গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে একই সময় দুই শহরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি করেছেন সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ সরকার নামের এক ব্যক্তি। একই ঘটনায় তিনি নিজে এবং অন্য একজন বাদী হয়ে দায়ের করেছেন দুটি পৃথক মামলা—একটি ঢাকায়, অন্যটি চট্টগ্রামে। ঘটনাস্থল ও সময় দুই মামলাতেই এক হলেও অবস্থান দুই শহরে, যা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ও বিতর্ক।

সাইফুদ্দীন ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির ছাত্র।

তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার কাচিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি সরকারের গেজেটভুক্ত অতি গুরুতর আহত আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচিত। তাঁর ডান চোখে গুলি লেগেছে বলে দুই মামলায় উল্লেখ আছে।
প্রথম মামলা দায়ের হয় ২০ মার্চ ২০২৫ ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে, যেখানে বাদী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি এম এ হাশেম রাজু।

অভিযোগ, গত বছরের ৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে ঢাকার পরীবাগে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন সাইফুদ্দীন। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সাংবাদিক, শিল্পপতি, অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ ২০১ জনকে আসামি করা হয়। আদালত শাহবাগ থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন।
অন্যদিকে, গত ১৭ জুন সাইফুদ্দীন নিজেই বাদী হয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ৪ আগস্ট সকালে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন এবং পরদিন ৫ আগস্ট ওয়াসা মোড়ে পুনরায় গুলিবিদ্ধ হন। এই মামলায় প্রধানমন্ত্রীসহ ১৬৭ জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে চারজন সাংবাদিকও রয়েছেন।
উল্লেখযোগ্য হলো—দুই মামলায় ভিন্ন ভিন্ন স্থানের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। ঢাকার মামলায় দেখানো ঠিকানা: ২৬/২ তৃতীয় তলা, তোপখানা রোড, ঢাকা-১০০০। চট্টগ্রামের মামলায়: শোলকবহর, আল আমিন হাউজিং, পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম।

এছাড়া ঢাকার মামলার তদন্তে শাহবাগ থানা পুলিশ সাইফুদ্দীনের কাছ থেকে এখনও কোনো মেডিকেল সনদ পায়নি। সনদ না থাকায় তদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া যায়নি।
মামলাগুলোতে গুরুতর অসঙ্গতি থাকায় আইনজ্ঞরা বলছেন, এটি মিথ্যা মামলা দায়েরের স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮২ ধারায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশ বা সরকারি কর্মচারীকে প্রভাবিত করলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আর ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২১১ ধারা অনুযায়ী, মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান বলেন, একই ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ দিয়ে মামলা করা হলে সেটা সুস্পষ্ট আইনবিরোধী। এমন ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী পক্ষ পাল্টা মামলা করতে পারে।

ঢাকার মামলার বাদী হাশেম রাজু বলেন, ঘটনার দিন সাইফুদ্দীন ঢাকায় আমার সামনেই গুলিবিদ্ধ হন। পরে আমি নিজে তাকে চট্টগ্রামে পাঠাই। মামলার ক্ষমতা আমাকে দিয়ে তিনি অ্যাফিডেভিট দেন। চট্টগ্রামের মামলা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।

সাইফুদ্দীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, কাউকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা করেননি। তদন্তেই সত্য উদঘাটিত হবে।

খুলশী থানার ওসি আফতাব হোসেন জানান, তদন্তে যদি প্রমাণ হয় মামলা মিথ্যা, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মুনসুর বলেন, মেডিকেল সনদ না পাওয়ায় এখনও আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া যায়নি।

একই ব্যক্তির একই সময় দুই শহরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবি ও মামলা দুটি ঘিরে ব্যাপক প্রশ্ন ও আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তেই জানা যাবে, এই অসঙ্গতির পেছনে কী আছে।

সূত্র : আমাদের সময়