সারাদেশ: মৌলভীবাজারের রাজনগরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ঘর নির্মাণে ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। ইট ছাড়াই মেঝে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়ে। ভেঙে যাচ্ছে টয়লেটের প্যান। এ ঘটনায় রাজনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী সুমন ও অফিস সহায়ক বিপ্লব রায়ের বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের মান্নান খান নামের এক ব্যক্তি। গত ১৪ নভেম্বর অভিযোগটি করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগরে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ পর্যন্ত ৩৬৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ের প্রথম ধাপে ৭০টি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৭৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা। উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাহপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, ৪৭টি ঘরে ইট ছাড়া ফ্লোর (মেঝে) ঢালাই দেওয়া হয়েছে। দেওয়ালে ফাটল। ২৫০ মিটার গাইড ওয়াল নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফ্লোর ভেঙে পুনরায় কাজ করানো হচ্ছে উপকারভোগীদের দিয়ে। কথা হয় ঘরের উপকারভোগী সন্ধ্যা রানী ও তার স্বামী গৌরাঙ্গের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘সঠিকভাবে ঘরের কাজ হয়নি। পলেস্তারা ধসে পড়ছে। দেওয়াল ফেটে গেছে।’
আকিল মিয়া, নেহার বেগম, খরকুন নেছা ও আব্দুল কাইয়ুমসহ উপকারভোগীরা জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রথমে ইট ছাড়া ফ্লোর ঢালাই দেওয়া হয়েছিল। যে কারণে ঘরে ওঠার আগেই ফ্লোর ভেঙে যায়। পরবর্তী সময়ে আমাদের দিয়ে ফ্লোর ভেঙে আবার কাজ করানো হচ্ছে। ইট, বালু ও পানি বহনের কাজও আমাদের দিয়ে করানো হয়।’ উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের করাইয়া গ্রামে দেখা যায়, সেখানেও ইট ছাড়া ঘরের ফ্লোর ঢালাই দেওয়া হয়েছে। টয়লেট ভাঙা, ঘরের চালে ব্যবহত কাঠ নিম্নমানের, আকারেও ছোট। দেওয়াল ফেটে গেছে। বন্ধ রয়েছে তিনটি টিউবওয়েল। অনেকে নিজ উদ্যোগে এগুলো মেরামত করেছেন।উপকারভোগী দুলবি বেগম, মৌলা মিয়া, কালাম মিয়া, আব্দুল মতিন, আফিয়া বেগম, মনির মিয়া ও সুমনা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের কষ্ট লাগবের জন্য ঘর দিয়েছেন। ঘর পেয়ে আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু ঘরে এসে দেখি নিম্নমানের কাজ হয়েছে। কেউ নিজে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবে না। তারা আরও বলেন, প্রতিটি ঘরের টয়লেট থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। বৃষ্টির দিন ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে যায়। বেশি ঝড়-তুফানের সময় ঘরের চাল উড়ে নিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক থাকে।
করাইয়া গ্রামে গাইড ওয়াল নির্মাণেও চরম অনিয়ম হয়েছে। একই অবস্থা উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের মধুর দোকানের ২১টি ঘরেও। এ বিষয়ে ঠিকাদার ফজলু মিয়া বলেন, ‘সুমন স্যারের (উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী) মাধ্যমে কাজ করেছি। উনি যেভাবে বলেছেন, সেভাবে করেছি। শ্রমিকদের মজুরি সুমন স্যারের কাছ থেকে নগদ এনেছি। চেকের মাধ্যমে কোনো টাকা পাইনি।’ রাজনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী সুমন আহমদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর বাস্তবায়ন আমার দায়িত্ব নয়। কর্তৃপক্ষ আমাকে কোথাও পাঠালে আমি দেখভাল করি। অনিয়মের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই।’ তৎকালীন উপজেলা প্রকৌশলী আকরাম হোসেন বলেন,
‘ইউএনও ও এসিল্যান্ড মাঝে মধ্যে সাইট ভিজিটে গেছেন। আমি যেখানে গেছি সেই ঘরগুলো দেখেছি ঠিক আছে। কিন্তু সব ঘর দেখা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি।’ সদ্যবিদায়ী রাজনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, শুরুর দিকে ঘরের কাজে নিম্নমানের সামগ্রীর ব্যবহার দেখে আমি নিষেধ করি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও বিষয়টি জানাই। কিন্তু আমার নিষেধ আমলে না নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অফিস সহকারী সুমনের মাধ্যমে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করান। এজন্য আমি দায়ী নই।’ জানতে চাইলে সদ্যবিদায়ী রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কর্মরত) ফারজানা আক্তার মিতা বলেন, ত্রুটি সমাধানের জন্য পিআইওকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বালু মাটিতে ভরাট করায় ঘরের ফ্লোর সামান্য ফেটে গেছে। এজন্য ভেঙে পুনরায় মেরামত করা হচ্ছে। সংস্কার কাজ এখনো চলমান।’‘উপকারভোগীদের দিয়ে কাজ করানো’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা স্বেচ্ছায় শ্রমিকদের সহযোগিতা করেছেন।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |