প্রচ্ছদ আর্ন্তজাতিক এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারকারী জাহাজের নজরদারি, কেমন আছেন নাবিকরা?

এমভি আবদুল্লাহ উদ্ধারকারী জাহাজের নজরদারি, কেমন আছেন নাবিকরা?

জাতীয়: ভারতীয় নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ যোগাযোগ করার পর থেকে অস্ত্রের মুখে আরও কড়া নজরদারি এবং চাপের মধ্যে আছেন এমভি আবদুল্লাহয় জিম্মি হওয়া নাবিকরা। তবে সবাই সুস্থ ও সশরীরে আছেন তা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাই হওয়ার খবর পেয়ে গত মঙ্গলবারই ভারতীয় নৌবাহিনী দূরপাল্লার মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্র্যাফ্ট এলআরএমপি পি-৮১ মোতায়েন করে। পরে ভারতীয় নৌবাহিনী একটি যুদ্ধজাহাজও মোতায়েন করে। এটি বৃহস্পতিবার থেকে জিম্মিসহ জাহাজটিকে নজরদারি করতে শুরু করে।

এ সময়ের মধ্যে উদ্ধারকারী এ জাহাজ এমভি আবদুল্লাতে থাকা সোমালীয় জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। তবে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা কথোপকথনে না গিয়ে সরাসরি ফাঁকা গুলি চালায় জলদস্যুরা। উদ্ধারকারী জাহাজের পক্ষ থেকে নাবিকদের ছেড়ে দিয়ে সশরীরে জাহাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয় জলদস্যুদের। তবে এর প্রত্যুত্তরে তারা এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন মো. আতিক উল্লাহ খানের মাধ্যমে উদ্ধারকারী জাহাজকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে তারপর সেখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব সরে পড়তে বলেন।

জিম্মি থাকা এক নাবিক তার পরিবারের কাছে এসব তথ্য পাঠিয়েছেন। আপাতত নাবিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে দূর থেকেই নজরদারি বহাল রেখেছে ভারতীয় উদ্ধারকারী নৌবাহিনী। পাশাপাশি আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের শেষ দিকে সোমালিয়ার জলদস্যুদের ছিনতাই করা আরেক পণ্যবাহী জাহাজ ‘এমভি রুয়েন’ থেকে ১৭ নাবিককে উদ্ধার করেছে ভারতীয় এ নৌবাহিনী। এ সময় ৩৫ জলদস্যুসহ জাহাজটিকে জব্দ করা হয়।

ফলে সবমিলিয়ে শংকায় আছেন এ মুহূর্তে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। তার প্রমাণ মিলে জিম্মিদের সঙ্গে তাদের অমানবিক আচরণের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে। শারীরিকভাবে কেউ এখনও বড় ধরনের কোনো নির্যাতনের শিকার না হলেও, জাহাজের এক বোর্ডিং রুমে অস্ত্রের মুখে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

অস্ত্রের ভয়ে পাশ ফিরে ঘুমানোর উপায় পর্যন্ত থাকে না অনেক ক্ষেত্রে। জাহাজে জিম্মি হওয়া নাবিকদের জন্য সব ধরনের চলাচলে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। ফলে জাহাজে অবস্থান করা জলদস্যুদের ভারী অস্ত্রশস্ত্রের মুখে এখন পুরোপুরি অসহায় এবং ক্ষণে ক্ষণে বিভিন্ন হুমকিতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নাবিকরা।

< জিম্মি একজন নাবিক তার পরিবারকে জানিয়েছেন, জলদস্যুরা বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজ কোম্পানিকে দ্রুত টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ওরা (জলদস্যুরা) বলেছে, আমাদের কোম্পানি বা সরকার যত দ্রুত টাকা দেবে, ওরা আমাদেরকে তত দ্রুত ছেড়ে দিবে।’

এছাড়া নাবিকদের সীমিত খাবার এবং পানিতেও ভাগ বসিয়েছেন জলদস্যুরা। জিম্মি হওয়ার দিন তাদের কাছে ২০-২৫ দিনের খাবার মজুত ছিল। পানি ছিল ২০০ টনের মতো। প্রতি বেলায় তখন প্রায় ৩০ জলদস্যু নাবিকদের সঙ্গে খাবারে ভাগ বসিয়েছিল। এ কারণে খাবার ও পানি দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাহাজের চিফ অফিসার আতিক উল্লাহ খান। ১০-১৫ দিনের মধ্যে এ খাবার আর পানি ফুরিয়ে গেলে আরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন সবাই, সেটাও স্পষ্ট বলেছেন এ নাবিক।

তবে শুক্রবার জলদস্যুদের নতুন দল জাহাজটির দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নাবিকদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। একটা ভীতি আর আশংকার পরিস্থিতিতে তাই দিন কাটছে জিম্মি এ নাবিকদের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লার কারণে জাহাজ বিস্ফোরণের শংকা।

আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে এ কয়লা নিয়ে যাওয়ার কথা দুবাইতে। আর কয়লা বোঝাই করার পর থেকে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় এ কয়লা পরিমাপ করার প্রয়োজন পড়ে। দাহ্য পদার্থ হওয়ায় এ কয়লা থেকে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয় এবং কমে যায় অক্সিজেনের পরিমাণ। তাই সামান্য আগুন বা একটু ফুলকির ছোঁয়ায় বিস্ফোরণে উড়ে যেতে পারে এ জাহাজ।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান বলেন, জাহাজের এ নৌপথে আবহাওয়া এমনিতেই প্রচণ্ড গরম। অত্যধিক গরম তাপমাত্রার কারণে এখানে ভ্যাপার উৎপন্ন হওয়া খুবই সহজ। তাই এই ভ্যাপার কী পরিমাণ উৎপন্ন হচ্ছে, তা মনিটর করা না হলে বা রক্ষণাবেক্ষণের যথেষ্ট সুযোগ না পেলে, জাহাজের নাবিকদের জীবন নিরাপত্তা নিয়ে শংকা কাটছে না।

এদিকে, জাহাজটি বারবার অবস্থান পরিবর্তনের খবরে আতঙ্কে আছেন জিম্মিদের পরিবার। জানা যায়, ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ১৫-২০ জনের নতুন আরেকটি দল জাহাজের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার পর থেকেই জাহাজের মালিকপক্ষ এবং সরকারকে চাপে ফেলতে নতুন সিদ্ধান্ত আসে এ জলদস্যুদের থেকে। শনিবার থেকে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় নাবিকদের পরিবারের সঙ্গে। উৎকণ্ঠা নিয়ে স্বজনরা তাই যোগাযোগ করছেন জাহাজের মালিকপক্ষের সঙ্গে।

উল্লেখ্য, কবির স্টিল রি-রোলিং মিলসের (কেএসআরএম) আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মনি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পায় ১০০ দিন পর। এছাড়া আরও অনেক জাহাজের বাংলাদেশি নাবিক ও ক্রু সোমালিয়ান জলদস্যুদের কাছে অতীতে জিম্মি হয়েছিলেন। তাদের কেউ ২০ মাস পর, কেউ ১০ মাস পর জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান।

প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে।