
মোবাইল ফোন সহজলভ্য হওয়ার পর অনেকেই এসএমএসের মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। কিন্তু এখন ফেসবুক, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে আসে ঈদের শুভেচ্ছা। গত শুক্রবার দুপুরে কথা হচ্ছিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী শহরের গণমোড় এলাকার পদ্মা কসমেটিকসের প্রোপ্রাইটর সুকুমার সাহার সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, প্রায় ৩৫ বছর ধরে কসমেটিকসের ব্যবসা করছেন। বর্তমানে দোকানে স্নো, পাউডার, সাবান, কাচের চুড়িসহ অন্তত দুই হাজার ধরনের পণ্য রয়েছে। নেই শুধু এক সময়ের ঈদকার্ড। ক্রেতা না থাকায় এখন ঈদকার্ডের খোঁজও রাখেন না।
কুমারখালী প্রধান শহরের সোনাবন্ধু সড়কের হলবাজার, গণমোড়, থানামোড়, পাবলিক লাইব্রেরি এলাকার অন্তত ২০টি কসমেটিকসসহ স্টেশনারি দোকান ঘুরে কোথাও ঈদকার্ড পাওয়া যায়নি।
ঈদকার্ড কি? কখনও দেখিনি। চিঠিও লেখা হয়নি কখনও বলে জানায় কুমারখালী আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। তবে ব্যতিক্রমও আছে। অনলাইনে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এবার বেশকিছু ঈদকার্ড কিনে গ্রামের বাড়ি কুমারখালী ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নূর ই সিয়াম উচ্চারণ। তিনি বলেন, ২০১৩ সালের দিকে চাচাতো বোন প্রথম ঈদকার্ড দিয়েছিল। এরপরে আর কাউকে ঈদকার্ড দেওয়াও হয়নি, নেওয়াও হয়নি। তবে এবার বেশকিছু কার্ড কিনেছি প্রিয়জনকে দেব বলে। পুরোনো এই সংস্কৃতি আবার ফিরিয়ে আনা উচিত।
ঈদকার্ডের মতোই হারিয়ে গেছে একসময়কার নস্টালজিয়া ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি। ঈদের আগে খ্যাতিমান বিভিন্ন শিল্পীর ঈদ অ্যালবাম এলে দোকানে দোকানে ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি কেনার ভিড় হতো। কোন শিল্পীর নতুন কী অ্যালবাম বের হয়েছে, তা নিয়ে খোঁজ নিতেন তরুণ-তরুণীরা। কিন্তু হাতে হাতে স্মার্টফোনের এই যুগে হারিয়ে গেছে সেই ট্রেন্ডও। জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছেন ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি ব্যবসায়ীরা।
৯০ দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অডিও ক্যাসেড, ভিসিডি ও সিডির জমজমাট ব্যবসা ছিল কুমারখালী পৌর মার্কেটের জাহিদুল ইসলাম মিঠুর। কিন্তু এখন আর তাঁর দোকান নেই। এখন কাপড়ের ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, বছর সাতেক হলো কাপড়ের ব্যবসা করছি। আগে অডিও ক্যাসেট, সিডি, ডিভিডি বিক্রি করতাম। ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই নানা বয়সী মানুষ ভিড় করত দোকানে নতুন অ্যালবাম কিনতে। কিন্তু মোবাইল ফোনের কারণে সেসব ব্যবসা হারিয়ে গেছে। পুরোনো সে দিনগুলো খুব মিস করেন। কিছুদিন আগে অচল ক্যাসেট-সিডি ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।