
ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’ জ্যামাইকায় আঘাত হানতে চলেছে। স্থানীয় সময় সোমবার বিকেলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮২ কিলোমিটার বেগে স্থায়ী বাতাসের সঙ্গে হারিকেন মেলিসা জ্যামাইকার দিকে ধেয়ে আসছিল। ধীর গতিতে অগ্রসর এই ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়টি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় হিসেবে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের (এনএইচসি) তথ্য অনুযায়ী, গ্রিনিচ মান সময় বিকেল ৬টা পর্যন্ত মেলিসাকে ‘বিপর্যয়কর’ ঝড় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি স্যাফির–সিম্পসন স্কেলের সর্বোচ্চ স্তর, অর্থাৎ ক্যাটাগরি–৫ হারিকেন।
এনএইচসি জানায়, মেলিসা সোমবার গভীর রাতে বা মঙ্গলবার ভোরে জ্যামাইকার ওপর দিয়ে বয়ে যাবে। এরপর এটি পূর্ব কিউবা অতিক্রম করে বাহামা ও টার্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপপুঞ্জের দিকে অগ্রসর হবে। ক্যারিবীয় সাগরের অস্বাভাবিক উষ্ণ জলে ধীর গতিতে অগ্রসর হওয়ায় ঝড়ের আকার ও শক্তি আরও বেড়ে গেছে। ফলে জ্যামাইকা কয়েক দিনের জন্য নজিরবিহীন ঝোড়ো বাতাস ও তিন ফুটের মতো ভারি বৃষ্টিপাতে পড়তে পারে।
বর্তমানে মেলিসার বাতাসের পরিধি জ্যামাইকার দৈর্ঘ্যের চেয়েও বেশি। দ্বীপটির প্রধান বিমানবন্দরগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি অবস্থিত, যা বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন। তিনি সতর্ক করেছেন, ঘূর্ণিঝড়টি কৃষিজমি, ঘরবাড়ি, সেতু, সড়ক, বন্দর ও বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে।
সরকারি নির্দেশ সত্ত্বেও অনেক স্থানীয় বাসিন্দা ঘর ছাড়তে অনিচ্ছুক। তবে প্রায় ২৮ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হোলনেস জানিয়েছেন, কোনো অবকাঠামোই ক্যাটাগরি–৫ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাত সহ্য করতে পারবে না।
স্যাফির–সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী, ক্যাটাগরি–৫ হলো সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের ধাপ। ঘণ্টায় ২৫২ কিলোমিটার বা তার বেশি গতির ঝড়কে এই ধাপে ধরা হয়। এমন ঝড়ে অধিকাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, ছাদ উড়ে যেতে পারে, দেয়াল ধসে পড়তে পারে এবং গাছ ও বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলো ভেঙে পড়তে পারে। এছাড়া এই ঝড়ের সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ভূমিধস বা টর্নেডোর মতো প্রাণঘাতী ঝুঁকি যুক্ত থাকে।
এনএইচসি ১৯৭৩ সাল থেকে এই স্কেল ব্যবহার করছে। এটি প্রণয়ন করেন প্রকৌশলী হারবার্ট স্যাফির ও আবহাওয়াবিদ রবার্ট সিম্পসন। হোলনেস জানিয়েছেন, সরকার যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিয়েছে। ৩৩ মিলিয়ন ডলারের জরুরি বাজেট রাখা হয়েছে এবং আগের বছরের ভয়াবহ হারিকেন বেরিলের ক্ষতির তুলনায় বেশি বিমা ও ঋণ সহায়তা প্রস্তুত রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়গুলো আগের চেয়ে দ্রুত শক্তিশালী হয়ে উঠছে। অ্যাকুওয়েদার–এর প্রধান আবহাওয়াবিদ জোনাথন পোর্টার বলেন, “দশ হাজারেরও বেশি পরিবার ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি গতির প্রবল বাতাস ও কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্রাণ পৌঁছানো কঠিন হয়ে যাবে।”
জ্যামাইকা প্রতি বছরই উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় ও হারিকেনের মুখোমুখি হয়। হারিকেন মৌসুম জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে, সাধারণত প্রতি বছর দ্বীপটিতে দুই থেকে তিনটি ট্রপিক্যাল ঝড় বা হারিকেনের প্রভাব পড়ে, তবে সরাসরি আঘাতের ঘটনা বিরল। ১৯৮৮ সালের পর থেকে জ্যামাইকাকে সরাসরি আঘাত করেছে মাত্র তিনটি বড় হারিকেন।
সূত্র : জনকণ্ঠ













































