প্রচ্ছদ জাতীয় ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া সেই মেয়েটিকে নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া সেই মেয়েটিকে নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

মা-বাবার নামে মামলা করে এই মুহূর্তে বেশ আলোচনায় আছেন মেহরীন আহমেদ নামে এক তরুণী। নিজের জীবনের জন্য মা-বাবাকে অভিযোগে জর্জরিত করে ক্যামেরার সামনে অনর্গল ইংরেজি ও অসংলগ্ন আচরণের মাধ্যমে সারা দেশের ‘টক অব দ্য টপিক’-এ পরিণত হয়েছেন রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া এ তরুণী। 

এবার সেই মেহরীনকে নিয়ে কথা বলেছেন জনপ্রিয় ইসলামি বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমাদুল্লাহ। 

সোমবার (১৪ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, এই বৃষ্টিস্নাত দিনে ইংলিশ মিডিয়াম পড়ুয়া আলোচিত সেই মেয়েটির বাবা-মার কথা ভাবছি। নিশ্চয় বুকে জমানো সবটুকু আবেগ, ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে তারা মেয়েটিকে বড় করছিলেন। 

শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেন, ছোটবেলায় মেয়েটি যখন জ্বরে পড়েছে, বাবা-মার অসংখ্য নির্ঘুম রাত নিশ্চয় মেয়ের শিয়রে বসে কেটেছে। মেয়েটি কোনো কিছু পাওয়ার আব্দার করলে বাবা-মা হয়তো হৃদয় উজাড় করে তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। নিজেদের কষ্টার্জিত উপার্জন নিশ্চয় তারা ব্যয় করেছেন মেয়েটির সুস্থ-সবল ও হাসি-আনন্দে বেড়ে ওঠার জন্য। নিজেদের চেয়ে মেয়েকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন সবকিছুতে।

তিনি লিখেন, মেয়ে বাবা-মার চক্ষু শীতলকারী সন্তান হবে— আর দশজন বাবা-মার মতো এমন স্বপ্ন তারাও নিশ্চয়ই লালন করতেন। কিন্তু কে জানত, জীবনের মাঝপথে এসে ডানাভাঙা পাখির মতো তাদের সকল আশা লুটিয়ে পড়বে মাটিতে!

জনপ্রিয় এ ইসলামি বক্তা লিখেন, সন্তানের করা মামলায় সেই বাবা-মাকে যখন জনাকীর্ণ আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল, অসংখ্য মিডিয়ার সামনে তীর্যক গলায় মেয়েটি  যখন বাবা-মাকে ক্রিমিনাল বলছিল, তাদের মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল? নিশ্চয় তারা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। বড় বেশি মায়া হচ্ছে ওই হতবাক বাবা-মার জন্য। 

তিনি লিখেন, আমরা প্রায় সকলেই ছোটবেলায় মা-বাবার শাসনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। এই পরিণত বয়সে এসে সেসব দৃশ্য যখন চোখের সামনে ভেসে ওঠে, বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ে হৃদয়, চক্ষু হয়ে ওঠে অশ্রুসজল। তাদের সেসব আদরমাখা শাসনই আমাদের আজকের সাফল্যের সিঁড়ি। আজ এই মুহূর্তে একটি কথা বড় বেশি মনে হচ্ছে, তাদের শাসন ছিল অন্যদের আদরের চেয়েও মূল্যবান, জীবনের পথ নির্দেশক। 

শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেন, আজকাল প্রায়ই সন্তানরা আমাদের স্বপ্নভঙ্গ করছে। এর দায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমাদের, মা-বাবাদের। পশ্চিমা সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা অনেক বেশি বস্তুবাদী, ভোগবাদী, আত্মকেন্দ্রীক ও ক্যারিয়ারিস্ট হয়ে উঠছি। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে ঈমান, আত্মপরিচয়, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে আমরা উপেক্ষা করছি। সন্তানের ক্যারিয়ার, ইহজাগতিক সাফল্যই আমাদের কাছে হয়ে উঠছে প্রধান অর্জন। ফলে একটা সময় আমাদের সন্তানরা হয়ে উঠছে স্বেচ্ছাচারী, উশৃঙ্খল, বেপরোয়া। যার সর্বশেষ পরিণতি আমরা দেখলাম, অধিকার খর্বের অভিযোগে বাবা-মার বিরুদ্ধে সন্তানের মামলা। এটাই বোধহয় সতর্কতার কফিনে শেষ পেরেক।

অভিবাবকদেরকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেন, এরপরও যদি আমরা না শুধরাই, পড়াশোনার পাশাপাশি সন্তানকে আত্মপরিচয় ও মূল্যবোধ না শেখাই, তবে আফসোস, হতাশা ও স্বপ্নভঙ্গের বেদনাই হবে আমাদের চিরসাথী। সেই দুর্দিন আসার আগেই আসুন সচেতন হই।