প্রচ্ছদ রাজনীতি আ. লীগ নেতার ভাগ্নের সঙ্গে টেন্ডার ভাগে এনসিপি নেত্রীর দর কষাকষি

আ. লীগ নেতার ভাগ্নের সঙ্গে টেন্ডার ভাগে এনসিপি নেত্রীর দর কষাকষি

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সবুর লিটনের এক ভাগ্নের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব সাগুফতা বুশরা মিশমার কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই অডিওতে টেন্ডার ও ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব নিয়ে দর কষাকষি করতে শোনা যায় এনসিপি নেত্রীকে।

অডিওতে মিশমাকে বলতে শোনা যায়, “টেন্ডার তো একদিকে না, টেন্ডার হাজার রকমের হতে পারে। এখন কোন ধরনের কাজ এক্সাক্টলি আপনি করছেন? কোনগুলো আটকে আছে? ওইটা জানলে আমি না হয় আপনার সঙ্গে কিভাবে আগাইতে পারি ওইটা বলতে পারব। সেটা পার্টনারশিপে, নাকি ফিফটি-ফিফটি, নাকি যেভাবেই হোক।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আপনার সঙ্গে কাজ করব বলি, আপনাদের হেল্প করব বলি, সেক্ষেত্রে আমারও তো একটা ক্লারিফিকেশন লাগবে। ওটা তো আপনারা এনশিওর করবেন।”

তার জবাবে আওয়ামী লীগ নেতার ভাগ্নে বলেন, “আপনি আসলে কী রকম চাচ্ছেন? মানে প্রফিট কী রকম চাচ্ছেন? আপনি আমাকে খুলে বলতে পারেন। সমস্যা নাই। আমি আপনার ভাইয়ের মতো। আমি চাচ্ছি, আপনি আমার ব্যবসাটা দেখলে বা টিকিয়ে রাখলে আমার কোটি কোটি টাকার ব্যবসাটা নষ্ট হলো না আরকি।”

মিশমা তখন প্রশ্ন করেন, “এখন টেন্ডার কি আপনার হাতে নাই? চলমান নাই?”

ব্যবসায়ী জবাব দেন, “টেন্ডার আমার হাতে আছে, কিন্তু আমি কমপ্লিট করতে পারছি না এনসিপির নেতাকর্মীদের কারণে।”

এর পর মিশমাকে বলতে শোনা যায়, “আমাদের তো অনেকেই আছে। অনেকেই অনেকভাবে কাজ করছে। এটা তো আসলে এড়ানো যায় না। সত্য কথা যেটা, সবাই সবদিকেই কাজ করতেছে।”

অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর চট্টগ্রামের রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনার ঝড়। এনসিপির সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে স্থানীয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে মিশমার এই কথোপকথনকে ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।

জানা গেছে, এর আগেও সাগুফতা বুশরা মিশমার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কিছু বিতর্কিত কর্মীকে পুনর্বাসনের অভিযোগ উঠেছিল। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে তার এক ঘনিষ্ঠ অনুসারীর চাঁদাবাজির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অন্দরমহলেও মিশমাকে একাধিকবার দেখা গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তখনও তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপি নেত্রী সাগুফতা বুশরা মিশমা গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা আমাদের কেউ করাচ্ছে। আমি নিশ্চিত আমাদের দলের কেউ আমার পেছনে লাগছে। যদি তার নাম জানতে পারি আমি ব্যবস্থা নেব।”

তিনি আরও বলেন, “অডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছড়ানো হয়েছে। আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই এটি করা হয়েছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক এই অডিও ফাঁস চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। শহরের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এনসিপির প্রভাব বাড়লেও দলের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং এ ধরনের বিতর্কিত ঘটনার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

অডিও ফাঁসের ঘটনাটি নিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকে একে “ব্যবসায়িক রাজনীতির নগ্ন উদাহরণ” হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন “এটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ”।

সূত্র : সময়ের কণ্ঠস্বর