
ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা হয়েছিল ৯০টি গরু। সেগুলো জব্দ করে টাস্কফোর্স। পরে ৮০ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করে স্থানীয় পাঁচজন ব্যক্তির হেফাজতে দেওয়া হয় সেগুলো। কিন্তু নিলামের দিন দেখা যায় ৯০টির মধ্যে ৭৬টি গরু বদলে ফেলা হয়েছে। এগুলো আকারে ছোট। বাছুর আকৃতির।
পরে নিলাম স্থগিত করে কমিটি। এই পাঁচ জিম্মাদারসহ ও গরু নয়ছয়ে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ জসিম গতকাল রোববার বিকেলে এই আদেশ দেন।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদেশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে পাঁচ জিম্মাদারসহ এর সঙ্গে জড়িত আরও কেউ থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এনামুল হক। জিম্মাদারদের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায়। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মী রয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদী থেকে অভিযান চালিয়ে একটি স্টিলের নৌকাসহ ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ৯০টি গরু জব্দ করে টাস্কফোর্স। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান। পরে সদর মডেল থানায় নিয়মিত মামলা করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুনামগঞ্জের নায়েব সুবেদার গিয়াস উদ্দিন। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের নির্দেশনায় গরুগুলো সাময়িক জিম্মা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দেওয়া দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা ওই পাঁচ ব্যক্তির কাছে।
পাঁচ জিম্মাদার হলেন দোয়ারবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বোগলাবাজার গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (মিন্টু), উপজেলার মিতালি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বোগলাবাজার গ্রামের বাসিন্দা সবির আহম্মেদ, স্থানীয় বালিছড়া গ্রামের বাসিন্দা যুবদল নেতা হারুনার রশিদ, স্থানীয় ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা যুবলীগের সদস্য নাজমুল হাসান ও দোয়ারাবাজার গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বাহার উদ্দির।
পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে জিম্মায় নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে গরুগুলো যথাযতভাবে পাননি। তিনি আদালতকে জানান, জিম্মাদারেরা গরুগুলো যথাযতভাবে তাঁর কাছে উপস্থাপন করতে পারেননি। তিনি তদন্ত করে জেনেছেন, জিম্মাদারেরা গরুগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে আদালত জিম্মাদারদের তলব করলে তাঁরা আদালতকে জানান, গরুগুলো যথাযতভাবে তাঁদের জিম্মায় আছে। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গরুগুলো নিলামে বিক্রি করে অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চাইলে আদালত সেগুলো নিলামের অনুমিত দেন।
গত ২৬ আগস্ট গরুগুলো নিলামের দিন ধার্য ছিল। সেদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে ৯০টি গরু উপস্থাপন করেন জিম্মদারেরা। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিলাম কমিটিকে জানান, উপস্থাপন করা ৯০টি গরুর মধ্যে ১৪টি ঠিক রয়েছে। বাকি ৭৬টি গরু বদলে ফেলা হয়েছে। জব্দ করা সময়ের ছবির সঙ্গে উপস্থাপন করা গরুর কোনো মিল নেই। উপস্থাপন করা গরুগুলোর আকার ছোট, উচ্চতা কম, বাছুর আকৃতির। পরে নিলাম কমিটির আহ্বায়ক সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন নিলাম স্থগিত করেন। এরপর এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে মামলার নথি সুনামগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়।
অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম নথি পর্যালোচনা করে গতকাল বিকেলে পাঁচজন জিম্মাদারসহ তদন্ত করে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তিন দিনের মধ্যে নিয়মিত মামলা দায়েরের জন্য সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে আদেশ দেন।
আদালত আদেশে বলেছেন, জিম্মাদারেরা গরুগুলো হেফাজতে নিয়ে সেগুলো বদলে ফেলে প্রতারণা করেছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন।