ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আসলে কোথায়- এ প্রশ্ন সর্বত্র। তিনি কোথায় আছেন, কী করছেন, সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে নানা গুঞ্জনও রয়েছে তাকে নিয়ে।
সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর দল ক্ষমতায় থাকাকালে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করতেন। বাহারি পোশাক পরে প্রত্যেক দিন ৪-৫টি কর্মসূচিতে হাজির হতেন। প্রায়ই তিনি বলতেন, কখনো পালিয়ে যাবেন না।
সেই ওবায়দুল কাদের ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে এবং একদম নীরব। তার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছেনা।
সর্বশেষ জানা যায়, ওবায়দুল কাদের ভারতের মেঘালয়ে আছেন। কিন্তু মেঘালয়ের একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে সেখানে তার অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কলকাতা কিংবা নয়াদিল্লিতেও নেই কাদের।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউ বলছেন, দুবাইয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। কারও দাবি, তিনি সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে পলাতক রয়েছেন। আবার কারও দাবি, সরকার পতনের পর তার অবস্থান ছিল যশোরে। সেখান থেকে অবৈধ পথে ভারত গেছেন তিনি।
আবার অনেকের ধারণা, ওবায়দুল কাদের পালানোরই সুযোগ পাননি, পলাতক রয়েছেন দেশেই।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুতির পর দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় হত্যা মামলাসহ ২ শতাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে কাদেরকে। গত দুই মাসে তার গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে কাদেরের স্ত্রীর ভাইকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করে পরে তাকে ছেড়েও দেওয়া হয়। সর্বশেষ (১১ নভেম্বর) ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আটক হয়েছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুল মতিন। খবরে প্রকাশ, তার তিন দিনের রিমান্ডে অবশ্য কাদেরের অবস্থান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ।
আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ওবায়দুল কাদের যে কোনোভাবে গণমাধ্যমের প্রচারের আলোয় থাকতে পছন্দ করতেন। কী পরিস্থিতিতে তিনি দীর্ঘ কয়েক মাস গণমাধ্যম ও নেতা-কর্মীদের থেকে দূরে আছেন, তা তিনিই ভালো জানেন। দেশে থাকা অনেক নেতা দলের সাধারণ সম্পাদকের অবস্থান জানার চেষ্টা করছেন। ভারত, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়ামসহ বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে থাকা নেতারাও ওবায়দুল কাদেরের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
প্রসঙ্গত, আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে ‘ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ দম্ভোক্তি করে ছাত্রদের বিক্ষুব্ধ করেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমানে পলাতক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শুধু তাই নয়, আন্দোলকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি।
ওই বক্তব্যের পর দল ও দলের বাইরে প্রচণ্ড তোপের মুখেও পড়েন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক। শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপট থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাতেও আন্দোলনের তীব্রতা কমেনি, বরং নির্বিচারে হত্যা ও দমনপীড়নের ফলে ছাত্রদের আন্দোলন শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।
এর আগে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে পালানোর পথ পাবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমরা পালাব না। প্রয়োজনে মির্জা ফখরুলের বাসায় গিয়ে উঠব। আমরা পালাতে জানি না। এই দেশে জন্ম নিয়েছি, এই দেশেই মরব। পালাব না। কোথায় পালাব? প্রয়োজনে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়ে উঠব। কি জায়গা দেবেন? না হলে ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়ি আছে না, ওই বাড়িতে গিয়ে উঠব।’
সরকার পতনের পর ওবায়দুল কাদেরের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় অতি সম্প্রতি ঠাকুরগাঁয়ে এক সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ওবায়দুল কাদের না পালিয়ে আমার ঠাকুরগাঁওয়ের বাড়িতে আসতে চেয়েছিলেন। এখন তিনি কোথায় পালিয়ে আছেন?
ফখরুল আরও বলেন, ‘এখন ঠাকুরগাঁওয়ে আছি, আমি আপনাকে (ওবায়দুল কাদের) আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |