ধর্ম ও জীবন: কেন জানি আমাদের আচার-আচরণ বদলে যাচ্ছে। মানুষ আজ সামান্য কিছুতেই একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ থেকে শুরু করে বড় ধরনের অন্যায় কাজে লিপ্ত হচ্ছে। মহানবি (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার কাছে উত্তম আচরণের চেয়ে অধিক ভারী কোনো বস্তু নেই, আল্লাহ পাকের কাছে কোনো ধর্মের ভালো বা মন্দ হওয়ার মানদণ্ড হলো-তার চরিত্র (আবু দাউদ)। মহানবি (সা.)-এর প্রকৃতিই এরূপ ছিল যে, তাঁর মাঝে সব চারিত্রিক উৎকর্ষতা চরম মার্গে পৌঁছে গিয়েছিল। তিনি হলেন মানবতার সর্বত্তোম আদর্শ। ইসলাম সম্মান, বিজয় ও ক্ষমতায়নের ধর্ম। করুণা, সহানুভূতি, নম্রতা ও বিনয়ের ধর্ম। সত্য, সততা, ন্যায় ও দৃঢ় বিশ্বাসের ধর্ম। উভয় জগতের সুখ, সাফল্য ও বিজয়ের ধর্ম। মহান আল্লাহ এ ধর্মের মাধ্যমে নবুওয়তের ধারা সমাপ্ত, বিভিন্ন ধর্মকে রহিত এবং এটিকে গৌরব ও পরিত্রাণের পথ, জান্নাতের চাবিকাঠি এবং এই জীবনে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, প্রতিনিধিত্ব ও সক্ষমতার মাধ্যম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ইমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদের জমিনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদের এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরে তাদের নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে, আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না।’ -সুরা আন নূর : ৫৫।
নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সর্বশক্তিমান ও নিয়ন্ত্রক। পূর্বের ও পরের সব ফয়সালা তার এবং তার কাছেই সমস্ত বিষয় প্রত্যাবর্তিত হয়। তার কথা পরিবর্তন করার কেউ নেই, কেউ তার আদেশকে টলাতে পারে না এবং তার আদেশ রদ করার কেউ নেই। তিনিই লিখে রেখেছেন তার দীন ও প্রিয় বান্দাদের জন্য বিজয় ও সাহায্য এবং তিনি স্বীয় বন্ধুদের বিজয় ও ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, ‘হে মুমিনরা! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাসমূহ সুদৃঢ় করবেন। আর যারা কুফরি করেছে তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংস এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন।’ -সুরা মুহাম্মাদ : ৭-৮। যারা আল্লাহর দীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তার প্রিয় বান্দাদের ওপর অত্যাচার করে তাদের জন্য তিনি লজ্জা, অপমান ও লাঞ্ছনা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এ মর্মে তিনি বলেন, ‘আর আমি ধ্বংস করেছি বহু জনপদ, যার অধিবাসীরা ছিল জালেম এবং তাদের পরে সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি। অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি টের পেল তখনই তারা সেখান থেকে পালাতে লাগল। (তাদের বলা হলো) পলায়ন করো না, বরং তোমাদের ভোগ-বিলাসিতায় এবং ঘরবাড়িতে ফিরে যাও, যেন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হয়। তারা বলল, হায়! দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম জালেম। অতঃপর তাদের এই বিলাপ চলতে থাকে আমি তাদের কেটে ফেলা শস্য ও নিভে যাওয়া আগুন সদৃশ না করা পর্যন্ত।’ -সুরা আল আম্বিয়া : ১১-১৫
আল্লাহতায়ালা মুমিনদের পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করতে বিভিন্ন বালা-মুসিবতে জর্জরিত করেন, তারপর তিনি তাদের ফলাফল দেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ কি মনে করেছে যে, আমরা ইমান এনেছি- এ কথা বললেই তাদের পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে? আর অবশ্যই আমি তাদের পূর্ববর্তীদেরও পরীক্ষা করেছিলাম, অতঃপর আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা মিথ্যাবাদী।’ -সুরা আল আনকাবুত : ২-৩। সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব ও পরীক্ষার সময়ে মুমিনদের বিজয় ধীর হতে পারে, সে সময় বিপর্যয় বড় হয়; দুর্দশা গুরুতর এবং পরিত্রাণ বিলম্বিত হয়। এমনকি হতাশা ও নিরাশা প্রবল হয়! অবশেষে আল্লাহর বিজয় আসে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নাকি তোমরা মনে করো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে অথচ এখনো তোমাদের কাছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতো অবস্থা আসেনি? অর্থ-সংকট ও দুঃখ-ক্লেশ তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল এমনকি রাসুল ও তার সঙ্গী-সাথী ইমানদাররা বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য অতি কাছে।’ -সুরা আল বাকারা : ২১৪।
হাদিসে এসেছে, হজরত সুহাইব বিন সিনান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা ভারি অদ্ভুত। তার সমস্ত কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কারো জন্য এ কল্যাণ লাভের ব্যবস্থা নেই। সে সুখ-শান্তি লাভ করলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর দুঃখকষ্টে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধারণ করে এও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’ -সহিহ মুসলিম। ইমান ও কুফরের মধ্যে লড়াই আল্লাহর একটি রীতি, আর আল্লাহর রীতিতে কোনো পরিবর্তন পাবেন না। তিনি বলেছেন, ‘আর তোমার রব ইচ্ছে করলে সমস্ত মানুষকে এক জাতিতে পরিণত করতে পারতেন, কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধকারীই রয়ে গেছে, তবে যাদের তোমার রব দয়া করেছেন, তারা ছাড়া। আর এজন্যই তিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তোমার রবের কথা চূড়ান্ত হয়েছে যে, ‘নিশ্চয়ই আমি জাহান্নাম ভরে দেব জিন ও মানুষ দ্বারা একত্রে।’ -সুরা হূদ : ১১৮-১১৯। ইসলামের সূচনাকাল থেকে কাফের ও শত্রুরা এই ধর্মকে টার্গেট করেছে। তারা শহর ও গ্রাম সর্বত্র তার জন্য অপেক্ষা করছে এবং দলবদ্ধভাবে ও বিশাল সংখ্যায় পরস্পরে মিত্র হয়েছে। কিন্তু মহান আল্লাহই তার দীন ও সৎকর্মশীল বান্দাদের রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন এবং তার শত্রুদের ওপরই মন্দের বৃত্ত নিপতিত করবেন। তিনি বলেছেন, ‘আর আল্লাহ চান যে, তিনি সত্যকে তার বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফেরদের নির্মূল করবেন। যাতে তিনি সত্যকে সত্য প্রমাণিত করেন এবং বাতিলকে বাতিল করেন, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।’ -সুরা আনফাল : ৭-৮ সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। তিনি জালেম কাফেরদের অবকাশ দেন, কিন্তু মজলুম ও নিপীড়িতদের পক্ষে প্রতিশোধ নেন। তিনি বলেছেন, ‘অতএব কাফেরদের অবকাশ দিন, তাদের অবকাশ দিন কিছু কালের জন্য।’ -সুরা আত তারিক : ১৭ আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি তাদের সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।’ -সুরা আরাফ : ১৮৩
কোরআন মাজিদে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ছেড়ে দাও আমাকে এবং বিলাস সামগ্রীর অধিকারী মিথ্যারোপকারীদের। আর তাদের কিছুকাল অবকাশ দাও। নিশ্চয় আমার কাছে রয়েছে শিকলসমূহ ও প্রজ্বলিত আগুন। আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকে যায় এবং যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ -সুরা মুযযাম্মিল : ১১-১৩ সুতরাং জালেম কাফেরদের ওপর আল্লাহর শাস্তি ও পাকড়াও মহান প্রজ্ঞার কারণে বিলম্বিত হয়, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা বা তাদের সম্পর্কে বিস্মৃতির কারণে নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আপনি কখনো মনে করবেন না যে, জালেমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফেল, তবে তিনি তাদের সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাদের চোখ হবে স্থির। ভীত-বিহ্বলচিত্তে ওপরের দিকে তাকিয়ে তারা ছুটোছুটি করবে, নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস। আর যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেদিন সম্পর্কে আপনি মানুষকে সতর্ক করুন, তখন যারা জুলুম করেছে তারা বলবে, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের কিছুকালের জন্য অবকাশ দিন, আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব এবং রাসুলদের অনুসরণ করব। তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই? আর তোমরা বাস করছিলে সেসব লোকদের বাসস্থানে, যারা নিজেদের ওপর জুলুম করত এবং তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কীরূপ করেছি এবং আমি তোমাদের জন্য অনেক দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছিলাম। আর তারা তাদের ষড়যন্ত্র করেছিল, আর আল্লাহর কাছেই তাদের ষড়যন্ত্র, যদিও তাদের ষড়যন্ত্র এমন ছিল যা দ্বারা পাহাড় অপসারিত হয়ে যায়। সুতরাং আপনি কখনো মনে করবেন না যে, আল্লাহ তার রাসুলদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।’ -সুরা ইবরাহিম : ৪২-৪৭।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |