হেড লাইন: আর কত ডান্ডাবেরি পড়তে হবে? বিরোধী দলের দমন নিপীড়ন সরকারি দলের নির্বাচন উপলক্ষে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং সহিংসতা বিভিন্ন মামালা দিয়ে বিরোধী দল বিএনপির আট হাজারের বেশি নেতা-কর্মী ও সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে এবং ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মীকে জেলে প্রেরণ করেন। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়ার সুবাদে বেশ কিছু ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, জামায়াতের নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজনের জানাজায় বিশেষ করে মা-বাবার জানাজায় ডান্ডাবেরি পরে উপস্থিত হতে দেখা যায় এবং ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় শেষ বিদায় জানায়। এই নিয়ে জনমনে বিভিন্ন প্রশ্ন বিস্তার করে। আর কত দিন এরকম ডান্ডা বেরি পড়তে হবে?
স্বাধীন হয়েছি সেই কবেই। কিন্তু বর্গী শাসনের কালা-কানুন জগদ্দল পাথরের মতোই চেপে আছে এখনও বুকের ওপর। খোদ আদালতের সামনেই নিত্য দৃষ্টিগোচর হয় এমনই একটি দৃশ্য। এটা হচ্ছে অভিযুক্তদের হাতে পায়ে পরানো ডাণ্ডা বেড়ি এবং আড়ুয়া বেড়ি। তথাকথিত আইন প্রতিপালনের নামে কখনো প্রতিহিংসাবশতঃ আবার কখনো অর্থোপার্জনের জন্য এইসব বেড়ি পরানো হয়। কারাগারে বন্দিদের শায়েস্তা করার জন্য রয়েছে নানাধরণের শাস্তির ব্যবস্থা। ডান্ডা বেড়ি এবং আড়ুয়া বেড়ি হচ্ছে এমনই দুটি শাস্তি। ডান্ডা বেড়ি হচ্ছে বন্দী বা বিচারাধীন অভিযুক্ত ব্যক্তির পায়ে মোটা লোহার রিং পড়িয়ে তাতে শেকল এঁটে তা ওই বন্দির হাতে ধরিয়ে দেয়া। কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময় পর্যন্ত তাকে এটি পড়ে থাকতে হবে। ওঠা, বসা, হাঁটা, চলা, ঘুমানো সবই এ বেড়ি পড়েই করতে হয় সংশ্লিষ্ট বন্দির। যারা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিতে অবাধ্য তাদেরকে দু’পায়ে রিংয়ের সাথে একটি একফুট লম্বা লোহার রড লাগিয়ে দেয়া হয়। এর ফলে বন্দি দু’পা একত্র করতে পারে না। তাকে হাঁটতে হয় দু’পা ফাঁক করে, ঘুমাতে হয় চিৎ হয়ে বা উপুড় হয়ে। এর নাম আড়ুয়া বেড়ি। প্রিয় পাঠক, এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন শাস্তির নামে, বিচারের নামে কি নির্যাতন চলে মানুষের ওপর। প্রসঙ্গত, আমাদের পবিত্র সংবিধানে মানুষকে নির্মম ও হিংস্র শাস্তি দানের বিপক্ষে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় বাবাকে শেষ বিদায় জানালো মির্জাগঞ্জে ছাত্রদল নেতা মো. নাজমুল হোসেন মৃধা। শনিবার বিকালে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সংক্ষিপ্ত সময় নিয়ে উপজেলার সুবিদখালী রই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বাবার জানাজার নামজে অংশ নেন তিনি। তার বাবা মো. মোতালেব মৃধা শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল শেবাচিমে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নাজমুল মৃধা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। জানাজা শেষে তাকে আবার পটুয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তার বাবা উপজেলার দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন। জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে মোতালেব মৃধাকে দাফন দেয়া হয়। নাজমুলের বড় ভাই মো. রাসেল মৃধা জানান, গত ২০শে ডিসেম্বর নাজমুলকে উপজেলার সুবিদখালী এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। পরে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। বাবার জানাজায় অংশ নিতে এবং শেষ দেখার জন্য বেলা একটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেন আদালত। জানাজার সময় হাতকড়া খুলে দিলেও পায়ের ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি পুলিশ। রাসেল মৃধা বলেন, আমার ভাই ছাত্রদলের রাজনীতি করার অপরাধে পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় তাকে বাবার জানাজায় অংশ নিতে হলো, এর চেয়ে দুঃখের, এর চেয়ে কষ্টের কী হতে পারে? ভাই আমার বাবার কবরে মাটিও দিয়ে যেতে পারলো না। প্যারোলের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় শুধু ভাইয়ের জন্য ছোট পরিসরে একটি জানাজা নামাজের আয়োজন করা হয়েছিল। পরে তাকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। মির্জাগঞ্জ থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, বাবার মৃত্যুতে তাকে পাঁচ ঘণ্টার জামিন দিয়েছে আদালত।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |