১২ বছর বয়স থেকে ১০০ বারের বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু পুলিশের কাছে থেকে কোনও সাহায্য পাননি বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের রচডেলের এক ভুক্তভোগী। সেখানকার সংঘবদ্ধ ধর্ষক দলের হাতে এমন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন রুবি (ছদ্মনাম)। তিনি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির নিউজ নাইটকে বলেছেন, পুলিশ তার গর্ভপাতের পর ডিএনএন টেস্টের জন্য ভ্রুণটি নিয়ে যায় তাকে না জানিয়েই।
দেশটির সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ম্যাগি অলিভার বলেন, রুবির নিপীড়নের ঘটনার আরও অনেক বছর পরে এসেও শিশুদের যৌন নির্যাতন দেশজুড়ে ঘটেই চলেছে। গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ যথাসময়ে ভুক্তভোগীদের সহায়তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় ‘‘গভীর দুঃখ’’ প্রকাশ করেছে। ২০০০ সালের পরবর্তী সময়টাতে দুর্বল পরিষেবা ‘‘খুবই দুঃখজনক’’ উল্লেখ করে যতদিন পর্যন্ত শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন দেশ থেকে উচ্ছেদ করা না যাচ্ছে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় বাহিনীটি।
রুবির চাওয়া, এরপরে যদি কোনও ভুক্তভোগী অভিযোগ জানাতে আসেন, তার কথাটা যেন শোনে পুলিশ। পুলিশের জেরার পর কাউন্সিলিং ব্যবস্থা থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা যায়, রচডেলের মেয়ে শিশুদের পুলিশ এবং স্থানীয় পরিষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই ‘‘পিডোফাইল গ্রুমিং গ্যাং’’ বা শিশু নির্যাতনকারীদের খপ্পরে পড়তে হয়েছে।
২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোট ১১১টি ঘটনা নিয়ে ওই পর্যবেক্ষণটি করা হয়। যাতে একের পর এক পুলিশের ব্যর্থতার নজির বেরিয়ে আসে। এখনও অন্তত এমন ৯৬ ব্যক্তির সন্ধান তারা পেয়েছেন; যারা ওই এলাকার শিশু ও কিশোরীদের জন্য হুমকিস্বরূপ।
রুবি (ছদ্মনাম) বিবিসিকে জানিয়েছেন, কীভাবে তার জীবনে নিপীড়নের অধ্যায় শুরু হয়েছিল। তাকে ও তার কয়েকজন বন্ধুকে কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি তাদের ফ্ল্যাটে পানাহার ও বেড়াতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তারা এই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়।
কয়েক সপ্তাহ এতেই সীমাবদ্ধ ছিলো ব্যাপারটা। ‘‘কিন্তু একদিন, আমরা যে ঘরে বসতাম সেখানে অন্য লোক আছে বলে জানায় তারা। আমাদেরকে ফ্ল্যাটের অন্য একটা ঘরে বসতে বলে,’’ যোগ করেন রুবি।
‘‘তারা আমাদের এক বোতল ভদকা দিয়েছিল। ফলে যখন আগের ঘরটাতে গেলাম ততক্ষণে আমরা সবাই প্রায় মাতাল। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন লোক আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং তারপর শুরু হল ধর্ষণ। একজন শেষ করে, তারপর আরেকজন আসে। সারা রাত এভাবে চলেছে।’’
সেদিনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চলতে থাকে বলে জানান রুবি। কারণ গ্যাংয়ের লোকজন নানা হুমকি দিতো এবং তিনি উপলব্ধি করেন তার আর এর থেকে বের হওয়ার কোনও উপায় নেই। রুবি বলেন, ‘‘তারা আমাদের নম্বর নিয়ে নিয়েছিল। স্কুলে আসতো, বাসার আশপাশে ঘোরাঘুরি করতো, খুঁজতো সবখানে এবং খুঁজে বের করে ফেলতো।’’
তিনি বলেন, চার বছরে সম্ভবত ১০০ বারের বেশি তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ওই পুরুষরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতো। ব্র্যাডফোর্ড, নেলসন, বার্মিংহাম, ব্ল্যাকপুল— গ্যাংগুলো সবখানে নিয়ে যেত আমাদের।
‘‘আমার আর কোনও বোধশক্তি ছিল না।’’
২০০৮ সালে রুবি একটা সেক্সুয়াল হেলথ ক্লিনিকে যান। আর কোথাও সাহায্য না পেয়ে এক ধরনের আকুলতা নিয়েই সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। ‘‘স্কুলে জানিয়েছিলাম, ফলে সোশ্যাল সার্ভিস জানতো আমাদের সাথে কী ঘটে চলেছে। কিন্তু কিছুতেই কিছুই হয়নি। ফলে একদিন সরাসরি সোশ্যাল সার্ভিসের অফিসেই যাই। কিন্তু তারা কিছু কনডম ধরিয়ে দিয়ে আমাদের বিদায় করে দেয়।’’
পর্যবেক্ষণে জানা যায়, রুবি ক্রাইসিস ইন্টারভেনশন টিমের কাছে তার ‘‘বয়স্ক বন্ধুদের’’ দ্বারা যৌন নিপীড়নের কথা জানিয়েছিল। ওই বছরই তাকে একটা চাইল্ড প্রটেকশন প্ল্যান বা শিশু সুরক্ষা পরিকল্পনার আওতায় আনা হয়। ২০০৯ সালের শুরুতে পুলিশ তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে।
১৩ বছর বয়সে রুবির একবার গর্ভপাত হয়। সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করার জন্য সেই ভ্রুণ পুলিশ ফরেনসিক তদন্তের জন্য নিয়ে যায়। পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করা হয়, রুবিকে না জানিয়ে ভ্রুণ নিয়ে যাওয়াটা অগ্রহণযোগ্য। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে ভ্রুণের সৎকার করতে চাইলে সেটা তাদের জানাতে বলেছিল রুবিকে।
২০১০ সালে রুবি একজন সমাজকর্মীকে জানান, সেই সময়ে তিনি ছয়জন এশীয় ব্যক্তির হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সোশ্যাল সার্ভিসের কাছে প্রায় ৬০ জন লোকের কথা উল্লেখ করে তাদের হাতে ব্যাপক শিশু নির্যাতনের কথাও বলেছিলেন তিনি।
দুই বছর পর তার নিপীড়নকারীদের একজনকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের লক্ষ্যে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু মাত্র চার বছরের মাথায় রুবি তাকে একটি স্থানীয় দোকানে দেখতে পান। ওই আসামির কারাগার থেকে মুক্তির বিষয়েও তাকে অবগত করা হয়নি বলে জানান তিনি।
‘‘আমি দ্বিতীয়বার ফিরে তাকালাম, কারণ বিশ্বাস করতে পারছিলাম ঠিক দেখছি কি না। তারপর, যখন বুঝতে পারলাম সে সত্যিই ওখানে আছে, আমি ছুটে বেরিয়ে যাই,’’ যোগ করেন তিনি।
‘‘একছুটে বাড়িতে গিয়ে ঢুকি। পরের তিন মাস আর বাড়ি থেকে বের হইনি।’’
রুবি বলেন, তিনি পুলিশকে ফোন করেছিলেন। তারা কোনও পদক্ষেপই নেননি উল্লেখ করে নিজের ভয়াবহ মানসিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন তিনি। পর্যালোচনা বলছে, ওই ৯ বছরের বেশি সময় ধরে শিশুদের ওপর চলা যৌন নিপীড়নের বিষয়ে গ্রেটার ম্যানচেস্টার পুলিশ-জিএমপির করা তদন্তগুলোই বলে দেয়, বাহিনীটি এই অপরাধকে খুব একটা আমলে নেয়নি।
২০১২ সালে জিএমপি থেকে পদত্যাগ করে এসব অপরাধের ভিক্টিমদের জন্য একটা ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন ম্যাগি অলিভার। তিনি বলেন, শিশুদের যৌন নিপীড়ন এখনও রচডেলে ঘটছেই। তার ফাউন্ডেশন ‘‘সারা দেশেই’’ এমন অনেক ভুক্তভোগী পেয়েছে।
‘‘আজকের ভুক্তভোগীরাও আমাকে একই কথা বলছে, যা রুবি এবং অন্য শিশুরা আমাকে সেই ১২ বছর আগে বলেছিল,’’ অলিভার বলছিলেন। অবশ্য এসব অভিযোগের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন এসেছে। জিএমপির একজন প্রতিনিধি বলেছেন, তারা এখন ভিকটিমদের কথা কীভাবে শুনতে হয় এবং তাদের প্রতি সংবেদনশীল হতে হয় সেটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। বিবিসি বাংলা
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |