প্রচ্ছদ হেড লাইন ‘আমার পাগল ছেড়াডারে কাডাকুডি কুইর‌্যা ভিত্তের সব নিছে গা’

‘আমার পাগল ছেড়াডারে কাডাকুডি কুইর‌্যা ভিত্তের সব নিছে গা’

অন্য সবার মতোই স্বাভাবিক ছিলেন সেলিম। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করতেন। চৌদ্দ বছর আগে হঠাৎ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন। এরপর বাড়িতেই থাকতেন। মাস ছয়েক আগে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। অনেক জায়গায় খোঁজ করেও তার কোনো সন্ধান মিলছিল না। কিন্তু ঢাকায় মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে পরিবার শনাক্ত করে সেলিমকে। ঢাকায় গিয়ে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয় তাকে। কিন্তু সেলিমের পেটে বড় কাটা দাগ নিয়ে নানা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ মানসিকভাবে অসুস্থ হলেও শরীরে কোনো কাটা দাগ ছিল না সেলিমের। পরিবারের ধারণা, সেলিমের পেট কেটে কিডনি বা অন্য কোনো অর্গান শরীর থেকে খুলে নেওয়া হয়েছে।

শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ সেলিমের শরীরের কিডনি রয়েছে কী না তা জানতে শনিবার ময়মনসিংহ শহরের একটি বেরসরকারি প্রাইভেট হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়। তবে সেই রিপোর্ট এখনও মেলেনি। তবে এরই মাঝে মিল্টন সমাদ্দারের কেয়ার থেকে সেলিমের কিডনি খুলে নেওয়ার তথ্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাকে দেখতে বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। সেলিম মিয়ার (৪৫) বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বড়হিত ইউনিয়নের বৃপাঁচাশি গ্রামে। ওই গ্রামের হাসিম উদ্দিনের ছেলে তিনি। গত ছয় মাস আগে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখে গত ৭ মে মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার থেকে পুলিশের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করেন সেলিমের মা রাবিয়া খাতুন, চাচাতো ভাই স্থানীয় গ্রাম পুলিশ আব্দুর রশিদ। পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়, উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই লাল কাপড় পরিহিত কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে উঠছেন সেলিম। ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন। কোমড়ের দু’পাশে বড় কাটার দাগ রয়েছে। সেখানে এখনও ক্ষত শুকায়নি। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, মিল্টন সমাদ্দারের কেয়ারে থাকাকালীন অমানবিক নির্যাতন করা হয়ে থাকতে পারে। সেখানে লাল কাপড় পরিহিত কেউ থাকে প্রচুর মারধর করতো, যে কারণে লাল কাপড় পড়া কাউকে দেখলেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন সেলিম।

পরিবারের অভিযোগ, সেলিমের কিডনি খুলে নিয়েছে মিল্টন সমাদ্দার। যে কারণে তিনি এখন মৃত্যু পথযাত্রী, শরীরে এসেছে পানি। বাড়িতে নেওয়ার পর সেলিমের অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার ঈশ্বরগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয় কিডনি আছে কিনা জানতে। কিন্তু পেটে যন্ত্রণা হওয়ায় পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। পরে শনিবার বিকেলে ময়মনসিংহ শহরের প্রান্ত ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয় সেলিমকে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করানো হয়। প্রান্ত ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে সেলিমকে দেখেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. সৈয়দ হাসানুল হক আকাশ। তিনি বলেন, রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

সেলিমের মা রাবিয়া খাতুন বলেন, সেলিম মানসিকভাবে অসুস্থ থাকলেও শরীরে কোন কাটাছেঁড়া ছিলো না। পরিকল্পিতভাবে আমার ছেলেকে নির্যাতনের পর তার কোমড়ের দু’পাশে কাটাছেঁড়া করে কিডনি খুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। বাবা হাসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার পাগল ছেড়াডারে কাডাকুডি কুইর‌্যা ভিত্তের সব নিছে গা। আমার ছেড়াডার অবস্থা অহন বেগতিক। যে এইরমডা করছে হের বিচার করুক আল্লায়।’ সেলিমের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমার দুই মেয়ের মধ্যে একজনকে বিয়ে দিলেও অপরজন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পাগল হলেও তিনি আমার স্বামী। তার যে অবস্থা করেছে কহন মারা যায় ঠিক নাই। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী চিকিৎসা করাবো।’ বড়হিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক ভূঞা মিলন বলেন, ‘সেলিমের শারীরিক অবস্থা গুরুতর। তাকে দেখতে গিয়ে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছি।’ ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে সেলিমের খোঁজ নিতে বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। শরীরে বড় কাটার দাগ রয়েছে। কিডনি খুলে নেওয়া হয়েছে কিনা তা চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ঢাকায় হওয়া মামলাতেই এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে।