
ইসলামিক আলোচক আবু তোহা মোহাম্মদ আদনানের পারিবারিক জীবন নিয়ে বিতর্ক যেন কিছুতেই থামছে না। আদনানকে নিয়ে এবার তাঁর স্ত্রী সাবিকুন নাহার আরো বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন। জানালেন, ত্বহা একাধিক মেয়ের সঙ্গে কথা বলতেন। এ ছাড়া এয়ার হোস্টেজ নারীর ছবিও প্রকাশ করেছেন সাবিকুন নাহার।
এক ফেসবুক পোস্টে সাবিকুন নাহার এসব বিস্তারিত লিখেছেন।
সোমবার ওই পোস্টে সাবিকুন নাহার লিখেছেন, ‘ভক্তগণ যে আমাকে অপরাধী সাব্যস্ত করতে আমার অতীত জীবনের ছেড়ে আসা ভুল, অন্যায়, কলঙ্ক যা-ই বলি না কেন সামনে এনে একজন বর্তমান অপরাধীকে নিষ্কলুষ বানাচ্ছেন— এটা কি আহকামুল হাকিমিনের কাঠগড়ায় আদৌ মার্জনীয়? আপনারা তো আমার অতীতের অপবিত্রতা দ্বারা তার বর্তমান অপবিত্রতা ঢাকতে চাচ্ছেন মাত্র। তবে সত্যের প্রভাব তো দুর্দমনীয়, ওপরে যা-ই বলা হোক না কেন।’
তিনি বলেন, ‘ভক্তরা বলছেন ৩-৪ আরো বিয়ে করবে সমস্যা কোথায়? আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন— কত মেয়ের সাথে তিনি কথা বলবেন? পিক নেবেন, একান্তে বসবেন, প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের নামে ইন্টারভিউ নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করবেন, কত মেয়ের সাথে আর কত বছর? অতঃপর ছুলাছা রুবায়ার দাবি থেকে এ যোগাযোগ, অনুভূতির আদান-প্রদান হালাল থেকে হারাম হবে? কত বছর পর? কত মেয়ের সাথে সময় কাটানোর পর?’
বেবি দেখাশোনা করার জন্য এক মেয়ে রাখা হয়েছিল, তাঁর সঙ্গে ত্বহার যোগাযোগ ছিল অভিযোগ করে সাবিকুন নাহার বলেন, ‘দুই বছর আগে রংপুরের এক মেয়ের সাথে অনেক দিন হোয়াটসঅ্যাপে কানেক্ট থেকে আমার বেবির দেখাশোনার নাম করে মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলা, পিক নেওয়া, অতঃপর আমাকে প্রেসার দেওয়া— এ মেয়েকে আসার সময় বাসায় নিয়ে আসবে সে তার সাথে। আমার বেবি দেখাশোনা করবে এ অজুহাতে আমাকে পাগল করা। তার বিশ্বস্ত ইয়ামিন জানে না? আমি কি ওদের প্রমাণ দিইনি? মেয়েটার পিক চেয়ে নিল, তার প্রশংসা করল, নিজ চোখে দেখলাম এবং আবার বিয়ে করতে কেমন পাত্র চায় জিজ্ঞেস করল। এরপরও অনেক দিন এ মেয়ের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রাখল। ইয়ামিন নিজ মুখে বলেছে, ‘আপু, মেয়েটাকে সরাইছি, ভাই আমার ওপর নারাজ।”
এর ভেতরেও আছে কত কথা কয়টা লিখব।
আরেক মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন জানিয়ে সাবিকুন নাহার বলেন, ‘এর পরপরই শুরু করল আরেক মেয়ে নিয়ে। মেয়ের মা ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী, তার মায়ের জন্য টাকা উঠায় আর এ সুবাদে মেয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ। তবে এখানে ঐ মেয়েটার ইনটেনশন খারাপ ছিলো না, তবে আদনান জনাবের উদ্দেশ্য ছিলো মেয়েটা অবিবাহিত, অল্প বয়স, কোনোভাবে তার বাগে আনা যায় কিনা। মেয়েটাকে নিজ দায়িত্বে ঢাকায় আনা, সব খরচ বহন করা, আমাকে কোনো একসেস না দেয়া। আমি চেয়েছিলাম, ওকে যদি হেল্পই উদ্দেশ্য হয় তবে মেয়েদেরকে আমাকে ডিল করতে দাও। কিন্তু না, সে এ মেয়ের সাথে কত কত মাস যোগাযোগ রেখেছে। সে কি আস্ফালন ছিলো এ মেয়েকে পাওয়ার পর তার কতটুকু লিখে বোঝানো যায়!’
তৃতীয় আরেকটি মেয়ে প্রসঙ্গে বলেন, ‘তারপর আবার আরেক মেয়েকে মাদ্রাসা করে দেয়া। সঙ্গত কারণেই এ মেয়ের ডিটেইলস বললাম না, স্থানও না। কারণ মেয়েটার বিয়ে হয়ে গিয়েছে জানি। এদের সবার সাথে তার হালাল সম্পর্ক! ওকে মেনেও যদি নেই, তবুও কি তার এভাবে মেয়েদের সাথে নানা ইস্যু ক্রিয়েট করে জুড়ে থাকা উচিত? যেখানে সে নিজেই বলে তার নারী সংক্রান্ত সমস্যা আছে, মাহরাম দেখলেও প্রবলেম হয়।’
‘শোয়াইব হুজুর আছে একজন, তাকে সে এসব শেয়ারও করেছে। আমি জানি, কেউই মুখ খুলবেনা, কারণ আপনাদের গালি খেতে চায় না কেউ। প্রয়োজনে সত্য মরে যাক, মিথ্যার জয় হোক, তবুও তারা কেউই কথা বলবেনা। রাস্তায় মেয়ে দেখলেও মাশাল্লাহ বলেন ত্বহা, এমনই অভিযোগ সাবিকুন নাহারের। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় মেয়ে দেখলে আমি পাশে থাকা সত্ত্বেও সুবহানাল্লাহ, মাশাল্লাহ বলা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা তার এ ক্যারেক্টার এর কথা কে না জানে। কিন্তু কেউ বলবেনা। তাঁর নজর হেফাজত না করার কারণে সে ধ্বংস হয়েছে। আমি আমার পরিবার, আমার গোছানো সংসার, আমার দুটো বেবি ছন্নছাড়া আজ। আমি তার জন্য কি করিনি! ৫ বছরের সংসার জীবনে আজও তাকে আমি নতুন বরের মতো ট্রিট করি, সাজাই। এতোকিছুর পরও সব ঠিক হয়ে যাওয়ার আশায় রঙিন রেখেছিলাম। তার কেনো কারো প্রেম লাগবে, প্রেমিকা লাগবে! সে মানুষকে বলে আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি, এর উত্তর কি জানেন! ‘যে পুরুষের চোখে নতুন নারীর লিপ্সা, তার জন্য নিজ স্ত্রীর অগাধ ভালোবাসাই যন্ত্রণা।”
কাজের মেয়ের সঙ্গেও কথা বলেন জানিয়ে সাবিকুন নাহার বলেন, ‘পাশে থাকতে চাওয়াই যন্ত্রণা, কাছে থাকাই যন্ত্রণা। দ্যান আরেক মেয়ে আমার মাদ্রসায় নার্সারির বাচ্চাদের পড়ায়, আবার আমার বাসায়ও কাজ করে। সে মেয়েকে টাকা হাদিয়া দেয়, কিছু লাগলে তাকে বলতে বলে, তার নাম্বার দেয়। তারপর থেকে শুরু হয় এ মেয়ের সাথে। মেয়ে কাজে আসলে তার অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। আমি কিছুটা গেস করি, কিন্তু বাদ দেই। অতঃপর একদিন আমার সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় আমাকে আদনান সাহেব থ্রেট দেয়, ‘এমন কিছু করবো যা কল্পনাও করতে পারবা না।’ আমি কিছুটা সন্দেহ করি। তারপর তার ফোনে দেখি এ কাজের মেয়ের সাথে ১৮ মিনিট কথা, এ মেয়ের আবার সেকি অভিমান ভরা মেসেজ, যেখানে লেখা ‘আমি আপনার উপর রাগ আছি।’ আরো স্ক্রল করে উপরে যাই দেখি—’
তিনি বলেন, ‘আমার মোহাব্বত, আমার পুরো কলিজাটা, আমার মানুষটা এ কাজের মেয়েকে মেসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি কোথায়, দুইদিন ধরে দেখিনা।’ ভাবতে পারেন আমার কেমন লাগে! সে মেয়ে আবার তাকে মেসেজ দেয়, ‘মাদ্রাসায় চাপ আছে, দুইদিন তাই আসবোনা, কেনো কোনো দরকার ইত্যাদি।’ কি পরিমাণ ঘনিষ্ঠতা, ফ্লেক্সিবল কথাবার্তা, আমারই ক্ষেত্র বিশেষ সাহস হয় না তার সাথে কথা বলতে, যেখানে। তারপর যখন আমি এগুলো সব দেখে ফেললাম, তখন আমার সামনেই আবার মেয়েকে কল দিলো। সে মেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কোথায় আপনি?’ আদনান সাহেব ঝাড়ি দিলো, ‘কেনো কি দরকার।’ মেয়ে ভয়ে কিছুনা বলে ফোন রেখে দিলো, আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি এত্তো আঘাত পেলাম, মেয়েটাকে ডেকে এনে ২টা চড় লাগালাম, বাসা থেকে বের করে দিলাম, মাদ্রাসা থেকেও।’
আরো অনেক মেয়ের সঙ্গেই যুক্ত থাকেন ত্বহা, এমনই অভিযোগ সাবিকুন নাহারের। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সমস্যা যখন ঘরে, তখন আর কতজনকে বিদায় করা যায়! আমার থেকে ফোন দূরে রাখা শুরু, ফোন ধরা নিষেধ, এমনকি এমনই আচরণ করছে যে আমি রীতিমতো তার ফোনের দিকে তাকানোও নাজায়েজ ভাবতে শুরু করি। ভয় করি। এমন আরো যে কতো কতো মেয়েকে মাদ্রাসা করে দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়, দিয়ে এঙ্গেজ থাকে। কথা বলে। মাঝে আরো কতো সিরাত প্রতিযোগিতা, টিচার নিয়োগ ইত্যাদির নামে আরো কতো মেয়ের সাথে তার কথা। তার পর্যন্ত ছেলেরা পৌঁছাতে পারেনা। তবে মেয়েরা ঘনিষ্ঠও হতে পারে। আপন ভাইবোনের মতো হালাল সম্পর্ক এগুলো তাইনা! এরই ধারাবাহিকতায় লাস্ট সিরাত সিজন ৩ এর বিজয়ী মেয়েকে তার অনলাইন প্রতিষ্ঠানে উস্তাযা বানিয়ে দিলো এবং এ মেয়েকে চোখে রাখা শুরু করলো।’
আরেক অভিযোগে বলেন, ‘মেয়েটা ডিভোর্সী, সাথে আবার আলেমাও তার পছন্দের লিস্টে থাকলো, কথাবার্তা চালালো বহুমাস থেকে। আমার উপর অবর্ণনীয় মানসিক নির্যাতন চলতে থাকলো। দোষ খুঁজে ফায়ার হয়ে রংপুর গেলো, এবারই বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে আসবো এগুলো বলে আমার থেকে বিদায়ও না নিয়ে চলে গেলো। আমি মায়ুস হলাম, মেনে নিলাম, ওকে আলহামদুলিল্লাহ। এসে নিজেই বলা শুরু করলো, ‘জান, আমার তোমাকে ছাড়া চলবেনা।’ এ মেয়েটার সাথে প্রতিদিন ২০/৩০ মিনিট করে কথা বলে দেখলাম, পছন্দ হয়না। প্রায় ১০ দিন পর এসে এগুলো বলে আমাকে আবার কাছে নিলো। অথচ এদিকে কাহিনি হলো এ মেয়েকে বাদ দেয়ার পেছনে রিজন আমি নই বরং এয়ার হোস্টেস। তারপরের ঘটনা আপনারা জানেন। আমি নিচে পিক আর ভিডিও দিচ্ছি, আপনারাই বলবেন এভাবে যোগাযোগ করা কি তবুও লিপ্সা নয়? ছুলাছা রুবায়া বলে বলে আর কত। এ মেয়ে আদনান সাহেব সেন্টারে গেলেই এসে দেখা করা শুরু করলো, নিয়মিত সাক্ষাৎ, ফোনে কথা বলা, পিক আদান-প্রদান, আগের প্রেমিকা, এক ঘণ্টা একা অফিস রুমে অবস্থান, প্রত্যক্ষদর্শী তার সিরাতের অফলাইন স্টুডেন্টরা জানালো এ মেয়ে বসে বসে ফোনে চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত, আবার উস্তাদের ওয়াশরুম ব্যবহার করা।’
কমেন্ট বক্সে স্ক্রিনশটের ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এসব ছাড়াও আমার সাথে শেয়ার করা তার নিজ অভিব্যক্তি, বলে বলে আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা, এ মেয়ে তার কতো ঘনিষ্ঠ বোঝানো, সে এ মেয়ের কোথায় কোথায় তিল আছে তা অব্দি জানা। এগুলো আমাকে দিয়ে ডিল করাতে চাওয়া, আমি কি তার বড় বোন নাকি মা ছিলাম? সেতো আপাদমস্তক আমার রঙ ছিলো, আমার গোটা দুনিয়া। পিকে নিজেরাই দেখে নিন, বই নিয়ে স্টুডেন্ট হয়ে সিরাতের ক্লাসে অংশগ্রহণ করা কি বিয়ের জন্য কথা বলতে আসার নমুনা? মেয়েদের সামনে মুখ ঢেকে রাখে আর সরাসরি আদনান সাহেবের সামনে মুখ খুলে বসে থাকে। শেষ সারির রঙিন বোরকায় আসা মেয়েটিই তার প্রেম।’
অনলাইনে এসব বলার বিষয়ে সাবিকুন নাহার বলেন, ‘আমি কেনো এ প্ল্যাটফর্মে এগুলো বললাম? কিছুদিন আগে এক স্টুডেন্ট তার নামে অভিযোগ এনেছিলো হাদিয়া দেয়ার ব্যাপারে গড়িমসি নিয়ে। সে বোন কেনো এনেছিল, এটা একমাত্র ভুক্তভোগীই জানেন। সে অনেক মাস ধরে তাদের দারস্থ হচ্ছিলেন, সমাধান হয়নি। এখানে বলা মাত্রই তাদের টনক নড়ে, তারা অনলাইনের মানুষ, অনলাইনেই কেবল পাওয়া যায়। তেমনই আমি দুই বছর যাবৎ সমাধানে আসতে চাচ্ছি, আমাকে সাহায্য করা হয়নি, বসা হয়নি। কথা বলতেও সুযোগ দেয়নি, বড়রা ডাকলেও যায়নি। এবার ইনশাআল্লাহ সমাধান হবে।’
সাবিকুন নাহার বলেন, ‘তাছাড়া এটা ছাড়া তিনি কখনোই আর শোধরাবে না, সমস্যা সলভও হবে না। এবার হয়তো তিনি সবচেয়ে পরিশুদ্ধ মানুষদের একজন হবে। শুধু আমার ভাগ্যেই এ পরিশুদ্ধ মানুষটি হলো না। অন্য কেউ তার জীবনে সুখে থাক। আলহামদুলিল্লাহ। আমি কি চাই? আমি এসব ধারাবাহিক যন্ত্রণায় ক্ষতিগ্রস্ত, আমার সময়, আমার মা’মুলাত ক্ষতিগ্রস্ত। সব বরবাদ হয়ে যাক, আমার পরকাল বাকি থাক। আমার আর কোনো চাওয়া, আশা, আকাঙ্খা, রঙ কিচ্ছু নেই। আমি আর তার চেহারা দেখতে চাই না, আমার চেহারাটাও আর দেখাতে চাই না।’
সূত্র: সময়ের কণ্ঠস্বর