প্রচ্ছদ জাতীয় আপাগো, আপনার তুলনা আপনিই আপা!

আপাগো, আপনার তুলনা আপনিই আপা!

প্রিয় হাসু আপা, আজ মনটা বড্ড আনচান আনচান করছে। শুনলাম মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আপনার বিরুদ্ধে রায় দেয়া সমাগত। কিন্তু কি রায় হবে? যে অপরাধে আপনি অভিযুক্ত এমন অপরাধে তো আপনার আমলে বেশ ক’জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এমনকি যাবজ্জীবন দণ্ডকে ফাঁসি দেয়ার জন্য গণজাগরণ মঞ্চ হয়েছে শাহবাগে। যেখানে আপনার পরোক্ষ সমর্থন ছিল। আর আপনার দলের নেতারা তো প্রকাশ্যে এই গণজাগরণ মঞ্চকে সমর্থনই করেননি সেখানে গিয়ে ভাষণও দিয়েছে। তাই কি রায় হবে এ নিয়ে বড়ই দুশ্চিন্তায় আছি। এমন মন খারাপের মধ্যে একটি খবর এলো। যাকে ভালো খবর বলতে পারেন। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধনের খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে- যাতে কোনো কোনো দল বেকায়দায় পড়তে পারে। এতে প্রথমত বড় ও ছোট দলগুলো যেখানে গিয়ে হোঁচট খাবে সেটা হলো- আরপিও সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী জোট হলেও প্রার্থীদের নিজ দলের প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করায় ছোট দলগুলো কোনো বড় দলের সঙ্গে জোট করলেও নিজেদের প্রতীক নিয়ে লড়তে হবে। নির্বাচন করতে হবে। এতে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখবে এ বিধানটি। তবে বিনা বিতর্কে একটি ভালো বিধান হলো- অনুমোদিত খসড়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীকেও যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না।

আপা, আপাগো মনে পড়ে গেল- আপনার আমলের নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে নির্বাচনী কাজে লাগাতে কতো আকুতি মিনতি করেছে কিছু দল। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট কাকুতি করে আপনার সম্মতি পেয়েছিল। তবে, সে সময় সেনাবাহিনীকে আপনি ডিসির অধীনে দিয়েছিলেন। কোনো কেন্দ্রে সেনাবাহিনী নিজ উদ্যোগে যেতে পারবে না। পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। আপাগো নিজে কতো না খেলা খেলেছেন। এ দেশের মানুষ কতো খেলা দেখেছে আপনার? সত্যিই আপনার তুলনা শুধু আপনিই। আপা আরেকটি কথা-ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করতে কতো প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। কোথাও কোথাও ইভিএমে নির্বাচনও করেছেন। অথচ ইভিএমে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে কতো গলা ফাটিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। আপনি চোখ বুজে ইভিএমকে সাপোর্ট করেছেন। এখন এই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারসম্পর্কিত যেসব বিধান ছিল, সেগুলো বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচন করতে পারবেন না, এটিও যুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, যারা নির্বাচন করবেন, তাদের এফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে যত আয় ও সম্পত্তি আছে, তার সবকিছুর বিবরণ দিতে হবে। এবং তা অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। জেলা নির্বাচনী কার্যালয় জেলার নির্বাচনী কর্মকর্তা ঠিক করবেন।

সংশোধিত আরপিওতে ‘না’ ভোটের বিধান রাখা হয়েছে। যা আপনি বাতিল করেছিলেন। এ ছাড়া যে সংসদীয় আসনে একজন প্রার্থী থাকবেন, সেখানে ভোটাররা ‘না’ ভোট দিতে পারবেন। আর কোনো সংসদীয় আসনে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। আরপিও সংশোধনের ফলে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। তবে জোটের হয়ে নির্বাচন করলে নিজ দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে-এটা কেমন যেন খটকা লাগিয়ে দিলো মনে। এমনটা করার পেছনে কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা তা দিনে দিনে পরিষ্কার হবে। আরপিওতে এটা আনা হয়েছে কার দাবিতে সেটাও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া এমন দাবি কোনো দল তুলেছে বলেও মনে পড়ছে না। যাই হোক আপা, আপনাকে জানালাম বিষয়গুলো। অদূর ভবিষ্যতে নির্বাচন করলে প্রয়োজন পড়বে।

আপা আপাগো, আপনাকে না করেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিবেন না। কিন্তু আপনি দিয়েই যাচ্ছেন। আর আপনার বক্তব্য শুনে নিরীহ সমর্থকরা আওয়ামী লীগের পক্ষে স্লোগানে মাঠে নেমেছিল মঙ্গলবার। রাজধানী ঢাকায় ওই দিন কমপক্ষে এগারটি স্পটে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নেমেছিল। কিন্তু তা ছিল ক্ষণিকের। এই মিছিল করতে গিয়ে ১৩১ জনকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। আফসোস এখানে আপনি না হয় বলেছিলেন, ওরা কি বুঝে না আওয়ামী লীগ এখন আর আগের জায়গায় নেই। পাওয়ারে নেই। পাওয়ারে থাকতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বুক ফুলিয়ে নানা অপকর্ম করে গেছে। আবার এসব অপকর্মের দায়ভার বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেল ভরা হয়েছে।

হাসু আপা, দেশ আবার নির্বাচনমুখী হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশছাড়া। নিজেদের আকাম কুকাম নিয়ে নিজেরাই ভীত। তাই দেশ ছেড়েছেন। এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে এসব নেতা দেশেও আসতে পারবে না। আর আরপিও অনুযায়ী তারা তো নির্বাচনের অযোগ্য এখন। আপনিও একই কাতারে। আসলে যুগে যুগে রাজা-রানীরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। কেউ কেউ ধরা পড়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছে। রাজনীতিটাই বুঝি এরকম।

আপাগো এই মুহূর্তে আপনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় কী হয়? তা নিয়ে গোটা দেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। নিশ্চয় আপনি ভিনদেশ থেকে নজর রাখছেন। আর নজর রাখছেন বলেই দেশকে অস্থিতিশীল করার নির্দেশ দিচ্ছেন নেতাকর্মীদের। এই যে গত সপ্তাহব্যাপী বিমানবন্দরের ভিলেজ কার্গোসহ একাধিক জায়গায় আগুন লেগেছে এর জন্য মানুষ আপনি এবং আপনার দলের দিকে আঙ্গুল তুলছে। আমি বুঝি না ওরা কেন কিছু হলেই আপনাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করায়? এটা কি আপনার প্রতি জেলাসি থেকে? নাকি আপনাকে দোষী বানাবে বলে। কেউ কেউ বলেন, এর উত্তর নাকি একমাত্র আপনার কাছেই আছে? কি জানি, জানি না কিছুই।

লেখক: শামীমুল হক

সূত্র : বার্তা বাজার