রাজনৈতিক: বিএনপি’র সরকার বিরোধী আন্দোলনকে ব্যর্থ মনে করেন না দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। শাসক দল ও প্রশাসনের নানা নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেছেন, এসব মোকাবিলা করে বিএনপি যে শুধু ঐক্যবদ্ধ আছে তাই নয় বরং সাধারণ মানুষকেও সঙ্গে নিতে পেরেছে।
এটি বিএনপি’র বিরাট সফলতা। টকশোর আলোচিত মুখ রুমিন ফারহানা বলেন, একটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আরেকটা স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। যে সরকার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে টিকে আছে এবং একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো তাদের যার যার হিসাব নিকাশ থেকে এই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে। সে রকম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন এক হবে না। এ ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন দীর্ঘ হয়, আমাদের আন্দোলন দীর্ঘ হবে।
মিডিয়ায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এসব কথা বলেন। বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি, নিজের রাজনীতিতে যোগদানসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, বাংলাদেশে এখন কিছু কিছু বিষয় রাজনীতিতে খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
এটাকে আমি নিউ নরমাল বলি, গুম ফর এক্সাম্পল। ধরে নিয়ে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হত্যা করে ফেললো। এই বিষয়গুলো কিন্তু রাজনীতিতে ছিল না। আমি নিজে একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। প্রায় ১০০ বছরের রাজনীতির ইতিহাস আছে আমার পরিবারে। আমি এগুলো কখনো শুনি নাই।
ছাত্ররাজনীতি এবং বুয়েট প্রসঙ্গে রুমিন ফারহানা বলেন, ছাত্রলীগের উচ্চ পর্যায় থেকে নিম্ন পর্যায়ে সবাই নানা অপরাধে জড়িত। আপনি যদি বুয়েটের ঘটনাটা একটু লক্ষ্য করেন, দেখবেন যে সেখানে সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা তারা কিন্তু একেবারে ঐক্যবদ্ধ। একজন ছাড়া বাকি সবাই পরীক্ষা বর্জন করেছে। এবং সমস্বরে তারা একটা কথা বলেছে যে বুয়েটেকে রাজনীতির বাইরে রাখা হোক।
তারা ৩টি উদাহরণ এনেছে। বুয়েটের যে সনি হত্যা, দীপ হত্যা, আবরার হত্যা। ৩টা ঘটনা তারা উল্লেখ করে বলেছে রাজনীতি বুয়েটে ভালো কিছু বয়ে আনে নাই। আবরার হত্যাকাণ্ডটাকে আমি সনি হত্যাকাণ্ড থেকে আলাদা করে দেখতে চাই। আপনারা ভাবতেই পারেন যে সনি হত্যাকাণ্ড যেহেতু বিএনপি’র সময় হয়েছে সেজন্য। না সেজন্য না।
সনি হচ্ছে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে পড়ে নিহত হন। আর আবরার হচ্ছে ঠাণ্ডা মাথার একটা খুন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি নিরীহ ছাত্র যে কোনো রকম কোনো ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়, তাকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পিটিয়ে মেরেছে। তার মৃত্যু কনফার্ম করার পর তাকে ছাড়া হয়েছে। মানে কতোটা পৈচাশিক হলে এই ধরনের ঘটনা ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো যায়। এবং ঘটনার কারণটা কি?
কারণটা হচ্ছে আবরারের একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস। এখানে আরেকটা প্রশ্ন আমি করতে চাই শিবির, জামায়াত-বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি কোনো কিছু ট্যাগ দিয়ে কি আপনি একটা মানুষকে হত্যা করতে পারেন? বাংলাদেশের আইন কি আপনাকে সে অধিকার দেয়। আমি মনে করি একটা বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলবে সবচেয়ে ভালো বোঝে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকরা। তারা যদি মনে করে বুয়েটকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে, বুয়েট সেভাবেই চলবে।
বিএনপি’র নেতৃত্বে পরিবর্তন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রতিটি দলেই নেতৃত্ব আসে-যায়। নতুনরা সুযোগ পায়। এই ঘটনা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এটা শুধু বিএনপি’র প্রয়োজন আছে বা আওয়ামী লীগের প্রয়োজন আছে ব্যাপারটা সেরকম না। সকল দলেরই নেতৃত্বের পরিবর্তন আসে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নেতৃত্ব পরিবর্তিত হয়।
নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র অনেক নিষ্ক্রিয়-অনেকের এ ধরনের মতামত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা আমেরিকার সিদ্ধান্ত আমেরিকা কী করবে। আমেরিকা যখন ভিসা নীতি দিয়েছিল। সেটা কিন্তু কোনো দল আমেরিকাকে বলে দেয়নি। আমেরিকা তার নিজের হিসাব-নিকাশ থেকেই ভিসা নীতি দিয়েছিল। এরপরে এই দেশে নির্বাচনের নামে একটি মকারি হয়েছে। এরপর আমেরিকা কী করবে এটাও আমেরিকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। এখানে বিএনপি’র কিছু বলবার নাই।
রাজনীতিতে পটপরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখেন কি-না এ প্রশ্নের জবাবে রুমিন ফারহানা বলেন, সার্টেনলি। কেন দেখছি জানেন। দেখছি কারণ মানুষের ক্ষুব্ধতা চূড়ান্ত। এবং মানুষ যেকোনোভাবে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চায়। আমি যদি প্র্যাকটিক্যালি বলি, আমি যখন গণপরিবহনে উঠি, রিকশায় উঠি, সিএনজিতে উঠি মাঝে মধ্যে বাসে উঠি বোঝার জন্য। আমি দেখি চারপাশের মানুষ যারা একটু আমাকে চিনতে পারে দৌড়ে এসে বলে আপা এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো।
বাজারে যাই আমি সেখানে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আমাকে। অনেক সময় পারস্পারিক কনভারসেশনের মধ্যে মানুষের মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক আমি দেখি। আমার সঙ্গে কথা বলার সময় আস্তে কথা বলে ফিসফিসিয়ে কথা বলে কেউ লক্ষ্য করছে কিনা আবার এটাও দেখে। কিন্তু মানুষ ভয়ের সংস্কৃতি পছন্দ করে না এবং দীর্ঘদিন ধরে মানুষ এই সংস্কৃতি মেনে ও নেবে না।
আমি এই নির্বাচনের আগে এবং এর পরপর একটি কথা খুব স্ট্রংলি বলেছিলাম বাংলাদেশটাকে আওয়ামী লীগ এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছে যেটা আওয়ামী লীগ বনাম বাংলাদেশ। সরকার বনাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষ একদিকে আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক মানুষ একদিকে। সুতরাং এই আন্দোলন কিন্তু সাধারণ মানুষেরও আন্দোলন। তারা যতদিন পর্যন্ত সন্তৃক্ত না হবে, তাদেরকে গুলির ভয় ছাড়তে হবে। গুলি করবে, গুলির মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে, তুলে নিয়ে যাবে সেটা ফেস করতে হবে, তুলে নিয়ে গিয়ে বীভৎস টর্চার করবে সেটাও মানতে হবে। শত শত মামলা হবে সেটার সামনেও মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। এটা যতদিন পর্যন্ত মানুষ মেনে না নিবে এটা একটা দল বা একটা গোষ্ঠীর আন্দোলন করে এখানে সফল হওয়াটা খুব কঠিন। কারণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খেলা এই সরকারকে ক্ষমতায় রাখার পেছনে আছে। যেমন বেনজির। তার সম্পদের পরিমাণ শুনে আপনি থতমত খেয়ে যাননি! বেনজির একটা প্রতীক। যারা সুবিধাভোগী তারা যেকোনো মূল্যে সরকারকে রাখতে জান বাজি রাখবে। এখন বাকি জানবাজি রাখার দায়িত্ব বাংলাদেশের, বাংলাদেশের মানুষের।
প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও জনপ্রিয় সাইট থেকে হুবহু কপি করা। তাই দায়ভার মুল পাবলিশারের। এরপরও কোন অভিযোগ বা ভিন্নমত থাকলে আমাদেরকে জানান আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব সমাধান করে নিতে। |