প্রচ্ছদ অপরাধ ও বিচার আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে নিয়ে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুকে নিয়ে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

দেশজুড়ে : সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ‘সম্পৃক্ততা’ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ।

মিন্টু এই হত্যাকাণ্ডের অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কি না তা তদন্ত করে বের করা হবে বলেও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান হারুন। ডিবিপ্রধান বলেন, কিলার শিমুল ভূঁইয়া ও গ্যাস বাবুর জবানবন্দিতে আনার হত্যাকাণ্ডে মিন্টুর সম্পৃক্তার কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এ কারণে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাকে ব্যাপক আকারে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সেই কারণে আমরা তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করি।

তিনি বলেন, সাইদুল করিম মিন্টুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। তিনি আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কতটুকু জানেন, তার কী ধরনের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তিনি কি সরাসরি অর্থদাতা ও মদদদাতা ছিলেন কি না। তিনি গ্যাস বাবুর মোবাইল নিয়েছিলেন সেটাও জিজ্ঞেস করা হবে। কিলার শিমুল ভূঁইয়া ঢাকায় আসার পর কেন মিন্টুর প্রতিনিধি গ্যাস বাবু তার সঙ্গে দেখা করলেন, এটাও জানার প্রয়োজন।

আনার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট দিনের হেফাজতে পেয়েছে ডিবি। বৃহস্পতিবার আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় মিন্টুর আট দিনের ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন।

মিন্টুকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেন ডিবির সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। এর আগে আনারের চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নেমে কয়েক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে মিন্টুকে আটক করে ডিবি।

গত দুইদিন ডিবি কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় আওয়ামী লীগের এই নেতাকে। ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর পর তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়।

সাংবাদিকদের হারুন জানান, টাকা-পয়সার লেনদেন সঠিক কিনা, গ্যাস বাবুর মোবাইল নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন কি না, এছাড়া আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না- সবকিছু মিন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হবে।

হারুন বলেন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু রিমান্ডে রয়েছেন। গ্যাস বাবু স্বীকার করেছেন, আনার হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতকের সঙ্গে মিটিং এবং একাধিকবার দেখা করেছেন তিনি। আক্তারুজ্জামান শাহীনের পক্ষে কাজ করেছেন শিমুল ভূঁইয়া, অন্যদিকে সাইদুল করিম মিন্টুর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন গ্যাস বাবু।

গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি প্রথমে জানিয়েছিলেন মোবাইল হারিয়ে যাওয়ায় তিনি জিডি করেছেন। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মিন্টুর বুদ্ধিতে মোবাইল মিন্টুর কাছে দিয়ে তিনি থানায় হারানোর জিডি করেন। গ্যাস বাবু ও মিন্টুকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে আমরা বিস্তারিত পরে জানাবো। প্রয়োজনবোধে আবারও শিমুল ভূঁইয়াকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের পরই স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে আকার ইঙ্গিতে নানা জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমদ ওরফে গ্যাস বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনারের আসন কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মিন্টু।

গত ১২ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।

এরপর ২২ মে সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।

খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।

সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেয়া মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ। আরেক অভিযুক্ত নেপালে গ্রেপ্তার সিয়াম হোসেনকেও হেফাজতে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি ওরফে তানভীর ভূঁইয়া তিনজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।